চীনকে মোকাবেলায় সমুদ্রে নজরদারি করবে কোয়াড

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

প্রভাবশালী আঞ্চলিক জোট কোয়াডের নেতারা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমুদ্রে নজরদারির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের দেশগুলোকে সমুদ্রে ‘বাস্তব সুবিধা’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি চীনকে মোকাবেলা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও এর কোয়াড মিত্রদের এখন পর্যন্ত নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যদিও পরিকল্পনার কোথাও চীনের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি।

কোয়াড বলছে, ইন্দো-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ ফর মেরিটাইম ডোমেইন অ্যাওয়ারনেস (আইপিএমডিএ) শীর্ষক পরিকল্পনাটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় এবং ভারত মহাসাগরে অবৈধ মৎস্য শিকারসহ বেআইনি কার্যকলাপ চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে।

কোয়াড জোট চীনের নাম উল্লেখ না করলেও নতুন এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য এ অঞ্চলের দেশগুলোর একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা নৌযানের অননুমোদিত মাছ ধরার পাশাপাশি দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধপূর্ণ জলসীমায় চীনা মিলিশিয়াদের জাহাজের অনুপ্রবেশের দীর্ঘদিনের অভিযোগের সমাধান করা।

অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের অনানুষ্ঠানিক আঞ্চলিক জোট কোয়াড তাদের নতুন পরিকল্পনার উদ্যোগের বিশদ বিবরণ দেয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ফিন্যানশিয়াল টাইমসকে বলেছেন, কোয়াড ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোকে বিনা মূল্যে সামুদ্রিক অঞ্চলবিষয়ক গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করার জন্য স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

এ সেবার আওতায় সংশ্লিষ্ট সামুদ্রিক অঞ্চলে রেডিও তরঙ্গ ও রাডার সিগন্যালের ওপর নজর রাখা হবে। এমনকি কোনো নৌযান অটোমেটিক ইনফরমেশন সিস্টেম (এআইএস) শীর্ষক বার্তা আদান-প্রদান ব্যবস্থা বন্ধ রাখলেও তার ওপর নজর রাখা সম্ভব হবে এবং সেটির অবস্থান ওই অঞ্চলে বিদ্যমান নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাকি নৌযানগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক কর্মকর্তা গ্রেগ পোলিং কোয়াডের আইপিএমডিএ প্রকল্পকে উচ্চাভিলাষী বলে মনে করছেন। তবে এটা যে ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলো এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের জন্য ‘বড় ধরনের সহায়তা’ হবে, সেটাও উল্লেখ করেন তিনি। গ্রেগ পোলিং বলেন, ‘এই প্রচেষ্টার ফলে অবৈধভাবে মাছ ধরা এবং সমুদ্রে চীনের আধাসামরিক বাহিনীর তৎপরতার ওপর নজরদারির সক্ষমতা বাড়বে এবং এ সংক্রান্ত খরচ ব্যাপকভাবে কমে যাবে। ’

গভীর সমুদ্রে বিচরণকারী নৌবহরগুলোর মধ্যে চীনা নৌবহর বিশ্বে সর্ববৃহৎ বলে বলে জানায় এ বহরে আছে তিন হাজার নৌযান এবং তাদের বড় অঙ্কের ভর্তুকি দেয় চীন সরকার। বিশ্বব্যাপী অবৈধ, অননুমোদিত ও অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণের ওপর নজরদারি করা গ্লোবাল ইলিগ্যাল ফিশিং ইনডেক্সের ভাষ্য মতে, গভীর সমুদ্রে বিচরণকারী ওই চীনা নৌবহর বিশ্বে সবচেয়ে নিকৃষ্ট।

২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে চীনা নৌযানগুলো কমপক্ষে ২৩৭ বার লাইসেন্স ছাড়া মাছ ধরেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অবৈধভাবে মাছ শিকার বা অনধিকার প্রবেশের দায়ে বেশ কয়েবার চীনা নৌযানগুলো ভানুয়াতু, পালাউ, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় আটক হয়। ট্রান্সপন্ডার তথা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা বন্ধ রেখে উত্তর কোরিয়ার সাগরে তাদের স্কুইড শিকার করতে যাওয়ার নজিরও আছে।

সাধারণ মাছ শিকারের পাশাপাশি বিপন্ন ও সুরক্ষিত প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণীও শিকার করে চীনা নৌযানগুলো, এমনটা জানায় এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস ফাউন্ডেশন।

চীন অবশ্য এতসব অভিযোগের কোনোটাই স্বীকার করে না। উল্টো তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক নীতিমালা কঠোরভাবেই মেনে চলে তারা।

সমুদ্রে চীনের তৎপরতা যে কেবল অবৈধ মাছ শিকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তা নয়। তাদের আচরণে আঞ্চলিক উদ্বেগের আরো কারণ আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। অভিযোগ রয়েছে, মাছ ধরার নৌযানগুলোকে চীনের আধাসামরিক বাহিনীর যান হিসেবেও ব্যবহার করা হয় এবং দক্ষিণ চীন সাগরের সম্পদসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোয় চলে তাদের তৎপরতা। দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত অংশগুলোয় চীনের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে ওই সব নৌযানের ভূমিকা আছে।

অথচ কোনো ধরনের আধাসামরিক বাহিনীর অস্তিত্বই অস্বীকার করে চীন। বিতর্কিত সমুদ্র অঞ্চলে চীনের মাছ ধরার নৌকাগুলোর অবস্থান প্রসঙ্গে বেইজিংয়ের ভাষ্য, খারাপ আবহাওয়া ও স্রেফ আশ্রয় নিতে বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করে ওই সব মাছ ধরা নৌযান।

চীন সব অভিযোগ অস্বীকার করে কোয়াডের সাম্প্রতিক পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেছে, ছোট ছোট জোট গঠন করা এবং বিরোধ উসকে দেওয়া শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও সহযোগিতামূলক সামুদ্রিক শৃঙ্খলার জন্য বাস্তব হুমকি।

 

সুত্রঃ কালের কন্ঠ