চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৬৫৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেই নেই শহীদ মিনার

কামাল হোসেন, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
চলছে ভাঁষার মাস। ১৯৫২ সালে রাস্ট্র ভাষা বাংলার জন্য জীবন দিতে হয়েছিল সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অজস্র বাঙালীকে। তখন থেকেই মহান ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে দিনটি পালন করে আসছে বাঙালী জাতি। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জের সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা এবং কলেজ মিলে মোট ১৬৫৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধিকাংশেই শহীদ মিনার নেই। একদিকে সরকারি তহবিলের অভাব অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটির অবহেলার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানে আজও নির্মাণ করা হয়নি শহীদ মিনার।

 
১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস ও ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস থেকে শুরু করে সকল দিবসের তাৎপর্য, ইতিহাস এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা থেকে একেবারেই বঞ্চিত রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। শহীদ মিনার নেই এমন কিছু সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এলাকার কিছু কিছু গ্রামে ১৬ই ডিসেম্বর ও ২১শে ফেব্রুয়ারীর আগমনে দেখা যায়, আজও উজ্জীবিত কিছু কিছু যুবক-যুবতী এবং ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের উদ্যোগে এলাকার বিদ্যালয় মাঠ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফাঁকা জায়গায় কলাগাছ পুঁতে বাঁশ, কাঠ ও কাগজ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে সেখানে পালন করে মহান বিজয় দিবস,স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

 

এতে করে মহান বিজয় দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মান উজ্জ্বল হওয়ার চাইতে ক্ষুন্ন হওয়া ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। সদর উপজেলার কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মহান বিজয় দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয় কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ওই দিবসের কোনো গুরুত্বপূর্ণ দিক বা তাৎপর্য তুলে ধরা হয় না।

 
উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলাতে সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা এবং কলেজ মিলে ১৬৫৯টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্টানে শহীদ মিনার নেই। জেলা মাধ্যমিক অফিসের তথ্যমতে ২০১৫ সালে শহীদ মিনার ছিল মাত্র ১৫টিতে।তবে এখন কিছু প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার বাড়ার কথা বলা হলেও কি পরিমান বেড়েছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি তারা।

 
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুখলেসুর রহমান আকন্দ জানান,মন্ত্রনালয় থেকে শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোতে সরকারিভাবে শহীদ মিনার নির্মানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।তারা পর্যয়ক্রমে তা বাস্তবায়ন করবে।

 
এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল কাদের জানান, সরকারি-বে সরকারি মিলিয়ে জেলায় মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯৯৮ টি। সেগুলোতে শহীদ মিনার নেই বল্লেই চলে। তবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যেন শহীদ মিনার নির্মান করা হয় সে বিষয়ে সব প্রতিষ্ঠান প্রধান কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তথ্যমতে,প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি অথবা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণ করার নির্দেশনা থাকলেও তা আজও বাস্তবায়ন করা হয়নি।

 

এ বিষয়ে জেলার কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ সকল জাতীয় দিবস অতি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে ওই দিবসগুলোতে শহরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। কিন্তু শহর থেকে গ্রাম অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণে ওই সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আসা সম্ভব হয় না। ফলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় এবং দিবসগুলো যথাযথ পালন না করার কারণে মহান বিজয় দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ প্রত্যেক দিবসের প্রকৃত ইতিহাস ও গুরুত্ব সম্পর্কে জ্ঞান লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এজন্য তিনি এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে কোন উদ্যোগে শহীদ মিনার স্থাপনের দাবি জানান।

 
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিল্কসিটি নিউজকে জানান, এলাকার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকার ফলে মহান বিজয় দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ সকল দিবস গ্রাম অঞ্চলে নিরবে পেরিয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা ওই দিবসগুলো তাৎপর্য, ইতিহাস ও গুরুত্ব সম্পর্কে অজ্ঞই থেকে যায়। তবে এলাকার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে। যে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সংশ্লিষ্টরা সরকারি অনুদানের অজুহাত দেখিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করবে না, খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স/শ