ছোট যমুনা যৌবন হারিয়ে মরা খাল!

কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ:
নওগাঁর বদলগাছীতে ছোট যমুনা নদী তার যৌবন হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদীর বুক জুড়ে বোরো ধান চাষ যেন ভবিষ্যৎতে মারাত্বক প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়ের পূর্বাভাস। ঐতিহ্যবাহী বদলগাছী উপজেলার কোল ঘেঁষে ছোট যমুনা নদী প্রবাহিত হয়েছে।

নদীর কথা ভাবতেই মনে পড়ে শৈশবে ফেলে আসা হারানো দিনের পূরানো কবিতার কথা আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। কবির এই কাব্য কথার সাথে বর্তমান নদীর চিত্র একে বারে ভিন্ন।

মুলত বর্ষার মৌসুমে ১/২ মাস নদীতে জোয়ার থাকে, বিগত কয়েক বছর থেকে ছোট যমুনা নদী তার আপন সত্ত্বা হারিয়ে আগাম শুকিয়ে যাওয়ায় নদীর বুকে সাফল্য জনক ভাবে চলতি মৌসুমে বোরো ধান চাষ করছে স্থানীয় ভূমিহীন শ্রেণীর কৃষকরা। অথচ এই নদীই ছিল এক সময় এই এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম পথ।

নদী ভরা যৌবন জোয়ারে পরিপূর্ণ ছিল। নদীতে এক সময় চলত পাল তোলা নৌকা,দূর থেকে ভেসে আসত মাঝি মাল্লার গান ও সূরের মূর্ছনা’ নাও ছারিয়া দেরে মাঝি পাল উড়াইয়া দে’ গা কোন গান .. .. আমার কাংখের কলসি গিয়াছে ভাসি মাঝিরে তোর নৌকার ঢেউ লাগিয়া রে। নদীর হাঁটু জলে গরুর গাড়ি পার হওয়া, গ্রামের নব বধুর কাঁংখে করে মাটির কলসীতে নদী থেকে জল ভরে নিয়ে আসার সময় নুপুরের ঝনঝনানি শব্দ, তীব্র গরমে গ্রামের ছোট ছেলে মেয়েদের নদী জলে সাঁতার কাটা দৃশ্য, এখন নদীর জোয়ারের সেই কল কল ধ্বনী ঝর ঝর করে নেমে আসা ঝরনার আওয়াজ এখন শুধু যেন স্মৃতি হয়ে দারিয়েছে।

সুজলা সুফলা শস্য শ্যমলা রুপসী নদী মাতৃক এই বাংলাদেশ। নদ নদী দেশের প্রাণ এখন সেই নদীই যেন নিঃসপ্রাণ,মরা খাল।জলবায়ুর পরিবর্তন আর প্রাকৃতিক বিরুপ প্রভাবে নদীকে নিয়ে যত ছন্দ কবিতা আর গান সব কিছুতেই যেন কলম আজ থমকে দারিয়েছে।মানুষের পেম ভলবাসার নিড়ির ছায়া তলে হৃদয়ের মাঝখানে যখন নানান স্বপ্ন আঁকে,স্বপ্ন জাগে কল্পনা আর স্মৃতির মহাবনে ভেসে বেড়াতে।তখন সুখ দূঃখ আবেগ অনুভুতি যেন হৃদয়কে নানান ভাবে দোলা দেয়।

আবেগময় হৃদয়ে স্বপ্ন কথা শুকনো নদীর সঙ্গে তুলনা করেন কবি।কবি সাহিত্য কিংবা কবিতার ছন্দ কথা নিয়ে গিটারের ঝংকারে শিল্পীর গানের সুরে সুরে মানুষে অবুঝ মনকে ব্যকূল করে তোলে এমন একটি গান আমার একটি নদী ছিল জানত না কেউ, নদীর জল ছিল না কূল ছিল না ছিল শুধূ ঢেউ .. .. ।

বদলগাছির উপর দিয়ে প্রবাহিত সেই খর¯্রােতা ছোট যমুনা নদী শুধু বর্ষাকালে কয়েক দিনের জন্য ফুটে ওঠে নদীর চিত্র। এখন নদীর তলায় চাষাবাদ হচ্ছে ধান।ছোট যমুনার বর্তমান গতি পথ কূল কিনারা দেখে উপজেলার সচেতন মহলের ধারনা আগামী ২০-৩০ বছর পর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে কবির কাব্য কথা কিংবা শিল্পীর গানের কথার মতই হয়ত বা মনে করবে এই খানে এক নদী ছিল।

বদলগাছির কাদিবাড়ি ঘাটে প্রবীন সাধু মাঝি বলেন,নদীর গতি পথ নদীর প্রাণ সেই গতি পথ যদি হয় রুদ্ধ আর ভরাট তাহলে নদীতে থাকবে না আর জল,চলবে না নৌকা, গাইবে না মাঝি গান নদী যেন নিঃস প্রাণ।তাই আমাদের এই ছোট যমুনা কে বাঁচাতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে সেই সাথে সরকারী ভাবে নদী খননের মধ্য দিয়ে আবারো ফিরিয়ে আনতে হবে নদীর সেই ভরা যৌবন।

স/আ