চাঁপাইনবাবগঞ্জে হৃদয়ের হাতে বাসা বাধে হাজারো মৌমাছি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি :
“মৌমাছি হৃদয়” নামেই এলাকাতে চেনে সবাই। প্রায় ১০ বছর ধরে মধু সংগ্রহ করেন তিনি। কিন্তু তাকে পেয়ে বসে মৌমাছি বশ করার মন্ত্রে। কিন্তু কিভাবে
বশে আনা যাবে মৌমাছি এর উত্তর জানা ছিলনা তার। তবে হঠাৎ করেই গ্রামের এক গুরুজির সাথে গল্প করার সময় মৌমাছিকে বশ করার কথা ব্যক্ত করেন তিনি। সে বিদ্যা শিখিয়েও দেন গুরুজি। কিন্তু নামটি কোনদিন প্রকাশ না করার শর্ত দেন গুরুজি। আর এ থেকেই মৌমাছির প্রতি ভালো লাগা এবং ভালো লাগা থেকেই জন্ম নেয় ভালোবাসার। মৌমাছি সম্পর্কে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কাউসার আলি হৃদয় (২৭)।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কসবা গ্রামের পলিথিন পাড়ার আবুল কালাম আজাদ ও আনোয়ারা বেগমের বড় সন্তান হৃদয়। বাবা পেশায় কৃষক এবং মা গৃহিনী হলেও ছোট ভাই করেন রাজমিস্ত্রীর কাজ। তাছাড়া একমাত্র বোনের বিয়ে দিয়েছেন তিনি নিজেই।

তিনি জানান, বাবা কৃষক হওয়াতে বাড়ির বড় ছেলে হিসেবে সেই ছোট থেকেই বাবাকে কৃষি কাজে নানা রকম সহযোগীতা করায় পঞ্চম শ্রেণীর বেশি পড়া হয়নি। আর তাই কৃষি কাজের পাশাপাশি মাঠে যখন সরষে চাষ হতো আর সেই সরষে ফুলে মৌমাছি খেলা করতো তখন থেকেই এদের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি। পাশাপাশি মাঠে মাঠে যখন মৌমাছির মধু সংগ্রহ করা হতো তা আমাকে আকর্ষণ করতো। এমন ভাবনা থেকেই প্রায় দুই বছর সাধনার পর মৌমাছির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে আত্মার আত্মীয়ের মতো।

এ সম্পর্ক এতটাই গভীর যে চাইলেই মৌমাছি আমার শরীরের যে কোনো স্থানে বাসা বাঁধতে পারে। আবার উড়েও যেতে পারে অবাধে। তবে হাতেই বাসা বাঁধে বেশির ভাগ সময়। আর তাই গ্রামের অনেকেই আমাকে ‘মৌমাছি হৃদয়’ নামে ডাকে। তবে মৌমাছি শরীরে চলাফেরা করলেও কখনো কামড়ায়না বলেও জানান ‘মৌমাছি হৃদয়’। আর এ কাজে পরিবারের কেউ বিরোধিতা করেনা বলেও জানান তিনি।

বাবা আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার ছেলে হৃদয় চার মেয়ের জনক। সে প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর আগে আমাকে কৃষি কাজে সহযোগীতার পাশাপাশি মধু চাষাবাদের চিন্তা করে। সে থেকে বাড়ির পাশে ছোট্ট একটি ঘরে মৌমাছির চাষ করে হৃদয়। প্রতিদিন পরম মমতায় মৌমাছির যত্ন নেয়ার পাশাপাশি মধু আহরণও করে সে। মৌমাছিপালন ও মধু সংগ্রহের পাশাপাশি  তার মাথায় মৌমাছিকে বশ করার ভাবনাও আসে। সে থেকে অবসর সময়ে পাড়া-মহল্লায় ঘুরতে বের হলে হাজার হাজার মৌমাছিকে বাম হাতের কব্জির উপর নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এ যেন এক হৃদয়ের হাতে হাজারো হৃদয়ের বসবাস।

এ বিষয়ে কৃষক কয়েস উদ্দিন বলেন, কৃষি কাজের পাশাপাশি হৃদয় মৌমাছির মধু সংগ্রহ করে প্রায় ১০ বছর ধরে। মৌমাছির সঙ্গে যুবক হৃদয়ের এমন সখ্যতার খবরে তাকে দেখতে প্রায় প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন কৌতুহলী  মানুষ। আর হৃদয়ের সংগৃহিত মধু বেশ ভালো বলে জানান তিনি।

এদিকে হৃদয়ের এ কর্মকান্ডে এলাকার অনেক শিশু তার পিছু নেই। শিশুরা এ দেখে আনন্দও পায়। বাদ যাননা বড়রাও। তবে সঠিক দিক নির্দেশনা পেলে মধু সংগ্রহে আরো মনোযোগী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।