চাঁপাইনবাবগঞ্জের সেই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আ.লীগ নেতা অবশেষে জেলহাজতে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সেই শীর্ষ মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ নেতাকে অবেশেষে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারানি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী দাপটে ঘুরে বেড়িয়েছেন দিনের পর দিন। নির্বাচনে পরাজিত হলেও তিনি আদালতের চোখে থেকে গিয়েছিলেন পলাতক।

এ নিয়ে গত ৪ মার্চ অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশের পর ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিন আবেদন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চর বাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর আলী। তবে আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করে জেলা হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

এদিকে এই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে আরো একটি মাদক মামলায় দিনের পর দিন পলাতক থাকার অভিযোগ উঠেছে। ওই মামলাটিতেও আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। এমনকি তার অবর্তমানেই মামলার অভিযোগ গ্রহণ করে সাক্ষী গ্রহণ কার্যক্রমও শুরু হয়। কিন্তু আদালতের চোখে পলাতক থেকে দিব্যি এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন ওমর আলী। গত ৮মে জেলহাজতে পাঠানো হয় তাকে।

আদালত সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ২ নভেম্বর মাদক ব্যবসায়ী ওমর আলীর বিরুদ্ধে ২৭০ গ্রাম হেরোইন পাচারের অভিযোগে মামলা করে বিজিবি। এরপর চাঁপাইনবাবঞ্জ সদর থানা পুলিশ ২০১০ সালের ১৭ এপ্রিল ওমর আলীকে পলাতক দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র প্রেরণ করে। এরপর থেকে আদালতে মামলা বিচারাধীন অবস্থায়ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ২০১১ সালের ৯ জুন চর বাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন ওমর আলী। তবে সম্প্রতি এই মামলায় পলাতক থাকা অবস্থায় রায়ে আদালত আসামি ওমর আলীকে খালাস দিয়ে দেন।

আদালত সূত্র জানায়, মামলার বিচারকাজ চলা অবস্থায় ওমর আলী আদালত ও পুলিশের কাছে পলাতক থেকে এলাকায় দাপটে ঘুরে বেড়িয়েছেন। শেষে আরেকটি হেরোইন মামলায় গত ৮ মে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক জিয়াউর রহমান তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২১ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরের রোজ হোটেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি অভিযান চালিয়ে এক কেজি ৪০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধারের ঘটনায় ওমর আলীসহ দুইজনকে আসামি করে একটি মামলা করে। এ মামলায় ওপর আসামি করা হয় চরবাগডাঙা গ্রামের জামিল উদ্দিনের ছেলে বাবুকে (২৮)। ওই মামলায় ২০১৫ সালের ২৭ এপ্রিল আসামি ওমর আলীসহ দুজনের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে এ নির্দেশ জারি করা হয়। বর্তমানে এই মামলাটিও বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে।

জানতে চাইলে ১ কেজি ৪০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার মামলার বাদী বিজিবি কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আসামি ওমর আলী একজন কুখ্যাত মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা মাথায় নিয়ে এলাকায় বছরের পর বছর ঘুরে বেড়িয়েছে।

জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রশিকিউটর আঞ্জুমান আরা বলেন, ‘এই ধরনের একটি মামলা রয়েছে। আসামিরা পলাতক ছিল দীর্ঘদিন ধরে। এখন কারাগারে আছে। মামলার বিচারকাজ প্রায় শেষের দিকে।’

স/আর