ছাত্রী উত্ত্যক্ত চাঁদাবাজিই ছিল রাজশাহী আইএইচটি’র ছাত্রলীগ নেতাদের কাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কখনো সাধারণ ছাত্রীদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করা আবার কখনো বিভিন্নভাবে হয়রানির কথা বলে চাঁদাবাজি করাই ছিলো রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রধান কাজ। এই সংগঠনটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে একেবারে নিচের সারির কর্মীরাও জড়িয়ে পড়ে নানা অপকর্মে।

এমনকি শিক্ষকদেরও এরা নানাভাবে হয়রানি করেছে বিভিন্ন সময়। পরীক্ষার সময় নকল করা এবং ভাইভা পরীক্ষায় প্রভাব বিস্তার করাও ছিল এদের অপকর্মের তালিকায়। ফলে তাদের দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষকরাও। বুধবার সকালে ধাওয়া করে ছাত্রীদের পেটানোর পরে সরেজমিন সংবাদ সংগ্রহে গেলে ভুক্তভোগীরা এমনই অভিযোগ করেছেন সিল্কসিটি নিউজের কাছে।

তবে শেষ রক্ষা হয়নি নানা অপকর্মের হোতা ছাত্রলীগ আইএইচটি শাখার চার নেতার। বুধবারের ওই অপকর্মের কারণে ওইদিনই তাদের প্রথমে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগ এবং পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে তাদের বহিস্কার করা হয়েছে।

বহিস্কৃত চার নেতা হলেন, রাজশাহী আইএইচটি ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন তুহিন, সহসভাপতি মিজানুর রহমান মিজান ও ফায়সাল হোসেন।

এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অভিযোগ চারজনকে বহিস্কার করা হলেও এখনো তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গরা রয়েছে দাপটে। এমনকি তাদের ছত্রছায়ায় বহিরাগতদের রয়েছে দাপটে। ছাত্রলীগের এই গ্রুপটির কারণে এখনো আতঙ্কিত আইএইচটির সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। চিহ্নিত এই গ্রুপটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন অনেকে।

আইএইচটির শিক্ষার্থী রেজওয়ানা সুলতানা নিসা, নাবিলা, জুঁই, মীম, রুপাসহ আরও অনেক ছাত্রী সিল্কসিটি নিউজকে অভিযোগ করে জানান, ছাত্রলীগের এই গ্রুপটি দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছিল। তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করলে তারা সেই চাত্রীকে গণধর্ষণের হুমকি দিত। এমনকি বাইরে বের হলে লাঞ্চিত করারও হুমকি দিত। এসব নিয়ে অধ্যক্ষের নিকট অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। উল্টো ওই ছাত্রলীগ নেতারাই কখনো কখনো সাধারণ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তাদের নিকট থেকে চাঁদা আদায় করত।

তারা শিক্ষকদেরও নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাত। শিক্ষকদের সঙ্গে কোনো ছাত্রীর ভালো সম্পর্ক থাকলে সেই শিক্ষকের স্ত্রী হিসেবে ওই ছাত্রীকে ক্যাম্পাসে ঘোষণা দিত। এতে করে ওই ছাত্রী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ত। এভাবেই তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানি করত।

আইএইচটির ছাত্রীরা অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের নেতারা সাধারণ ছাত্রীদের দেখলেই নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত। তারা ছাত্রী হোস্টেলের ভিতরেও ঢুকে পড়ত। গাছের ফল চুরি করে খেত।

আইএইচটির কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ছাত্রলীগ সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন তুহিন, সহসভাপতি মিজানুর রহমান মিজান ও ফায়সাল হোসেন ছাড়াও কর্মী সাইদ হাসান, মাহমুদ হাসান, জাকির হোসেন, কাইউম, নাহিদসহ আরও কেয়েজন নেতাকর্মীর দাপটে অতিষ্ঠ থাকতে হত শিক্ষকদের। তারা পরীক্ষার হলে নকল করত প্রকাশ্যে। বাধা দিতে গেলেই প্রভাব বিস্তার করত। এমনকি ভাইভাতেও প্রভাব বিস্তার করত। এভাবে শিক্ষকদের হয়রানি করত। এদের সঙ্গে বহিরাগত কয়েকজন এসে ক্যাম্পাসে আড্ডা দেয় আর প্রভাব বিস্তার করে।

তবে এসব নিয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ আইএইচটির বহিস্কৃত সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন তুহিন দুজনেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন গতকাল।

 

প্রসঙ্গত, গতকাল বুধবার (০৬ মে) সকালে রাজশাহী আইএইচটিতে ছাত্রীদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে ৬ ছাত্রী আহত হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অনির্দিষ্ট কালের জন্য আইএইচটি হোস্টেল বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। গণধর্ষণের হুমকিদাদাতা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিচার এবং নিরাপত্তা চেয়ে ফেরার পথে হামলার শিকার হোন ছাত্রীরা।

স/আর