জঙ্গি আবুর লাশ ফেরত নিলো পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ত্রিমোহনী শিবনগর গ্রামে জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন ‘ঈগল হান্ট’-এ নিহত জঙ্গি আবু কালাম ওরফে আবুর লাশ গ্রহন করলেন তার চাচা ইয়াসিন আলী(সম্পর্কীয়)। শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে তিনি আবুর লাশ গ্রহণ করেন। কিন্তু অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই আবুর লাশ ফেরত নিয়ে নেয় পুলিশ।

 

জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার টি এম মোজাহিদুল ইসলাম সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, কেবল মাত্র বাবা-মা, ভাই ছাড়া অন্য কাউকে তার লাশ হস্তান্তর করা যাবেনা। তাই জঙ্গি আবুর লাশ ফেরত নেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যরা নিতে আসলে তবেই লাশ হস্তান্তর করা হবে।

 

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এ  অপারেশন সমাপ্ত ঘোষণা করার পর আজ শুক্রবার দুপুরের দিকে নিহত চারজন জঙ্গির লাশ জঙ্গি আস্তানা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। চারজনের মধ্যে আবু কালাম ওরফে আবু ছাড়া বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি। তাঁদের ডিএনএ নমুনা নেওয়া হয়েছে।

 

এর আগে আজ শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের শিবনগর এলাকার নিজ বাড়িতে জঙ্গি আবুর লাশ না নেওয়ার কথা জানায় তার পরিবার। আবুর খালাতো বোন ইনজিমার বলেন, ভাবির কারণে আমার ভাইয়ের (আবু) আজকে এই পরিণতি। বিয়ের আগে আমার ভাই ভালোই ছিল, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে খারাপ করেছে। আমরা দুই ভাতিজিকে আমাদের কাছে রাখতে চাই। ওদেরকে আমাদের মতো মানুষ করতে চাই।

 

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জঙ্গি আবুর ছোট ভাই সবুরের স্ত্রী রুনা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন পরিবারের কেউ তার লাশ নিবেনা। তিনি বলেন, আমরা জঙ্গি আবুর লাশ চাই না।

 

এদিকে জঙ্গি আবুর স্ত্রী সুমাইয়াকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার বামপায়ের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ ছিল। পরে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক)ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সে কড়া নিরাপত্তায় রামেক হাসপাতালের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

 

অন্যদিকে ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা আবু ও সুমাইয়ার কন্যা শিশু নুরী (৭) কে। তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়া হয়।

 

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজ খুরশেদ হোসেন প্রেস ব্রিফিং করে বলেন, শিবগঞ্জের জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন ‘ইগল হান্ট’ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে শেষ হয়। অভিযানের সময় জঙ্গি আস্তানার ওই বাড়ি থেকে চারটি লাশসহ দুজনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। যে চারটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তারা সকলেই আত্মঘাতি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিহত হয়েছে। আর আবুর অন্ত:সত্তা স্ত্রী ও শিশুকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের চেষ্টা চালানোর কারণেই অপারেশন ‘ঈগল হান্ট সম্পন্ন হতে অনেকটা সময় লেগেছে বলেও দাবি করেন খুরশেদ হোসেন। তবে নিহত অন্য তিনজনের পরিচয় নিশ্চিত করেননি তিনি।

 

শুক্রবার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়ারেছ আলী মিয়া জানান, আবুর লাশ ছাড়া বাকিদের শনাক্ত করা যায়নি। জঙ্গি আস্তানা থেকে একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও একটি সুইসাইড ভেস্ট উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে এখনও উদ্ধারকাজ চলছে।

 

শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল ইসলামের ভাষ্য, ভেতরে আরও বিস্ফোরক থাকতে পারে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলে তিনি জানান।

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার টি এম মোজাহিদুল ইসলামের ভাষ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল কাজ শেষ করে চলে গেছে। ঘটনাস্থলে সিআইডির ক্রাইম সিন দল কাজ করছে।

স/শ