চেক ডিস-অনার মামলার হাইকোর্টের সেই রায় স্থগিত

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

চেক ডিস-অনার মামলায় ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো সংবিধান পরিপন্থী উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট আইনের বিধান অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্ট রায় স্থগিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার আদালত আজ মঙ্গলবার তা স্থগিত করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম।

পরে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চেক ডিস-অনারের মামলায় এনআই অ্যাক্টের ১৩৮ ধারায় আসামিকে গ্রেপ্তার করা অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু এ ধারাটির বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি না করেই হাইকোর্ট এ রায় দিয়েছেন। যে কারণে রায়টি স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। ’

শুনানির পর চেম্বার আদালত আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত রায়টি স্থগিত করেছেন। এ সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলেছেন আদালত।

চেক ডিস-অনার সংক্রান্ত কয়েকটি মামলা নিষ্পত্তি করে গত ২৮ আগস্ট এ রায় দিয়েছিলেন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ে চেক ডিস-অনার মামলায় ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো সংবিধান পরিপন্থী ও তা অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, কোনো ব্যক্তিকে তার ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। আর নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট (এনআই) অ্যাক্ট , ১৯৮১-এর ১৩৮ ধারায় চেক ডিস-অনার মামলায় ব্যক্তিকে কারাগারে বন্দি রাখা তার স্বাধীনতা হরণের শামিল।

এনআই অ্যাক্টের ১৩৮ ধারা সংশোধনের জন্য জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি আদালত ধারাটি সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এসব মামলা নিষ্পত্তিতে একটি নীতিমালাও করে দেন।

সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের চেক ডিস-অনার মামলার উদাহরণ টেনে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এসব দেশে এ মামলায় ব্যক্তিকে জেলে পাঠানোর বিধান নেই। এসব দেশে চেক ডিস-অনার মামলাকে দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

১৯৮১ সালের এ আইনটি (বাংলাদেশ নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট)  ১৯৯৪ সালে দণ্ডবিধিতে সংযোজনের মাধ্যমে আধা-ফৌজদারি হিসেবে পরিণত করা হয়েছে। তা ছাড়া এনআই অ্যাক্টের এ ধারাটি (১৩৮ ধারা) ইন্টারন্যাশনাল কভিনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস চুক্তির ১১ অনুচ্ছেদেরও পরিপন্থী।

আদালত পর্যাবেক্ষণে বলেন, ‘চুক্তি শর্ত পূরণে ব্যর্থতার জন্য কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে বন্দি রাখা যাবে না। চুক্তির শর্ত পূরণে ব্যর্থতার জন্য যদি ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানো হয় তাহলে অচিরেই বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ কারাগারে চলে যাবে। নিশ্চয়ই এমনটা কারো কাম্য নয়। তাই আদালত মনে করেন আইনটির ১৩৮ ধারা দ্রুত সংশোধন করে কারাগারে পাঠানোর বিধান বাতিল করা দরকার। মহান জাতীয় সংসদ দ্রুত সেটি করবে বলে প্রত্যাশা করছি। ’

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ