ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন তল্লা মসজিদের ইমাম

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার তল্লার সর্দার পাড়া বড় মসজিদ বায়তুস সালাহে এয়ারকন্ডিশন বিষ্ফোরণে নাঙ্গলকোটের নিহত মসজিদের মুয়াজ্জিন কাম ওয়াক্তিয়া নামাজের ইমাম হাফেজ মাওলানা দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া (৪৭) গত শুক্রবার এশার নামাজের পূর্বে তার স্ত্রী ফাহমিদা আক্তারকে ফোন করে জানান, আমার এখানে ভালো লাগছে না। ২/১দিনের মধ্যে বড় ছেলে অসুস্থ জোনায়েদ হোসেনকে (১৭) নিয়ে চাকুরি ছেড়ে একেবারে বাড়ি চলে আসবো। কিন্তু মুয়াজ্জিন কাম ইমাম হাফেজ মাওলানা দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া ও তাঁর পুত্র বাড়ি ফিরলেন ঠিকই, তবে লাশ হয়ে। নিহত হাফেজ মাওলানা দেলোয়ার হোসেন নাঙ্গলকোটের ঢালুয়া ইউনিয়নের বদরপুর মধ্যপাড়ার মৃত হাফেজ মাওলানা শফিকুর রহমানের ছেলে। পিতা-পুত্রের মৃত্যুতে গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম বইছে।

জানা যায়, হাফেজ দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়ার বড় ছেলে জোনায়েদ হোসেন (১৭) নিউ খানপুর হাসপাতাল রোড কাওমি মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণীতে এবং ২য় ছেলে হাফেজ জাকারিয়াকে (১৩) একই এলাকার জামেয়া হাজী সাইদুদ্দিন হাফেজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। দেলোয়ার হোসেন দুই ছেলেকে নিয়ে ওই এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসছিলেন। নিহত হাফেজ দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া কালির বাজার আমলাপাড়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা থেকে লেখাপড়া শেষ করে বাইতুস সালাহ মসজিদে বিগত প্রায় ২৫ বছর থেকে ইমামতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাফেজ দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়ার পিতা মৃত মৌলভী শফিকুর রহমান ভূঁইয়াও একই এলাকার তল্লা বড় মসজিদে দীর্ঘ ৪০ বছর মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করেন। হাফেজ মৌলভী শফিকুর রহমান গত ৭/৮ বছর পূর্বে মারা যান।  বাবার কর্মস্থল সূত্রে ছেলে হাফেজ মাওলানা দেলোয়ার হোসেনও গত ২৫ বছর থেকে তল্লার বড় মসজিদ বায়তুস সালাহে ইমাম কাম মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার তিন মেয়ে  সুমাইয়া আক্তার (১৮), সুরাইয়া আক্তার (৮) ও ছোট মেয়ে ফাইজা আক্তারকে (৩) নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। দেলোয়ার হোসেনের গ্রামের বাড়িতে ভিটে-মাটি ছাড়া কিছুই নেই।

দেলোয়ার হোসেনের শ্যালক জোবায়ের হোসেন শনিবার জানান, নিহত দেলোয়ার হোসেন ও তার ছেলে জোনায়েদ হোসেন এর লাশ ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। লাশ গ্রহণের পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তল্লা জামে মসজিদ এলাকায় প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার সন্ধ্যায় নাগাদ নাঙ্গলকোটের ঢালুয়ার বদরপুরে দ্বিতীয় নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।

ঢালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুল হাছান ভূঁইয়া বাছির জানান, হাফেজ দেলোয়ার হোসেন ও তার ছেলে জোনায়েদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাবো। এ ছাড়াও তিনি অসহায় পরিবারটিকে সহায়তা করার জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার লামইয়া সাইফুল বলেন, দেলোয়ার হোসেনের পরিবারের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা এবং আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।

 

সূত্রঃ সময়