ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটিতে বিতর্কিত নেত্রী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) কবি সুফিয়া কামাল হলে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের গঠিত তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত এক নেত্রী। বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগ সভাপতি সাইরুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এর আগে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জড়িত থাকার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যাল শাখার দুইজন করে মোট ৪ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি গঠন করা হয়। এরা হলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নুসরাত জাহান নুপুর ও নিশীতা ইকবাল নদী, ঢাবি শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স।

মঙ্গলবার রাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায় হল শাখা ছাত্রলীগ। এ সময় হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশরাত জাহান এশার বিরুদ্ধে হলে শিক্ষার্থীর রগ কেটে দেয়ার অভিযোগ করেন হলের সাধারণ ছাত্রীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয় এশাকে। এ ঘটনা তদন্তে বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগ ৪ সদস্য বিশিষ্ট এ তদন্ত কমিটি গঠন করে।

এদিকে, ছাত্রলীগের এ তদন্ত কমিটিতে রয়েছে মাদক ব্যবসায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নিশীতা ইকবাল নদী। গত ৬ ফেব্রুয়ারি মাদক ব্যবসা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে উঠে আসে এই নেত্রীর নাম।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক ব্যবসায়ীদের ৩৮ জনের একটি তালিকার উল্লেখ দিয়ে বলা হয় এর মধ্যে রয়েছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ২০ জন নেতাকর্মীর নাম। এর মধ্যে রয়েছে ছাত্রলীগ নেত্রী নদী।
এর আগে ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের সভাপতি থাকাকালে নিশীতা ইকবাল নদীর বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসা এবং অধঃস্তন নেত্রীকে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার অভিযোগ আসে। ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ সালে অপর একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন আনুযায়ী ওই হলের ছাত্রলীগের তৎকালীন দপ্তর সম্পাদক ইসরাত জাহান সোনালী নদীর বিরুদ্ধে ভিসি ও প্রক্টর বরাবর অভিযোগ করেন। অভিযোগে দীর্ঘদিন থেকেই ইয়াবা ব্যবসা এবং ওই শিক্ষার্থীকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করাতে চাপ প্রয়োগের কথা উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনকে একাধিকবার ফোন করেও তাদের মন্তব্য জানা যায়নি।

গত মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে ঢাবির সুফিয়া কামাল হলে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোরশেদা আক্তারকে হল ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশা ডেকে নিয়ে ব্লেড দিয়ে পায়ের রগ কাটার অভিযোগ করেন হলের ছাত্রীরা। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে হলের ছাত্রীরা ঐক্যবদ্ধভাবে এশাকে প্রতিহত করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাকে জুতার মালা পড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন হল থেকে ছাত্ররা ছুটে এসে ভোর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা এশাকে বহিষ্কার ও রাজনীতি মুক্ত হল ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ করে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। সাথে সাথে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী তাকে হল এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা জানান। এর কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাকে ছাত্রলীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয়।
ঘটনাটির তিনদিন পর অনাকাঙ্ক্ষিত এই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ছাত্রলীগ।

ওই হলের ছাত্রীদের অভিযোগ, হল সভাপতি এশা আগেও সাধারণ ছাত্রীদের নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে মারধর করতেন। তবে এতদিন ভয়ে কেউ মুখ খুলেনি।