ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সদ্য ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদপ্রাপ্ত ১৭ জনের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। অভিযোগের সত্যতা যাচাই বাছাই করতে ২৪ ঘন্টা সময় বেধে দিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

বুধবার রাত ১২টায় রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন।

ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, আমাদের গঠনন্ত্রের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি সেটা মানার। কিন্তু তারপরও যদি কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে যেমন বিবাহিত, অছাত্র, মুক্তিযুদ্ধেও চেতনা বিরোধীসহ গঠনতন্ত্র বিরোধী কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে তাকে আমরা অব্যাহতি দেবো। তারা কেউ আমাদের কমিটিতে থাকতে পারবে না।

তিনি বলেন, কমিটি ঘোষনার পরে আমরা পত্র-পত্রিকা ও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যাাদের নামে অভিযোগ পেয়েছি তাদের ২৪ ঘণ্টা সময় বেধে দিচ্ছি। এর মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেতাতীতভাবে প্রমাণ হবে তাদের অব্যাহতি দেয়া হবে। তাদের জায়গায় যারা ক্লিন ইমেজের রয়েছেন। যারা বঞ্চিত হয়েছে তাদের স্থান দেয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ পাওয়া নামগুলো ঘোষণা করেন। এর মধ্যে রয়েছে- সহ সভাপতি তানজীব ভূইয়া তানভীর (বয়স উত্তীর্ণের অভিযোগ), সুরঞ্জন ঘোষ (বয়স উত্তীর্ণের অভিযোগ), আরেফীন সিদ্দিকী সুজন (মাদকসংশ্লিষ্ট অভিযোগ), আতিক রহমান খান, (মাদকসংশ্লিষ্ট অভিযোগ), বরকত হোসেন হাওলাদার (শিক্ষকের সঙ্গে অসৎ আচরণের অভিযোগ), শাহরিয়ার কবির বিদ্যুত (সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ), মাহমুদুল হাসান তুষার ( মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী আদর্শ ধারণের অভিযোগ), মাহমুদুল হাসান (সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ), আমিনুল ইসলাম বুলবুল (মামলা রয়েছে), আহসান হাবীব (চাকরি করার অভিযোগ), সাদিক খান (বিবাহের অভিযোগ), তৌফিকুল হাসান সাগর (তার পরিবারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার অভিযোগ), সোহানী হাসান তিথি (বিবাহের অভিযোগ), রিশি চৌধুরী (বিবাহের অভিযোগ), আফরীন লাবনী (বিবাহের অভিযোগ), মুনমুন নাহার বৈশাখি (বিবাহের অভিযোগ)।

গোলাম রাব্বানী বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ১৭ জনের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগের এই নামগুলো পেয়েছি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা কেউ যদি প্রমাণ করতে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সত্য নয় তাহলে যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। না পারলে তাদের অব্যাহতি দেয়া হবে। তাদের পদগুলো শুন্য ঘোষণা করে যোগ্যদের সেখানে স্থান দেয়া হবে।

ছাত্রলীগের শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজ যারা করেছে তাদের বহিষ্কার করা হবে জানিয়ে সভাপতি শোভন বলেন, ছাত্রলীগের কমিটি হওয়ার পর একটি মহল বিভিন্ন মাধ্যমের যে আক্রমণাত্মক ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তা সংগঠনের শৃঙ্খলাপরিপন্থী। ক্ষোভ প্রকাশের জন্য দলীয় ফোরাম রয়েছে। যারা শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদেরকেও খুঁজে বের করে বহিস্কার করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

প্রসঙ্গত, সোমবার ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ। এরপর থেকেই ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিক্রিয়া জানান। কমিটি ঘোষণার পর অযোগ্য, অছাত্র, বিবাহিত, বহিষ্কৃত, অগ্নিসন্ত্রাসে যুক্ত, বিভিন্ন মামলার আসামিদের ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদায়নের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে পদবঞ্চিত ছাত্রলীগের একাংশ।

সন্ধ্যায় ওই বিক্ষোভে দুই দফা হামলা ঘটনায় ডাকসুর তিন নেতা ও নারীসহ অন্তত আটজন আহত হয়েছেন।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ না পাওয়া নেতাকর্মীরা ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে এ আলটিমেটাম দেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের গঠিত নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে দিয়ে অধিক তদন্তের মাধ্যমে অর্থবহ কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়।

এর পর বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে ডেকে ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া বিতর্কিত নেতাদের বাদ দেয়ার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সূত্র জানায়, এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, উপ-দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া এবং দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এসএম কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ তালিকায় থাকা ১২-১৫ বিতর্কিত নেতার নাম কালি দিয়ে চিহ্নিত করে তাদের বাদ দেয়ার নির্দেশ দেন। তালিকায় যদি আরও কোনো বিতর্কিত নেতা থাকেন খোঁজখবর নিয়ে তাদেরও বাদ দিতে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।