চালকের দোষে ঝরল প্রাণ মামলা ৩০৪(খ) ধারায়

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:  

ঈদযাত্রায় নাটোর, ফেনী ও নরসিংদীতে তিন সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বেপরোয়া গতি, চালকের খামখেয়ালি ও সংকেত অমান্য করা। এর মধ্যে ফেনীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পুলিশের সংকেত অমান্য করে সিএনজি অটোরিকশা দ্রুত পালাতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটে।

১৪ আগস্টের এ ঘটনায় মারা যান ৬ জন, আহত হন আরও দু’জন। নরসিংদীর বেলাবোতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে লাইসেন্সবিহীন লেগুনাচালক রাস্তার ডানে চলে গেলে বিপরীত দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।

২০ আগস্টের এ দুর্ঘটনায় মারা যান ১১ জন ও আহত হন ৬ জন। আর নাটোরে ২৫ আগস্ট রেজিস্ট্রেশনবিহীন লেগুনার সঙ্গে বেপরোয়া গতির বাসের সংঘর্ষে মারা গেছেন ১৪ জন। বিআরটিএর পৃথক তিন প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার এসব কারণ উঠে এসেছে। এসব প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চালকের কারণে এ তিন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৩১ নিরীহ মানুষের।

আহত হন ২২ জন। অথচ এসব ঘটনায় পুলিশ দণ্ডবিধির ৩০৪(খ) ধারা উল্লেখ করে মামলা করেছে, যা জামিনযোগ্য। এ ধারায় সর্বোচ্চ সাজা ৩ বছরের কারাদণ্ড। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা জানান, পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা সব সময় দাবি করেন যে কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০৪(খ) ধারায় মামলা হোক। এতে চালকরা সহজেই পার পেয়ে যান। এ কারণে দুর্ঘটনা কমছে না।

এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের (নিসচা) চেয়ারম্যান চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আইনে কঠোর সাজার বিধান না থাকায় সড়কে চালকের বেপরোয়া চলাচলের মনোভাব কমছে না।

তিনি বলেন, ৩০৪(খ) ধারায় এক সময়ে ১০ বছর সাজা ও জামিন অযোগ্য বিধান ছিল। পরে ওই ধারায় সাজা বাড়াতে গিয়ে মালিক ও শ্রমিকদের চাপের মুখে সাজা কমিয়ে ৩ বছর ও এ ধারাটি জামিনযোগ্য করা হয়েছে। এ কারণে চালকরা সাজাকে ভয় পাচ্ছেন না। পুলিশেরও এ ধারার বাইরে মামলা করার সুযোগ থাকছে না।

নাটোর : বিআরটিএর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নাটোরে চ্যালেঞ্জার পরিবহনের বাসের (ঢাকা মেট্রো চ ৫৬৫৯) সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হওয়া লেগুনার নিবন্ধন ছিল না। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না লেগুনা চালকেরও। তবুও এটি মহাসড়কে চলাচল করছিল। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেগুনার চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ডান দিকে চলে যান এবং বিপরীত থেকে আসা বাসের বেপরোয়া গতি ছিল।

এ কারণে মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। প্রতিবেদন আরও বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার সময়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ছিল। তবে মহাসড়কের রাস্তার অবস্থা মোটামুটি ভালো ছিল। দুর্ঘটনার স্থানে কোনো বাঁক নেই। এ ঘটনায় নাটোরের লালপুর থানায় মামলায় কয়েকটি ধারা উল্লেখ করা হয়েছে যার মধ্যে ৩০৪(খ) ধারাটি রয়েছে। এ দুর্ঘটনায় বাসের রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিট বাতিল ও চালকের লাইসেন্স স্থগিত করার জন্য বিআরটিএ চিঠি দিয়েছে।

নরসিংদী : ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ঢাকা বস কোম্পানির একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-০৯৫১) ও হিউম্যান হলারের (কুমিল্লা ছ-১১-০২৩৮) মধ্যে দুর্ঘটনা হয়। দুই যানবাহনের কোনোটিরই ফিটনেস ছিল না। বাসের ফিটনেস মেয়াদ ২০১৬ সালের মার্চে শেষ হয়ে যায়। আর হিউম্যান হলারের মেয়াদ এপ্রিলে শেষ হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাসচালক পলাতক থাকায় তার ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। আর হিউম্যান হলারের চালকের লাইসেন্স ছিল না। দুর্ঘটনায় তিনি মারা গেছেন।

দুর্ঘটনার কারণ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিউম্যান হলারের বেপরোয়া গতি এবং ওভারটেক প্রবণতার কারণে বাম পার্শ্বের লেন থেকে সরে ডানে পার্শ্বে চলে গিয়েছিল। একই সময়ে বিপরীত দিক থেকে বাসটি বেপরোয়া গতিতে আসায় দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মামলায় পুলিশ ৩০৪(খ) ধারাটি উল্লেখ করেছে।

ফেনী : ফেনীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শ্যামলী পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৮০৪১) বাসের সঙ্গে সিএনজি অটোরিকশার (ফেনী থ-১১-৫৯৪৩) সংঘর্ষ হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুটি যানবাহনই মহাসড়কে চট্টগ্রাম অভিমুখে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনার স্থান থেকে ৭০-১০০ মিটার দূরে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা অটোরিকশাকে থামতে সংকেত দেন। কিন্তু অটোরিকশাটি বাম পার্শ্বে না থেমে ডানদিকে দ্রুত ঘুরিয়ে ফেলে। ডানদিকে ঘোরানোর ফলে অটোরিকশাটি রাস্তার মাঝখানে চলে আসে এবং মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় শ্যামলী পরিবহনের বাসের অতিরিক্ত গতি ছিল।

এ ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যু হলেও পুলিশের মামলায় ৩০৪(খ) ও ২৭৯ ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অটোরিকশাচালক ঘটনাস্থলে মারা যান। দুই চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় সিএনজি অটোরিকশার নিবন্ধন ও রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে। আর বাসের রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিট বাতিল করতে বিআরটিএর ঢাকা-২ সার্কেলকে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম সার্কেল।

148Shares