কামাল হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
পদ্মার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩টি ইউনিয়নে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ২’শ ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পদ্মা বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প। পাশাপাশি গত এক সপ্তাহের নদী ভাঙ্গনে মূল্যবান প্রায় ৩’শ বিঘা ফসলী জমি ও আমবাগান বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় দশক আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও শিবগঞ্জে পদ্মার ভাঙ্গন শুরু হলে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, ব্রীজ, কালভার্ট, বসত বাড়ী, আমবাগান ও ফসলী জমি হারিয়ে হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হলে স্থানীয়ভাবে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে আন্দোলনের মুখে সরকার ২০০২ সালে প্রায় ১’শ ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্পার নির্মাণ করলে তা উড়ে যায়। পরবর্তীতে নদী গবেষণা ইন্সটিটিউট নকশা পরিবর্তন করে প্রায় ২’শ ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মার বাম তীরের কাজ শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে সদর উপজেলার সুন্দরপুর ও চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের ৮, ৯ ও ১০ নং বাঁধ নির্মাণের পর গত বছর বাঁধের ২টি স্থানে ধস ও ৬টি স্থানে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এমনকি ১০ নং বাঁধের শেষ মাথা হতে ভাটিতে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হলে পাউবো কর্তৃপক্ষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। এতে পুরো বাঁধের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা দেখা দিলে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্থ ৬টি স্থানের মেরামতের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে কার্যাদেশও দেয়া হয়েছে।
এছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় ১০ নং বাঁধের শেষ মাথা হতে আরো ২২’শ মিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মানের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বর্ষা শুরু ও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ মেরামত কাজের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে, চলতি বছর পদ্মার পানি বাড়ার সাথে সাথে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের রোডপাড়া, বাখর আলী, সুন্দরপুরের চন্দ্রনারায়নপুর ও নারায়নপুরের আলিমনগর এলাকায় তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এতে ৭টি বাড়ী, ৩’শ বিঘা আমাবাগানসহ ধানি জমি বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে চরবাগডাঙ্গার গোয়ালডুবি, মালবাগডাঙ্গা, কাইরাপাড়া গ্রামসহ ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
চরবাগডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান ওমর আলী সিল্কসিটি নিউজকে জানান, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে গত ১ সপ্তাহ ধরে নতুনভাবে ১.৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন’দেখা দেয়ায় এলাকার মানুষের মাঝে চরম আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ১’শ বিঘা আমবাগানসহ ধানি জমি বিলীন হয়ে গেছে। জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিতে পারলে পদ্মার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পই ভেস্তে যেতে পারে।
নদী ভাঙ্গনের ব্যাপারে পাউবো’র সহকারি প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান বলেন, পদ্মার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের পুরো বাঁধটির ভবিষ্যত নিশ্চিতকরণে ৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ২২’শ মিটার বাঁধ নির্মানের প্রকল্পের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম ভাঙ্গনের বিষয়টি স্বীকার করে সিল্কসিটি নিউজকে জানান, ইতোমধ্যে ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে এবং ভাঙ্গনের তীব্রতা আরো বাড়লে জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স/অ