চলনবিলে বানার বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করছে প্রভাবশালীরা

সিংড়া প্রতিনিধি:

সিংড়ার চলনবিলে বানার বাঁধ, সুঁতিজাল দিয়ে নির্বিচারে মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী শিকার করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মসজিদের নামে বিলের বিভিন্ন এলাকায় ‘ইজারা’ দিয়ে এসব জলজ প্রাণী শিকারের ব্যবস্থা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসীরা জানান, নাটোরের সিংড়ার অধিকাংশ এলাকা চলনবিলবেষ্টিত। বিলে বর্ষার পানি চলে আসায় এসব এলাকায় মাছ শিকারিদের তৎপরতা বেড়েছে। চলনবিলের দমদমার জোলার বাতা, নিংগঈন-জোড়মল্লিকা, পাটকোল-কতুয়াবাড়ি, ডাহিয়া, শেরকোল ইউনিয়নের তেলীগ্রাম ও সোনাইডাঙ্গা-গোবিন্দনগর বিলে বানার বাঁধ এবং সুঁতিজাল দিয়ে ছোট-বড় মাছ, কাঁকড়া ও শামুক নিধন করা হচ্ছে। বাঁধাগ্রস্থ করা হচ্ছে পানি প্রবাহ।

মঙ্গলবার সরেজমিনে চলনবিল ঘুরে দেখা যায়, নাটোরের সিংড়ার জোলার বাতা-দক্ষিণ দমদমা এলাকায় জলাশয়ের এক কিলোমিটারের বেশি অংশ বাঁধ দিয়ে ঘেরা। এ সময় কথা হয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসীর সঙ্গে। তারা বলেন, দক্ষিণ দমদমার পূর্বপাড়া ও পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ থেকে বিলের এই অংশ ৩২ হাজার টাকায় ইজারা নিয়ে মাছ শিকার করছেন স্থানীয় আ’লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী ও বাহার উদ্দিন। নিংগঈন ভাটোপাড়া জামে মসজিদ থেকে বিল ইজারা নিয়ে নিংগঈন এলাকায় বানার বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়াল। জোড়মল্লিকা ব্রীজের পূর্ব পার্শ্বে আত্রাই নদীর ভাংগনে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করছেন ওই ওয়ার্ডের প্রায় অর্ধ শতাধিক আ’লীগের নেতাকর্মী। এলাকাবাসী জানান, জোড়মল্লিকা কওমী মাদ্রাসা ও কবরস্থানের নামে এই বাঁধ পরিচালনা করছেন স্থানীয় আ’লীগ নেতা বাবু। পাটকোল ও কতুয়াবাড়ি এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে এক কিলোমিটারের বেশি অংশ বাঁধ দিয়ে ঘিরে মাছ শিকার করছেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা কাজল ও বিটল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মুসল্লি জানান, পাটকোল বিলের এই অংশ পাটকোল ও বালুভরা দুই জামে মসজিদ থেকে ২ লাখ কুড়ি হাজার টাকা দিয়ে ইজারা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও শেরকোল ইউনিয়নের তেলীগ্রাম বিলে সুঁতিজাল দিয়ে মাছ শিকার করছে আ’লীগ নেতা আব্দুল কাদের ও সাবেক মেম্বার আব্দুল মতিন এবং সোনাইডাঙ্গা-গোবিন্দনগর বিলে সুঁতিজাল দিয়ে মাছ শিকার করছে স্থানীয় আ’লীগ নেতা মিজানুর রহমান।

চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চলনবিলে বানার বাঁধ ও সুতিজাল দেওয়ায় সব ধরণের মাছ ও জলজ প্রাণী অবাধে চলাচল করতে পারছে না। এতে মাছ, কাঁকড়া, শামুকসহ ছোট পোকামাকড় বিলুপ্ত হচ্ছে। আমরা এলাকাবাসীকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।’ তবে চলনবিল বৃহৎ ও বিস্তীর্ণ এলাকা হওয়ায় জীববৈচিত্র্য ও মাছ নিধন রোধে জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসীর সহযোগিতা দরকার।

সিংড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে বিল ইজারা দেয়া আইনে কোথায়ও এর বিধান নেই। আইন আইনের গতিতে চলবে। বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, গ্রাম্য পুলিশের মাধ্যমে বানার বাঁধ ও সুতিজাল দিয়ে মাছ শিকারের তালিকা করা হচ্ছে। অবিলম্বে বিলে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, আমরা গত উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় আলোচনা করেছি। স্থানীয় মেয়রসহ জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সকলকে অনুরোধ করেছি। কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে এই ধরনের পক্ষক্ষেপ যেন কোন দিন না নেয়া হয়। তিনি আরো বলেন, আমরা সবাই মিলেই এই মানুষদের সচেতন করব। সম্ভব হলে এবারই তাদেরকে উচ্ছেদ করার জন্য বলা হয়েছে। আর এবছর আমরা শতভাগ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিলে কোন সুঁতি বা বানার বাঁধ চালাতে দিবো না। তবে প্রভাবশালী দু’একজন সুঁতি দিয়েছে যেটা আমরা উচ্ছেদের চেষ্টা করছি।

স/শা