ছেলের সঙ্গে ৫১ বছর বয়সে এসএসসি পাস করেছেন বাঘার সফর মন্ডল

বাঘা প্রতিনিধি:

রাজশাহীর বাঘায় ৫১ বছর বয়সে ছোট ছেলের সাথে এসএসসি পাস করে বাবা সফের উদ্দিন মন্ডলের স্বপ্নপূরণ হয়েছে। চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে ছেলের চেয়ে বাবা ভাল ফলাফল করেছেন। সফের উদ্দিন মন্ডলের বাড়ি উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামে।

জানা যায়, সফের উদ্দিন মন্ডল ৩৪ বছর আগে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছিলেন। ওই সময় পরীক্ষার আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে গ্রামে মারামারির ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় মামলা হয়। মামলা মেটাতে প্রতিপক্ষের পরিবারের মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরীক্ষা আর দেওয়া হয়নি। বুকের ভেতরে সেই আক্ষেপ ছিল। এবার তিনি সুযোগ পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তবে একই সঙ্গে তার ছোট ছেলেও পরীক্ষা দিয়েছিল। বাবা-ছেলে দুইজন সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন। অবশ্য পরীক্ষায় ছোট ছেলে আবুল কালামের চেয়ে বাবা ভাল ফলাফল করেছেন।

বাবা ও ছেলে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। বাবা সফের উদ্দিন মন্ডল লালপুর উপজেলার মনিহারপুর-রামকৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখা থেকে এবং ছেলে বিজ্ঞান বিভাগে বাঘা উপজেলার খানপুর জেপি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় বসেছিলেন। বাবার প্রাপ্ত জিপিএ ৪ দশমিক ৬১ এবং ছেলের প্রাপ্ত জিপিএ ৪ দশমিক ৬।

সফের উদ্দিন মন্ডল একজন কৃষক। তার তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে হাজেরা খাতুন ও বড় ছেলে আব্দুস সালাম এইচএসসি পাস করেছেন। এরমধ্যে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলে পড়াশোনা করছে।

এ বিষয়ে মনিহারপুর-রামকৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, শিক্ষকতা জীবনে সফের উদ্দিনের মতো ছাত্র কোনদিন পায়নি। ৫১ বছর বয়সে তিনি এসএসসি পাস করলেন। তার মনের মধ্যে পড়াশোনা করার প্রবল ইচ্ছা ছিল। পারিবারিক সমস্যার কারণে এতদিন সেটি হয়নি। এবার তিনি সফল হয়েছেন। সফের উদ্দিন মন্ডল স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে আধাপাকা বাড়িতে বসবাস করেন।

এ বিষয়ে সফের উদ্দিন বলেন, ১৯৮৮ সালে জোতরাঘব উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছিলাম। পরীক্ষার আগে গড়গড়ি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে মারামারি হয়। সেই মামলায় আসামি করা হয়। পালিয়ে বেড়ানোর কারণে পরীক্ষায় বসতে পারিনি। এই মামলা নিষ্পত্তির জন্য এলাকাবাসী প্রতিপক্ষের পরিবারের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেন। বিয়ে করে মামলা নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু পড়াশোনা থেমে যায়। সংসার শুরু করি। পরীক্ষা আর দেওয়ার সুযোগ হয়নি। এরমধ্যে তিন ছেলে-মেয়ে রয়েছে। তারা পড়াশোনা করছে। সচ্ছলতার সংসারে লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাই পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি।

পড়াশোনা করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইচ্ছা রয়েছে। সংসার করে পড়াশোনা করা কঠিন। তবে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে।

জি/আর