চাঁদপুর ১ আসনে আ. লীগের মনোনয়ন পেতে সাবেক দুই আমলার ‘লড়াই’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে আওয়ামী মনোনয়ন পেতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেন। গত কয়েক বছর ধরে তারা দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দলীয় কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করে আসছেন। এ আসনের প্রায় সব পর্যায়ের নেতাকর্মীই মনোনয়নকে ঘিরে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে।

মনোনয়নপ্রত্যাশী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও মো. গোলাম হোসেন দুই জনই এলাকায় সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ করছেন। কর্মসূচি পালন করেই আবার ছুটে যাচ্ছেন ঢাকায়। বর্তমান এমপি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের পক্ষে দেখা যাচ্ছে মূলত দলীয় পদ-পদবি পাওয়া সুবিধাভোগীদের। আর গোলাম হোসেনের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের বঞ্চিত নেতাকর্মীদের।

মনোনয়ন দৌড়ে আরও একজন রয়েছেন। তিনি এনার্জি রেগুলেটরির চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মূল তৎপরতা মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও গোলাম হোসেনের পক্ষেই। উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের একটি অংশ বর্তমান এমপি মহীউদ্দিন খান আলমগীরের সঙ্গে থাকলেও অন্য অংশ গোলাম হোসেনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আরেক অংশ রয়েছে নীরবে। কচুয়ায় সভা-সমাবেশ এবং জেলায় ব্যাপক প্রচারের কারণে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ক্রমে ঝুঁকছেন গোলাম হোসেনের পক্ষে।

অভিযোগ আছে, বর্তমান এমপি ও তার গ্রুপের নেতারা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে দলীয় প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করছে। স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের ধারণা, ফারমার্স ব্যাংকে অনিয়মসহ কিছু কাজে সমালোচিত হওয়ায় কেন্দ্রে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। অন্যদিকে গোলাম হোসেনের রয়েছে ‘ক্লিন ইমেজ’। সাবেক এই আমলা কেন্দ্রীয়ভাবেও বেশ পরিচিত। এবার নৌকার টিকিট গোলাম হোসেন পেতে পারেন। মূলত এমন ধারণা থেকেই নেতাকর্মীরা তার পক্ষে ঝুঁকছেন।

তবে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সমর্থকরা বলছেন, কচুয়ার উন্নয়নের রূপকার ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তিনি কচুয়ায় আওয়ামী লীগের ভীত মজবুত করেছেন। তার কারণে কচুয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কচুয়ার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়েছে। তাই কচুয়ার অধিকাংশ নেতাকর্মী আগামীতেও আওয়ামী লীগের এমপি প্রার্থী হিসেবে তাকেই দেখতে চান।

আর মো. গোলাম হোসেন সমর্থক নেতাকর্মীদের দাবি, তিনি সাবেক সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে কাজ করেছেন। মনে-প্রাণে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করেন। বিপরীতে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর পাকিস্তানিদের নির্দেশ মেনে চাকরি করেছেন।

গোলাম হোসেনের সমর্থকরা জানান, কচুয়ার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার সভাপতি-সম্পাদক ২৬ জনের মধ্যে ১৯ জনই প্রকাশ্যে গোলাম হোসেনের পক্ষে কাজ করছেন। অন্যরা গোপনে সম্পর্ক রাখছেন। এছাড়া ওয়ার্ড পর্যায় এবং সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা এমপি প্রার্থী হিসেবে তাকে চান। তিনি এলাকায় স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করে এলাকার ছেলে-মেয়েদের সুশিক্ষার সুযোগ সহজ করে দিয়েছেন। তিনি দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে এলাকার মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। কচুয়ায় আর প্রতিহিংসার রাজনীতি চান না তারা।

কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. বাতেন সরকার বলেন, ‘এখানে দুঃসময়ে যারা আওয়ামী লীগের হাল ধরেছেন, তাদের মূল্যায়ন করেননি বর্তমান এমপি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নির্যাতিত বহু নেতাকর্মীর খোঁজ-খবর নেন না তিনি। বরং আমরা এখনও নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছি। আমি গত ১০ দিন বাড়িতে যেতে পারছি না। তিনি আসলে আওয়ামী লীগকে ভালোবাসেন কিনা, সেটি নিয়েই সন্দেহ রয়েছে। তিনি সব আমলেই সুবিধা নিয়েছেন। আমরা চাই, যারা আওয়ামী লীগের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন এমন নেতাকর্মীরা মূল্যায়িত হোক।’

বাতেন সরকার বলেন, ‘নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও আমরা গোলাম হোসেনকে নিয়ে কাজ করছি। তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাকর্মীই তার পক্ষে। মুষ্টিমেয় কিছু সুবিধাভোগী নেতা বর্তমান এমপির পক্ষে আছেন।’

কচুয়া পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হেলাল বলেন, ‘কচুয়ায় বর্তমানে মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন তিনজন। এর মধ্যে রয়েছেন ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, এনার্জি রেগুলেটরি চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এবং গোলাম হোসেন। কচুয়া উপজেলার আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের অনুগত। গত ৩০ বছরের তার কর্মকাণ্ড ও কচুয়ার উন্নয়নের কারণেই আমরা তার সঙ্গে আছি। কচুয়ায় ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বিকল্প নেই। আগামী নির্বাচনে এখানে অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে নির্বাচন করবেন ড. আলমগীর আর অন্যরা হয়তো পরিচিত হতে চাইছেন।’

কচুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মনির হোসেন প্রধান বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এখনও আদালতে হাজিরা দিই। বর্তমান এমপির জন্য জীবন-যৌবন সবই দিয়েছি। কিন্তু এখন তিনি ত্যাগী নেতাকর্মীদের পাশে নেই। গ্রামাঞ্চলে ভোটের মেকার যারা তারা সবাই গোলাম হোসেনের দিকে। আর বর্তমান এমপির সঙ্গে আছেন দলীয় পদধারী লোকজন। যারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। আসলে কচুয়ার মানুষ পরিবর্তন চায়।’

এ বিষয়ে কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন চৌধুরী সোহাগ বলেন, “এখানে মূলধারার সাংগঠনিক প্রায় সব নেতা ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সঙ্গে আছেন। তিনি দলের জন্য একসময় ‘জনতার মঞ্চ’ করেছেন। আমাদের নেত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণ। আশা করি, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরই এ আসনে মনোনয়ন পাবেন।”

তিনি বলেন, ‘দলের বাইরের কিছু লোক এবং দলের পদবঞ্চিত কিছু লোক দলকে খণ্ডিত করার চেষ্টা করছে। যারা বিগত ইউপি নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করেননি, তারাই এখন বর্তমান এমপির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আর তারা এখন ঘরের শত্রু বিভীষণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। আমাদের কিছু লোক এবং অন্য দলের লোকজন গোলাম হোসেনের পক্ষে কাজ করছেন।’

চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ব্যক্তিগত পছন্দে ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগের কোনও ভিন্নতা নেই। তাই দলে থাকলে দলের নিয়ম মেনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই সবাইকে কাজ করতে হবে। কেউ যদি দলে থেকে কোনও রকমের উসকানি বা বিভ্রান্তকর কাজে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করে তার বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে যেতে বিন্দুমাত্র চিন্তা করবো না।’

তিনি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুরবাসীর জন্য কাজ করতে যাকে নৌকার প্রার্থী বলে চূড়ান্ত করবেন সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করে চাঁদপুরের পাঁচটি আসনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে  হবে।’