ছাত্রলীগের কয়েক নেতার ঠাঁই, বিতর্কিতরা বাদ

সম্মেলনের প্রায় এক বছর পর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে ছাত্রলীগের সাবেক বেশ কয়েকজন যুক্ত হয়েছেন। বাদ পড়েছেন বিগত কমিটির বিতর্কিত অনেকে। তবে সংগঠনটির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে বিগত কমিটির নেতারাই প্রাধান্য পেয়েছেন। বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যও প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছেন। আর বরাবরের মতোই এবারও কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারীদের রাখা হয়নি বললেই চলে।

গত বছর যুবলীগের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠায় সংগঠনটিতে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সংগঠনের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে তিনি কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন। তবে সে সময় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন সম্ভব হয়নি। গত এক বছরে যাচাই-বাছাই শেষে গতকাল শনিবার ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য কয়েক দিন আগেই আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে জমা দেওয়া হয়।

গতকাল বিকেলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে অনুমোদিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি হস্তান্তর করেন।

সূত্রগুলো জানায়, দীর্ঘদিন যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হলেও এতে বিতর্কিত একাধিক নেতা স্থান পেয়েছেন। আবার বিগত কমিটির পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির একাধিক নেতা বাদ পড়েছেন।

যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছেন বিগত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ ও মঞ্জুর আলম শাহীন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আহমেদ নাছিম পাভেল, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. সাজ্জাদ হায়দার লিটন ও সহসম্পাদক তাজউদ্দিন আহমেদ। আলোচিত সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীও স্থান পেয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে। বিগত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল একই পদে আছেন। মহিলাবিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন অ্যাডভোকেট মুক্তা আক্তার।

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা উপদপ্তর সম্পাদক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন মুন কার্যনির্বাহী সদস্য, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আল আমিন উপ-শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন।

নতুন কমিটিতে যাঁরা : যুবলীগের কমিটিতে ২৭ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে ২২ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচটি পদ ফাঁকা রয়েছে। আগের প্রেসিডিয়ামের প্রায় সবাই বাদ পড়েছেন। নতুন ২২ জনের মধ্যে আগের কমিটির বেশ কয়েকজন সম্পাদক, সহসম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য রয়েছেন। প্রেসিডিয়ামে জায়গা পাওয়া অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ ও মনজুর আলম শাহীন আগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আবু আহমেদ নাসিম পাভেল ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক। শেখ ফজলে ফাহিম ছিলেন গত কমিটির সদস্য। ড. সাজ্জাদ হায়দার চৌধুরী লিটন আগের কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

প্রেসিডিয়ামে জায়গা পাওয়া তাজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন সহসম্পাদক। প্রেসিডিয়ামে অন্যতম চমক ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী। এ ছাড়া সংসদ সদস্যদের মধ্যে আরো আছেন জুয়েল আরেং এমপি, আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী এমপি ও সেলিম আলতাফ জর্জ এমপি। এ ছাড়া শেখ সোহেল উদ্দিন, ডা. খালেদ শওকত আলী, মো. জসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, এন শাহাদাত হোসেন তাসলিম, রফিকুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান পবন, নবী নেওয়াজ, এনামুল হক খান, মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, সুভাস চন্দ্র হালদার, মৃনার কান্তি জোয়ার্দার ও জসিম মাদবর যুবলীগের প্রেসিডিয়ামে জায়গা পেয়েছেন।

কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন পাঁচজন। এর মধ্যে আগের কমিটির সুব্রত পাল নতুন কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন। নতুন চারজন হলেন মতিউর রহমান বাদশা, মো. বদিউল আলম, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম ও মো. রফিকুল আলম জোয়াদার। শেখ ফজলে নাঈম আগের কমিটির সদস্য ছিলেন।

কেন্দ্রীয় কমিটির ৯ সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সবগুলোই নতুন মুখ। এর মধ্যে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগকে রাখা হয়েছে। বাকি সাংগঠনিক সম্পাদকরা হলেন কাজী মো. মাজহারুল ইসলাম, ডা. হেলাল উদ্দিন, মো. জহির উদ্দিন খসরু, মো. সোহেল পারভেজ, আবু মুনির মো. শহিদুল হক রাসেল, মশিউর রহমান চপল, অ্যাডভোকেট মো. শামীম আল সাইফুল সোহাগ ও প্রফেসর ড. মো. রেজাউল কবির।

ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা জয়দেব নন্দীকে দেওয়া হয়েছে প্রচার সম্পাদক পদ। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ হয়েছেন দপ্তর সম্পাদক। এ ছাড়া গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম মিল্টন, অর্থবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহদাত হোসেন, শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার আলী আসিফ খান রাজিব, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কাজী সরোয়ার হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন পাভেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. শামীম খান, তথ্য ও যোগাযোগ (আইটি) বিষয়ক সম্পাদক মো. শামসুল আলম অনিক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মুস্তাফিজ, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. ফরিদ রায়হান, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মীর মো. মহিউদ্দিন, জনশক্তি ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক শাহীন মালুম, ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মো. নিজামউদ্দিন চৌধুরী পারভেজ, পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মো. হারিস মিয়া শেখ সাগর, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. আব্দুল হাই, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মো. আব্দুল মুকিত চৌধুরী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা খলিলুর রহমান সরদার, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুক্তা আক্তার, উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আদিত্য নন্দী, উপদপ্তর সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা, উপগ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ নবীরুজ্জামান বাবু, উপ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক শরীফুল ইসলাম, উপশিক্ষা প্রশিক্ষণ ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক কাজী খালিদ আল মাহমুদ টুকু, উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. এনামুল হোসেন সুমন, উপ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মো. সাহেদ আশফাক আকন্দ তুহিন, উপত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মো. আলতাফ হোসেন, উপবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. রাশেদুল হাসান সুপ্ত, উপতথ্য ও যোগাযোগ (আইটি) বিষয়ক সম্পাদক এন আই আহমেদ সৈকত, উপসাংস্কৃতিক সম্পাদক ফজলে রাব্বী স্বরণ, উপস্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. মাহফুজুর রহমান উজ্জল, উপতথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শেখ মো. মিছির আলী, উপজনশক্তি ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক শামসুল কবির রাহাত, উপক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মো. আব্দুর রহিম, উপপরিবেশবিষয়ক সম্পাদক সামসুল ইসলাম পাটোয়ারী, উপশিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. ফিরোজ আল-আমিন, উপকৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মোল্লা রওশন জামির রানা, উপমুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক মো. গোলাম কিবরিয়া শামীম, উপধর্মবিষয়ক সম্পাদক হরে কৃষ্ণ বৈদ্য ও উপমহিলাবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দা সানজিদা শারমীন।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ