চাঁপাইনবাবগঞ্জে মরে যাওয়া পাগলা নদী খননে ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প

কামাল হোসেন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও সদর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভরাট পাগলা নদী খননে ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ডিপিপি প্রস্তুতও করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কার্যালয়ে পাঠানো হবে। ৪১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য পাগলা নদীটি এককালে খরস্রোতা নদী হিসেবে পরিচিত ছিল।

নদীটি ছিল ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান ধারক ও বাহক। এ নদীতে বড় বড় নৌকা ও ট্রলারে কৃষিপণ্য পরিবহন করা হতো। দাঁড় টেনে ও পাল উড়িয়ে মাঝিরা মালামাল পরিবহন করতো। এ নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল রামচন্দ্রপুর হাটে বৃটিশদের নীল কুঠি, কানসাটে কুঁজে রাজার রাজবাড়ি। বাণিজ্যিক এ নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল রামচন্দ্রপুর বাজার, কালিনগর বাজার, রানীহাটি বাজার, শিবগঞ্জ বাজার ও কানসাট বাজার।

শিবগঞ্জ ও কানসাটসহ পাগলা নদী এলাকায় উৎপাদিত আমসহ অন্যান্য ফসলাদি বড়-বড় নৌকায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করা হতো। জনসাধারণের যাতায়াতের আরও একটি মাধ্যম ছিল লঞ্চ। প্রতি বছর তর্ত্তিপুর ও কানসাট গঙ্গাশ্রম ঘাটে হিন্দু সম্প্রদায়ের জাহ্নুমণির দশহরা গঙ্গাস্নান উৎসবে হাজারো ধর্মপ্রাণ মানুষ আসেন। পূণ্য লাভের আশায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে গঙ্গাস্নানে অংশ নেন। কিন্তু কালের গহবরে নদীটি আজ পানি শূন্য। কথিত আছে এ পাগলা যখন বর্ষাকালে যৌবন ফিরে পেত তখন এর পাগলামি মারাত্মকভাবে বেড়ে যেত।

নদী তীরে দেখা যেত ভাঙন। আর তাই এর নাম হয়েছিল পাগলা। কিন্তু পদ্মা নদীর ভাঙনরোধে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও ভারত অংশে বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীটি আজ তার নাব্যতা হারিয়েছে। পানি প্রবাহ না থাকায় নদী তীরবর্তী লাখ লাখ মানুষ পড়েছে পানি সংকটে, কৃষিকাজসহ অন্যান্য কাজে এসেছে স্থবিরতা। এমন অবস্থায় ঢাকাস্থ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সমিতির সাবেক সভাপতি সাবেক ছাত্র নেতা ইঞ্জিনিয়ার মাহতাব উদ্দিনের উদ্যোগে নদীটি খননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডে আবেদন জানানো হলে মহানন্দার মিলনস্থল থেকে কানসাট পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার নদী পুনঃখননের জন্য ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ শাহিদুল আলম সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, পাগলা নদী সংলগ্ন এলাকায় প্রয়োজনীয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে জীব-বৈচিত্র্যের উন্নয়ন, ভূ-গর্ভস্থ পানি পূনর্ভরণের মাধ্যমে পানির স্তর বৃদ্ধি, কৃষি ও মৎস্য চাষের উন্নয়ন, সামাজিক ও প্রাকৃতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং দারিদ্র্য বিমোচনসহ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, নদীর মূল প্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন রোধ করে নদীর উভয় তীর সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে প্রায় ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রামচন্দ্রপুর বাজার, কালিনগর বাজার, রানীহাটি বাজার, শিবগঞ্জ বাজার ও কানসাট বাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় নদীর নাব্যতা বৃদ্ধিসহ নদী এলাকার জনসাধারণের কৃষি, মৎস ও আম উৎপাদন অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে ও আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে। ফলে প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার ২০৫ মেট্রিক টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন হবে এবং প্রায় ২১০ মেট্রিক টন অতিরিক্ত মাছ উৎপাদন হবে।