চাঁপাইনবাবগঞ্জে মহানন্দার ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি

কামাল হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:


মহানন্দা নদীর ভাঙনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রামের বসতবাড়ি, ফসলি জমি স্কুল-মসজিদ-মাদ্রাসা হুমকির মুখে পড়েছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে নদীতে তলিয়ে গেছে প্রায় ২০০ বিঘা ফসলি জমি।

নদী ভাঙনের শিকার এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালেও সময় মতো কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে মহানন্দা নদী ভাঙনে হুমকির মুখে গ্রাম-সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা।

তবে রোববার থেকে ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ সরবরাহ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ মুহূর্তে স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয় জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছেন, ভাঙন রোধে সোমবার থেকে নদীতে বালিভর্তি জিও ডাম্পিং শুরু হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই মহানন্দা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। ঘরবাড়ি দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙনের মুখে রয়েছে। নদীতে প্রবল স্রোত আর ভারী বর্ষণে ভাঙনকবলিত এলাকা ক্রমেই আগ্রাসী রূপ ধারণ করছে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে তীরবর্তী মানুষ। একইসাথে নদী ভাঙনের আগ্রাসী ধরণে নিরাপদ দূরত্বে থাকা বাসিন্দারাও আতঙ্কে রয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর বর্ষ মৌসুমে নদী ভাঙনের শিকার হয়। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়া থেকে হ্রাস পাওয়ার সময় পর্যন্ত নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়।

স্থানীয়রা জানায়, কয়েকদিনের ভাঙনে ইতিমধ্যে প্রায় ২০০ বিঘা ফসলী জমি বিলীন হয়েছে মহানন্দায়। হুমকির মুখে রয়েছে তরপাঘাট এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলী জমি, বাড়ি, রাস্তাঘাট, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রাম। নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেয়া হলে অচিরেই দেবীনগর ইউনিয়নের কয়েকশ ঘরবাড়ি কৃষিজমিসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

দেবীনগর ইউনিয়নের আমিনুল ইসলাম জানান, সবাই শুধু পরিদর্শনে এসে আশ্বাস আর ভরসা দিয়েছেন। পরিস্থিতি এতো ভয়াবহ, তারপরও এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। জনপ্রতিনিধিরাও এখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। হাজার হাজার বিঘা ফসলী জমি ও বসতবাড়ি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে নদীগর্ভে বিলীন হবে কয়েক হাজার পরিবারের আবাসস্থল, ফসলী জমিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

দেবীনগর ইউনিয়নের ভাঙনকবলিত এলাকার ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য বকুল ইসলাম বলেন, আমরা জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভাঙনের বিষয়ে জানিয়েছি। তবে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।

ব্যাংক কর্মকর্তা নাসির আলি জানান, পদ্মা-মহানন্দার ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে দেবীনগর ইউনিয়ন। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ধুলাউড়িহাট, দিয়াড় কলেজ, দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেবীনগর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ পুরো এলাকা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (পুর) মো. আতিকুর রহমান জানান, তীব্র স্রোতের কারণে এই মুহূর্তে স্থায়ী সমাধানে যাওয়া যাবে না। দ্রুত ভাঙন রোধের জন্য ওই এলাকায় জিও ব্যাগ সরবরাহ করা হয়েছে। তা দিয়ে নদীতে বালিভর্তি জিও ডাম্পিং শুরু হবে। আশা করা যাচ্ছে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে সাময়িক সময়ের জন্য ভাঙন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।