ছয় মাসে নারীসহ ৩৫ জঙ্গি নিহত

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রাজধানীর আশকোনায় এক নারী ও কিশোর জঙ্গি নিহত হওয়াসহ গত ছয় মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ৩৫ জঙ্গি নিহত হয়েছে। এ সময়ে গ্রেফতার করা হয়েছে নব্য জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ ও শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, জঙ্গিদের এখন আর বড় ধরনের হামলা বা নাশকতা চালানোর সামর্থ্য নেই। তবে তাদের নাশকতার পরিকল্পনা থাকে সব সময়।
শুক্রবার রাত ১২টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট দক্ষিণখান থানার পূর্ব আশকোনার ৫০ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানে এক নারী ও এক কিশোর জঙ্গি নিহত হয়েছে। পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে দুই নারী ও তাদের দুই সন্তান। নিহত নারী জঙ্গির আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে আহত হয় তার শিশুকন্যা। ওই শিশুকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

 

অভিযানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিটিটিসি’র প্রধান এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, নিহত নারী জঙ্গি নেতা সুমনের স্ত্রী। একই ঘটনায় নিহত কিশোর আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানায় নিহত তানভীর কাদের সিদ্দিকী ওরফে করিমের যমজ ছেলের একজন। তার অপর ছেলে আগেই পুলিশের হাতে আজিমপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

 

আশকোনার এই জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের আগে র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানায় গত ছয় মাসে ৩৩ জঙ্গি নিহত হয়।

 

এ বছরের ১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়ি হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় অস্ত্রধারীরা। নব্য জেএমবির পাঁচ জনের একটি দল এই হামলায় অংশ নেয়। ওই হামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিনসহ ২২ জিম্মিকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’ চালায় সেনা কমান্ডোর একটি দল। এতে নিহত হয় পাঁচ হামলাকারী। তারা হলো রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সাবিহ মোবাশ্বের, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম পায়েল।

 

গুলশান হামলার মাধ্যমেই নব্য জেএমবি তাদের নাশকতার সামর্থ্যের জানান দেয়। এরপর নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশের বিভিন্ন জেলা, বিভাগ এবং রাজধানীতে ব্লক রেইড চালানো হয়। একের পর এক অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরাশায়ী হয়েছে নব্য জেএমবির সদস্যরা।

 

গত ৮ অক্টোবর গাজীপুরে পৃথক দুই অভিযানে ৯ জঙ্গি ও টাঙ্গাইলে ২ জঙ্গি নিহত হয়। ছয় মাসের মধ্যে মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ নব্য জেএমবির ৩৫ নেতাকর্মী নিহত হয়েছে।

 

গুলশানের ঘটনার সাত দিনের মাথায় ৮ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের দিন পুলিশের ওপর হামলা চালায় নব্য জেএমবি’র একটি গ্রুপ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় আবীর রহমান নামে নব্য জেএমবির এক সদস্য। আহত অবস্থায় গ্রেফতার হয় শফিউল নামে আরেক জঙ্গি। পরে ৫ আগস্ট র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শফিউল ও তার সহযোগী আবু মোকাতিল নিহত হয়।

 

২৬ জুলাই কল্যাণপুরের তাজ মঞ্জিলের জঙ্গি আস্তানায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অভিযানে নিহত হয় ৯ জঙ্গি। যাদের মধ্যে ৮ জনের পরিচয় মিললেও একজনের পরিচয় জানা যায়নি। পরিচয় পাওয়া ৮ জন হচ্ছে দিনাজপুরের আব্দুল্লাহ, টাঙ্গাইলের আবু হাকিম নাইম, ঢাকার ধানমণ্ডির তাজ-উল-হক রাশিক, ঢাকার গুলশানের আকিফুজ্জামান খান, ঢাকার বসুন্ধরার সেজাদ রউফ অর্ক, সাতক্ষীরার মতিউর রহমান, রংপুরের রায়হান কবির ওরফে তারেক এবং নোয়াখালীর জোবায়ের হোসেন।

 

২৭ আগস্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয় নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায়। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের নেতৃত্বে পরিচালিত ওই অভিযানে নিহত হয় নব্য জেএমবির মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম আহম্মেদ চৌধুরী। এ সময় তামিমের সঙ্গে মারা যায় তার আরও দুই সহযোগী। তাদের একজন ধানমণ্ডির তওসিফ হোসেন ও যশোরের ফজলে রাব্বী।

 

গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট অভিযান চালায় মিরপুরের রূপনগরে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয় জাহিদুল ইসলাম নামে অবসরপ্রাপ্ত এক মেজর।

 

গত ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। সেখানে নব্য জেএমবি’র অন্যতম শীর্ষ নেতা ও আশ্রয়দাতা তানভীর কাদেরী নিহত হয়। সেখান থেকে আটক করা হয় তিন নারী জঙ্গি ও তানভীরের ১৪ বছর বয়সী ছেলেকে। সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

 

পুলিশ জানিয়েছে, যারা আজিমপুর জঙ্গি আস্তানা থেকে অভিযানের আগে পালিয়েছিলো, তাদেরই একটা অংশ আশকোনাতে আস্তানা গেঁড়ে ছিলো।

 

সিটিটিসির বম্ব ডিস্পোজাল টিমের প্রধান ছানোয়ার হোসেন বলেছেন, ‘আশকোনা জঙ্গি আস্তানাটি ভাড়া নিয়েছিলো জঙ্গি মুসা। সে এই বাসায় নিয়মিত থাকতো না। সপ্তাহে দুই একদিন এখানে যাতায়াত করতো। বাসার নারী জঙ্গিরা বাসা থেকে বের হতো না।’

 

আশকোনার জঙ্গি আস্তানায় শুক্রবার রাত ১২ টা থেকে সিটিটিসির চলা অভিযান বিকাল ৩টা ৪২ মিনিটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সমাপ্ত ঘোষণা করেন।

 

এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গি আস্তানা থেকে চারজন পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। দুজন নিহত হয়েছে। একজনকে আহত অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভেতরে অন্ধকার। গ্যাস, অসংখ্য গ্রেনেড ও বিস্ফোরক থাকায় আজ আর অভিযান পরিচালিত হবে না। আগামীকাল সকাল থেকে আবার অভিযান চলবে।’

 

এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, ‘অপারেশনের নাম সাধারণত সোয়াত টিমের বিশেষজ্ঞরা দিয়ে থাকেন। এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে রিপল ২৪। রিপল হচ্ছে, ঢেউয়ের মতো প্রসারিত হওয়া। আর এই অভিযানও প্রসারিত হয়েছে।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন