চাঁপাইনবাবগঞ্জে আকস্মিক ডায়রিয়ার প্রকোপ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা হতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ১০০ ডায়রিয়া রোগী চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

সরেজমিনে, আধুনিক সদর হাসপাতাল ঘুরে দেয়া যায়, বেডে রোগীর সংকুলান না হওয়ায় হাসপাতালের বারান্দায় রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে।আর আকশ্মিক রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডাক্তারগণও রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। হাসপাতালে বেড সংকটের কথা শুনে সচ্ছল অনেক ডায়রিয়া রোগী নিজ নিজ বাড়িতে বা ক্লিনিকেও চিকিৎসা নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।

আক্রান্তরা জানান, নবাবগঞ্জ পৌরসভার ৪, ৫, ৬, ৭ ও ৮ নং ওর্য়াডের দারিয়াপুর, হরিপুর, নামোনিমগাছী ও উপর রাজারামপুর এলাকায় এ ডায়রিয়া প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বেশীরভাগই মহিলা।

হরিপুর মিয়াপাড়ার আমিনের স্ত্রী পারভিন (৩৩) জানান, রাত থেকেই হঠাৎ বমি আর পাতলা পায়খানা হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। চিকিৎসাসেবা তিনি পেলেও কলেরা স্যালাইন বাইরে থেকে বেশী দামে কিনে আনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।

অন্যদিকে নামোনিমগাছী গ্রামের আকতারুলের স্ত্রী রোকসানা (২৪) জানায়, রাত্রে খেয়ে ঘুমানোর পর হঠাৎ পেট ব্যথা শুরু হয় এবং সাথে সাথে বমি আর পাতলা পায়খানা শুরু হয়। তার পরিবার পৌরসভার সরবরাহকৃত লাইনের পানি পান
করেন বলে জানান রোকসানা।

একই সুরে কথা বলেন, হরিপুরের সিরাজুলের স্ত্রী হাবিবা (৩০), শ্রী রঙ্গ কর্মকারের ছেলে জীবন কর্মকার (৪৫) ও মৃত মেসের আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম (৬২)।তাদের দাবী পৌরসভার সাপ্লাই পানি পানের কারণে তারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।

রোগীদের অভিযোগ, বেডের অভাবে বৃষ্টির মধ্যে শেতশেতে মেঝেতে তাদের চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে।সেসাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কলেরা স্যালাইন রোগীদের সরবরাহ না করায় বাইরের ফার্মেসীগুলো থেকে বেশী দামে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে।

নিজ এলাকার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের খোজ-খবর নিতে হাসপাতালে ছুটে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মতিউর রহমান জানান, বুধবার সন্ধ্যার দিক থেকে হঠাৎ করেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে থাকে ৪ ও ৫নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন বয়সী জনসাধারণ। আমরা পৌরসভার সরবরাহ লাইন পরীক্ষা করে দেখেছি, তাতে কোন ধরনের ফাটল বা সমস্যা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক নাদিম সরকার বলেন, ২৪ অক্টোবর দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৮৩ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে এবং রোগী এখনও আসছে।

কলেরা স্যালাইনের বিষয়ে তিনি বলেন, স্টকে না থাকায় রোগীদেরকে কলেরা স্যালাইন বাইরে হতে কিনতে হচ্ছে। তবে কলেরা স্যালাইন সংকটের বিষয়টি উপর মহলে জানানো হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা.মাহফুফুর রহমান বলেন, বুধবার রাত ১২টা থেকে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হতে শুরু করে। জনবল কম থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, আতঙ্কের কিছু নাই।সুষ্ঠভাবে রোগীদের চিকিৎসা প্রদাণ করা হচ্ছে। কলেরা স্যালাইনের ব্যবস্থা করার জোর প্রচেষ্টা চলছে।তিনি সকলকে পৌরসভার সাপ্লাই পানি বর্জন করে টিউবয়েলের পানি পান করতে এবং পানি ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দেন।

তিনি আরও জানান, সেই এলাকার পানি পরীক্ষার জন্য রাজশাহীতে পাঠানো হয়েছে। আমাদের ধারনা পৌরসভার খাবার পানি সরবরাহের লাইনের সাথে পানি নিষ্কাশন লাইনের যে কোনভাবে সংযোগের কারনে এমনটি হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, কলেরা স্যালাইনের কিছুটা স্বল্পতা থাকলেও পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট ও স্যালাইনের কোন সমস্যা নাই। আমরা আশা করছি খুব শীগ্রই এ সমস্যা হতে আমরা উত্তোরণ পাবো। এমনকি সেই এলাকার জনসাধারণ যেন ট্যাপের পানি সরাসরি না খেয়ে ফুটিয়ে অথবা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দ্বারা বিশুদ্ধ করার পর পান করেন সেই পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

অপরদিকে নবাবগঞ্জ পৌর মেয়র মোহম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানার পর উক্ত এলাকায় তিনটি টিম পাঠানো হয়েছে। মাইকিং করে পানি ফুটিয়ে পান করার জন্য বলা হয়েছে। আপাতত পানি সাপ্লাই বন্ধ আছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পর বিকাল ৪ টায় আবার পানি সাপ্লাই চালু করা হবে।

স/অ