‘ছেলে জঙ্গি ছিল জানতাম না, বাবা হিসেবে লাশ নিতে এসেছি’

নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘ছেলে জঙ্গি ছিল জানতাম না। তবে আমি একজন বাবা, তাই বাবা হিসিবেই আমার সন্তানের লাশটি নিতে এসেছি শুধু। কিন্তু সে দেশবিরোধী যে কাজ করেছে-তাতে লাশটি নিতে আশাও আমার ঠিক হয়নি। কিন্তু বাবা তো, তাই মন মানেনি ছেলের লাশ নিতে ছুটে এসেছি।’ কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত নজরুল ওরফে বাইক হাসান ওরফে পারভেজের বাবা বাবা আবব্দুল্লাহ মিয়া।

গতকাল বুধবার বিকেলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ মর্গের সামনে ছেলের লাশ হস্তান্তরের সময় তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ভাই ও নিহত হাসানের চাচা আব্দুল লফিত।

  • আবব্দুল্লাহ মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে প্রায় দেড় বছর ধরে নিখোঁজ ছিল। বিষয়টি গ্রামের সকলেই জানে। কিন্তু ছেলে ঢাকায় কাজ করছে বলে এ নিয়ে থানায় কোনো জিডি বা মামলা করেননি। এখন শুনছি সে জঙ্গি ছিল। দেশবিরোধীকাজে লিপ্ত ছিল। এটা শুনে খুব খারাপ লাগছে।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আবব্দুল্লাহ মিয়া আরো বলেন, ‘ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে যত না কষ্ট পেয়েছি, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি সে জঙ্গি হিসেবে দেশবিরোধীকাজে জড়িত ছিল বলে জানতে পেরে। এই লজ্জা আর কষ্টটটা বলে বুঝানো যাবে না।’
হাসানের চাচা আব্দুল লতিফও দাবি করেন, তাঁর ভাতিজা দেড় বছর ধরে নিখোঁজ ছিল। এরই মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ  (চৌকিদার) গিয়ে তাঁদের বাড়িতে খবর দেয়ে হাসানের লাশ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। তার লাশ নিতে হলে দ্রুত দেবিগঞ্জ থানায় যোগাযোগ করতে হবে।

ওই খবর পাওয়ার পরে হাসানের পরিবারের লোকজন দেবিগঞ্জ থানায় যান। পরে হাসানের বাবা ও চাচাকে নিয়ে দেবিগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল রাজশাহীতে রওনা হয়। তারা বুধবার দুপুরে রাজশাহীতে এসে পৌঁছে। এরপর হাসানের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বিকেল ছয়টার দিকে গ্রামের বাড়ি দেবিগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেয় পুলিশ।

  • হাসানের চাচা আব্দুল লতিফ আরো জানান, হাসান প্রায় সাত বছর আগে বিয়ে করেন। বিয়ের আগ থেকেই তিনি ব্যবসা করতেন এবং ভাল ব্যবসায়ী ছিলেন। দেবিগঞ্জ সদর বাজারে হাসানের বড় মুদি দোকানও ছিল। ব্যবসায় জড়ানোর আগে হাসান মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু ব্যবসা ফেলে তিনি প্রায় দেড় বছর আগে বাড়ি ছেড়ে সন্তান-সন্ততি ফেলে পালিয়ে যান। এর পর থেকে পরিবারের সঙ্গে হাসানের আর কোনো যোগাযোগ ছিল না।

স্বামী না থাকায় স্ত্রী ইসমত আরা তাঁর দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে নিয়ে বাবার বাড়ি নিলফামারিতে গিয়ে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে ইসমত আরা সেখানেই অবস্থান করছেন। হাসানের দুই সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ের বয়স প্রায় ৫ বছর এবং ছোট মেয়ের বয়স প্রায় দুই বছর।
এদিকে রাজশাহী নগরীর মতিহার থানার ওসি (তদন্ত) অসোক কুমার চোহান জানান, বন্দুকযুদ্ধে নিহত হাসানের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে তার বাবা-চাচার কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে পুলিশ পাহারায় তার লাশ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
প্রসঙ্গত, সোমবার গভীর রাতে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে বন্দুযুদ্ধে নিহত হন জেএমবি সদস্য নজরুল ওরফে বাইক হাসান ওরফে পারভেজ। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাসহ অন্তত ১১টি হত্যা মামলায় সরাসরি জড়িত বলে দাবি করে পুলিশ।
তাকে ধরতে গত ২৯ জন পুলিশ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পত্রিকায় বিজ্ঞানও দেয়। এর মাত্র দুই দিন পরেই হাসান বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

স/আর