চারদিকে পানি, ৬ দিন ধরে কবরস্থানে বাঁধা দুই লাশ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

চারপাশ যখন পানির নিচে তখন জারি গানের শিল্পী আশরাফ আলী (৬০) গিয়ে উঠেছিলেন স্থানীয় একটি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে। গত ১৭ জুন রাতে হঠাৎ সেখানেই তার মৃত্যু হয়। কোথাও পা ফেলার মাটি না থাকায় পানিতেই পড়ানো হয় জানাজা। কিন্তু মরদেহ দাফন সম্ভব হয়নি। উপায় না পেয়ে লাশে কাফনের কাপড় জড়িয়ে কফিনে বাঁশ দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে কবরস্থানের ওপর। লাশ ভেসে যাওয়ার ভয়ে ৬ দিন ধরে দেওয়া হচ্ছে পাহারা।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের দুই বাসিন্দা আশরাফ আলী ও সাজু মিয়ার ভাগ্য এমনই। সাজু মিয়াও (৭০) মারা যান একই দিনে। তার মরদেহও একইভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে ওই কবরস্থানে। তবে বন্যার পানি দ্রুত হ্রাস পেতে থাকায় দুয়েক দিনের মধ্যেই লাশ দাফন করা যাবে বলে জানিয়েছেন গ্রামের লোকজন।

জানা যায়, বাড়িঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে এমন খবর পেয়ে সাজু মিয়া রওনা দিয়েছিলেন সুনামগঞ্জের উদ্দেশে। মেয়ের ঘরের নাতিকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার দিনে ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। পথে ছাতকের গোবিন্দগঞ্জে বন্যার পানিতে আটকে যায় গাড়ি। পরে সেখানেই রাস্তায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় এক সিনজি চালকের মাধ্যমে বাড়িতে খবর পাঠানো হয়। পরে জামাতা নৌকা যোগে শ্বশুরের লাশ নিয়ে গ্রামে আসেন। এখন পাশাপাশি বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে আছেন সাজু মিয়া ও আশরাফ আলী।

ইব্রাহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা মরম আলী বলেন, এবারের বন্যার মতো ভয়াবহ বন্যা কখনও দেখেননি। পানির নিচে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও কবরস্থান।

আশরাফ আলীর ছেলে ইব্রাহিম আলী বলেন, বন্যায় আমাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে আমার বাবা অনেক কষ্ট করে মারা গেছেন। কিন্তু কবরস্থানে পানি থাকায় মরদেহ কফিনে ভরে বাঁশ দিয়ে আটকে রেখেছি। পানি কমছে। আশা করছি দ্রুতই লাশ দাফন করা যাবে।

সাজু মিয়ার জামাতা সালাতুল ইসলাম বলেন, দুদিন ধরে আমার শশুর আর ছেলের খোঁজ পাচ্ছিলাম না। পরে একজন এসে খবর দেন, আমার শশুর মারা গেছেন। ঘরবাড়ি সব ফেলে নৌকাযোগে জীবনের ঝুকি নিয়ে ছুটে যাই গোবিন্দগঞ্জ। সেখান থেকে লাশ এনে এখন বাক্সের ভেতর ভরে রেখেছি। ইব্রাহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা জানান, গ্রামের দুই বৃদ্ধ গত শুক্রবার মারা গেছেন। কিন্তু কবরস্থানে পানি থাকায় লাশ দাফন করা সম্ভব হয়নি। সূত্র : আমাদের সময়

এএইচ/এস