রাবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বের দৌড়ে হলের বিতর্কিত নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বিলুপ্তির পর থেকে  নতুন কমিটিতে কারা  নেতৃত্ব দেবে,  এনিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের একাংশ মনে করছেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের পাশাপাশি আবাসিক হলের নেতাদের একজন আসতে পারেন। ইতোমধ্যে আবাসিক নেতাদের অনেককে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।

আলোচনায় এগিয়ে থাকা এসব নেতারা হলেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ ও সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সভাপতি কাব্বিরুজ্জামান রুহুল ও শহীদ হবিবুর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু।

তবে এই চার নেতার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী হলের সাধারণ সম্পাদক নাঈমের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীকে নির্যাতন ও শিবির ট্যাগ দিয়ে হত্যার হুমকি, সিট বাণিজ্য, শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক সিট থেকে বের করে দিয়ে সিট দখলের অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

অপরদিকে, শহীদ হবিবুর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু আবাসিক হল পরিবর্তন করে পদে আসছেন। তিনি শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার রাজনীতি করতেন। অপুর বিরুদ্ধে সিট বাণিজ্য, শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়কে হল কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলামসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে।

এসময় ভুক্তভোগীকে শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নাঈম ইসলামের বিচার চেয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। পরবর্তীতে ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোচিত হলে রাবির সোহরাওয়ার্দী হল প্রশাসন তদন্তে নামেন।

তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয় এবং তদন্ত কমিটি হল শাখার সাধারণ সম্পাদক নাঈমসহ আরও একজনের ছাত্রত্ব বাতিলসহ ৪ দফা সুপারিশ করে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ ঘটনায় রাবি শাখা ছাত্রলীগ থেকেও নাঈম ইসলামকে শোকজ করা হয়।

এছাড়াও গত ০৩ জুন মাসে ছাত্রলীগের এক দলীয় কর্মসূচিতে না যাওয়ায় হলের দুই শিক্ষার্থীর বিছানাপত্র নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে হলের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জোনায়েদ আহমদ ও একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন। এছাড়াও এই নেতার বিরুদ্ধে সিট বাণিজ্যের একাধিক অভিযোগ রয়েছে আবাসিক শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু হলের নেতৃত্বে আসতে পরিবর্তন করেছেন তার মূল আবাসিক হল ও অবস্থান করেছেন একাধিক হলে। তবে তিনি বর্তমানে হবিবুর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক হলেও মাদারবখশ হলে তার প্রভাব চলে। তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে হলে তোলা, সিট তালিকাভুক্ত করে দলবল নিয়ে দখল করার অভিযোগ রয়েছে আবাসিক শিক্ষার্থী ও ভুক্তভোগীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা  গেছে, গত বছরের হল সম্মেলনের আগে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে শাখা ছাত্রলীগের ৪ নেতাকর্মী হল পরিবর্তন করেন। তারা হলেন, হবিবুর হলের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু, শেখ কামাল বিন হারুন, বঙ্গবন্ধু হলের সভাপতি কব্বিরুজ্জামান রুহুল ও সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস।

এসব নেতাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অপুকে বঙ্গবন্ধু হল থেকে শহীদ হবিবুর রহমান হল, কামালকে শাহ মখদুম হল থেকে সৈয়দ আমীর আলী হল, রুহুলকে শহীদ শামসুজ্জোহা হল থেকে বঙ্গবন্ধু হল এবং জেমসকে শহীদ হবিবুর রহমান হল থেকে বঙ্গবন্ধু হলে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু এভাবে হল পরিবর্তনের কোনো নিয়ম শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে দেওয়া হয় না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদারবখশ হল ও হবিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ভু্ক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের এপ্রিল মাসে মাদারবখশ হলের এক শিক্ষার্থীকে সিট থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে হল ছাত্রলীগের সভাপতি প্রিন্সের অনুসারিদের ওপর। তবে এ ঘটনায় অন্য হল থেকে এসে ভুক্তভোগীকে ডেকে নেন হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু এবং তার কাছে টাকা দাবি করেন। পাশাপাশি বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন।

গত বছরের ২৭ মে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের ২৩৪ নম্বর কক্ষে আবাসিক শিক্ষার্থী তুষার চন্দ্র রায়কে কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে নাসির হোসেন নামের এক অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে সিটে তুলে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে অপুর বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একাংশ জানান, যেসব হল শাখা  ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে হলের সিট দখল, সিট বাণিজ্য, শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। তারা যেনো রাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে না  আসতে পারে। এমনকি তাদেরকে কোনো ধরনের পদ দেওয়া উচিত নয় বলে মত তাদের।

তাদের দাবি, এসব নেতারা দায়িত্বে আসলে সিট বাণিজ্য, সিট দখল আরও চরম পর্যায়ে চলে যাবে। তাই সৎ, মেধাবী, ক্লিন ইমেজ, শিক্ষার্থীবান্ধব নেতৃত্ব প্রয়োজন।