চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩টি আসনের ফলাফলে ভুমিকা রাখবে ৪০ হাজার নতুন ভোটার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
একদাশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাত্র ১ বছর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩ টি সংসদীয় আসনে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন ৪০ হাজার ৯২৭ জন। তিনটি আসনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া এই নির্বাচনে ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তরুণ ভোটাররাও বেছে
শুনে ভোট দিবেন বলে জানিয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানিয়েছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদের লক্ষে সর্বশেষ ২০১৭ সালে তথ্য সংগ্রহ ও নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ওই বছরের ২৫ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হয় সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে।
এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ- ৩ আসনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় নতুন ভোটার নিবন্ধন হয়, ১৩ হাজার ৯৯৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৬ হাজার ৪৩৪ জন এবং মহিলা ৭৫৬১ জন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের নাচোল উপজেলায় ৩ হাজার ৮৭৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৮৮৬ জন মহিলা ১ হাজার ৯৮৯ জন। গোমস্তাপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৪৪০ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৩ হাজার ৯৯ জন এবং মহিলা ৩ হাজার ৩৪১ জন। ভোলাহাট উপজেলায় ২ হাজার ১৫২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৮৬৯ জন এবং মহিলা ১ হাজার ২৮৩ জন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের শিবগঞ্জ উপজেলায় হয়েছেন, ১৪ হাজার ৪৬৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ২০০ জন এবং মহিলা ৭ হাজার ২৬৫ জন। নতুন এই ভোটারদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে ১ হাজার ৯৫১ জন মহিলা ভোটার বেশি রয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি সংসদীয় আসনে মোট ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতার তালিকায় থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে ৭ জন প্রার্থী।
এরমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ শিবগঞ্জ আসনে আওয়ামী লীগের ডা. সামিল উদ্দীন আহম্মেদ শিমুল, বিএনপি’র অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ নাচোল, গোমস্তাপুর, ভোলাহাট আসনে আওয়ামী লীগের জিয়াউর রহমান ও বিএনপি
আমিনুল ইসলাম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ সদর আসনে আওয়ামী লীগের আব্দুল ওদুদ, বিএনপি’র হারুনুর রশিদ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল।
প্রার্থীদের নির্বাচনী তৎপরতা ও প্রচার প্রচারণায় এই ৭ প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সাংগঠনিক অবস্থান ও আগের নির্বাচনের পরিসংখ্যানও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারণা দিচ্ছে। নির্বাচনী এলাকার
সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি জামায়াতের ভোট ব্যাংকের সূত্রধরে বিএনপি প্রার্থী শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও তরুন প্রার্থী আর সাংগঠনিক অবস্থার বিচারে আওয়ামী লীগের প্রার্থীও বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে আগের মতই লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি জামায়াতের ভোট যোগ করলে আওয়ামী লীগের অবস্থা নাজুক হবার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বিএনপি জামায়াত পৃথক পৃথকভাবে নির্বাচনী দৌড়ে থাকায় আওয়ামী লীগ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। এখানে তিন দলের প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে ‘সেয়ানে-সেয়ানে’।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং সদর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াত নেতার অংশ গ্রহণে যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে তাতে নতুন ভোটার অর্থাৎ তরুণ প্রজন্মের ভোট ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখবেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পাঠানপাড়ার ইমন বলেন, ‘ তরুণদের সঙ্গে যারা মিলেমিশে কাজ করতে পারবেন, যারা তরুণদের চাওয়া পাওয়াটা বুঝতে পারবেন পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তির বিকাশে ভুমিকা রাখতে পারবেন তাদেরকেই আমি আমার ভোটটি দিবো’।
একই এলাকার নতুন ভোটার খাদিজা খাতুন বলেন, ‘ জাতীয় নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে সুশাসন, জবাবদিহিতা জড়িয়ে রয়েছে। যারা ভাল কাজ করবেন। যাদের মাধ্যমে আমরা শান্তিতে থাকতে পারবো। তাদেরকেই বেছে শুনে ভোট প্রয়োগ করবো’।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আজাইপুর গ্রামের তাজকেরা খাতুন বলেন, ‘ নতুন ভোটার হয়েছি। জীবনের প্রথম ভোট দিবো। তাই অনুভূতিটায় ভিন্ন। যারা দেশের উন্নয়ন করতে পারবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন আমি তাদেরকেই নির্বাচিত করবো’।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুস সালাম বলেন, ‘প্রগতির পথ ধরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর আমাদের দেশটায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি ঐতিহ্য রয়েছে। তাই আমি সাম্প্রদায়িক কোন লোকের পক্ষে সিদ্ধান্ত দিবো না’।
এদিকে, গতবছরের ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যাক্রমে ৪০ হাজার ৯২৭ জন যুক্ত হাবার আগে ২০১৪ সাল থেকে ১৬ সাল পর্যন্ত নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে আরো ৯৫ হাজার ৪৫১ জন। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর এসব ভোটার স্থানীয়ম নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেও তারাও জাতীয় নির্বাচনের প্রথম ভোটার। সেই হিসেবে ২০১৪ সালের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি আসনে ভোটার বেড়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৮৫ জন।
স/অ