চাকুরী না পেয়ে প্রতিমা তৈরিতে স্বাবলম্বী শিবগঞ্জের আশিষ

কামাল হোসেন, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
চাকুরী না পেলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। নিজের বুদ্ধি দিয়েই বেকারত্ব ঘুচানো যায়। হয়তো কিছুদিন সময় লাগে এবং কষ্ট ভোগ করতে হয়। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শিবগঞ্জের প্রতিমা শিল্পী আশিষ। স্নাতক পাস করে শত চেষ্টা করেও টাকা ছাড়াই চাকুরী না হওয়ায় অবশেষে প্রতিমা তৈরী ও অংকন কাজ করেই স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি।

 

আশিষের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নে চৌকা মনাকষা গ্রামে। আশিষের পিতা শশাংক শেখর সিনহা পেশায় একজন দর্জি। বিনোদপুরের আইড়ামারীতে প্রতিমা তৈরীর সময় সরজমিনে কথা হয় আশিষ কুমার সিংহার সাথে।

 

বৃধবার আশিষের সাথে কথা হলে তিনি সিল্কসিটি নিউজের এ প্রতিবেদককে জানান, গরীব পিতার আয়ে লেখাপড়া করা সম্ভব ছিল না। তাই ছোট থেকে পিতার নিকট থেকেই প্রতিমা তৈরীর প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করে নিজ চেষ্টার ফলে সব ধরণের প্রতিমা তৈরী করতে শিখে ফেলেন তিনি। জীবনের প্রথম ১৯৯৯ সালে বিনোদপুর ইউনিয়নের আইড়ামারী গ্রামের একটি মন্দিরে প্রতিমা তৈরী করে ২ হাজার ৩শ’ টাকা উপার্জনের পাশাপাশি ব্যাপক সাড়া সৃষ্টি হয় এবং সে বছর  তিনি ৭ হাজার টাকা উপার্জন করেন।

 

অভাবের সংসারে পিতা লেখাপড়ার খরচ ও ৬ জন সদস্য বিশিষ্ট সংসার চালাতে অক্ষম হওয়ায় আমাকে হাল ধরতে হয় সংসারের। তাই কিছু দিন আমার লেখাপড়া বন্ধ থাকে।

 
২০০৩ সালে আনক কারিগরি কলেজে ভর্তি হয়ে ২০০৫ সালে এইচএসসি পাশ করেন। তারপর আবার কিছুদিন লেখাপড়া বন্ধ রেখে ২০১০ সালে বিনোদপুর স্নাতক মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ২০১২ সালে স্নাতক পাশ করেন। এভাবেই প্রতিমা তৈরীর মাধ্যমে আমার উপার্জিত টাকা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি লেখাপড়া করেন। কিন্তু ২০১২ সালে তার পিতা ভীষণ অসুস্থ হওয়ায়  একদিকে অসুস্থ পিতার চিকিৎসার খরচ, অন্যদিকে সংসার চালানোর কারণে আর উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ জোটেনি তার। এ সময় বিভিন্ন স্থানে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর আবেদন করে লিখিত পরীক্ষায় টিকেও একসাথে ১০-১২ লাখ সংগ্রহ করতে না পারায় চাকুরী হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে প্রতিমা তৈরীর কাজকেই পেশা হিসাবে গ্রহণ করতে হয়।

 
তিনি বলেন, বর্তমানে আমি প্রতিমাসে ৯-১০ হাজার টাকা উপার্জন করি। এ টাকা থেকে আমি সংসার চালানো পর আমার বাড়িতে প্রতিমা তৈরীর একটি কারখানা তৈরী করেছি। প্রতিমা তৈরীর বিভিন্ন উপকরাদি ক্রয় করেছি। এখন আগের মত কোথাও দৌড়ঝাঁপ করতে  হয়না। বাড়িতে থেকেই কালি, লক্ষী, সসতী, কার্তিক, গণেশ, শিব, রাধাকৃষ্ণসহ বিভিন্ন পূজা প্রতিমা তৈরী করে বিভিন্ন মন্দির কমিটির কাছে বিক্রি করি। শুধু মাঝে মাঝে দূর্গা পূজার প্রতিমা বাইরে গিয়ে করি।

 
তিনি জানান, সবচেয়ে বেশী খরচ ও লাভ হয় দূর্গাপূজার প্রতিমা তৈরীতে সময়ও লাগে বেশী। ৩-৪ জনকে ১৩ দিন ধরে শ্রম দিতে হয়। খরচ বাদে প্রায় ১৫ হাজার টাকা লাভ হয়। তবে প্রতিমাটি নিম্ন মানের হলে শ্রম কম লাগে ও লাভ কম হয়। তখন প্রতিটি মন্ডপে প্রতিমাতে প্রায় ১০ হাজার টাকা লাভ হয়।

 
আশিষের মতে এ ব্যবসাটি মৌসুমী হওয়ায় বছরে ৪ মাস চলে। এ ৪ মাসে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারি। তবে ছোট ছোট প্রতিমাগুলি তৈরীর কাজ প্রায় সারা বছরই চলে। সেখান সামান্য কিছু উপার্জন করতে পারি। বছরের বাকী সময় আমি ব্যানার, সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন ধরনের অংকনের কাজ করে সামান্য কিছু উপার্জন করতে পারি।

 
তিনি আরও জানান, বর্তমানে আমার তৈরী প্রতিমা এখন জেলার বাইরেও বিক্রি হয়। প্রতিমা তৈরীর ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক কালে আমি জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করে জেলা প্রশাসকের নিকট হতে পুরস্কার লাভ করেছি। আশা করছি আমি এ কাজের মধ্য দিয়েই নিজে যেমন স্বাবলম্বী হয়েছি। তেমনি আরো কয়েকজনকে স্বাবলম্বী করতে পারবো।

 
চাকুরীর ক্ষেত্রে আশিষ হতাশা ব্যক্ত করে বলেন- আমাদের সংস্কৃতি কাব্যের সনদপত্র অর্জন করলেও শিবগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিন্দু ধর্মের কোন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না।

 
তিনি সরকারের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন- আমাদের তৈরী প্রতিমাগুলি সরকারের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানী করার ব্যবস্থা করলে একদিকে সরকারী রাজস্ব বাড়বে। অন্যদিকে অনেক বেকার যুবক স্বাবলম্বী হতে পারবে।
স/শ