বৃহস্পতিবার , ১১ জুলাই ২০২৪ | ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

খামকাণ্ড: চন্দ্রিমা থানায় ওসি মাহবুবের রুমে সেদিন কি ঘটেছিল?

Paris
জুলাই ১১, ২০২৪ ১১:৩৬ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলমের খাম লেনদেনের ভাইরাল হওয়া ভিডিও নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওসিকে খাম দেয়া, সেটা ভিডিও করা ও ভিডিও ভাইরাল করা সব কিছুই ছিল পরিকল্পনা মাফিক। খাম প্রদানকারী ব্যক্তি খামে টাকা দেয়ার কথা অস্বীকার করলেও একটি পক্ষ প্রভাব খাটিয়ে সেটি ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছে। ঘটনার দিন ওসির রুমে উপস্থিত ব্যক্তিরাই ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সাজিয়েছিল বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, গত ৫ জুলাই (শনিবার) সন্ধ্যায় চন্দ্রিমা থানার ওসি মাহবুব আলমকে একটি খাম দেয়া ভিডিও ভাইরাল হয়। এরপর থেকে গণমাধ্যমেও বিভিন্ন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে তাকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় আরএমপি। প্রকৃত পক্ষে সেদিন কি ঘটেছিল চন্দ্রিমা থানায়, সে বিষয়টি সবার অজানা। এছাড়াও ওসিকে খাম দেয়ার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

প্রথমত ওই খামে কি ছিল, টাকা না কাগজপত্র। যদি টাকা হয়, তাহলে এতো লোকজনের মধ্যে ওসির ওই খাম নেয়ার কথা নয়। খাম দাতা টাকা দেয়ার কথা অস্বীকার করলেও পরে কেন তিনি ভোল পাল্টালেন। মহানগর গোয়েন্দা অফিসে কোন প্রভাবশালীর ভয়ে লিখিত জবানবন্দিতে খামদাতা সাক্ষর করলেন এসব প্রশ্নের জবার মিলছে না।

জানা গেছে, ওসি মাহবুব আলমকে খাম দেয়া যুবকের নাম মোস্তাফিজুর রহমান। তার বাড়ি নগরীর ভদ্রা বৌবাজার এলাকায়। তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন। মূলত পশ্চিম রেলে তার বোন রুবানা চাকরি করেন। পশ্চিম রেলের এক কর্মকর্তার দ্বারা রুবানা শ্লীলতাহানির শিকার হন। এ নিয়ে গত ২০ জুন চন্দ্রিমা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। আর ওই দিনই এ ঘটনার সূত্রপাত হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুবানা রেলের কর্মচারির দ্বারা শ্লীলতাহানির শিকার হওয়ার পর তার ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মামলা করার জন্য চন্দ্রিমা থানায় যান। যদিও তিনি রেল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। রেল কর্তৃপক্ষ কি ব্যবস্থা নেয় সেটি দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন মোস্তাফিজুর। তারপরও তিনি বারবার ওসি মাহবুব আলমের কাছে গিয়ে এ বিষয়ে পরামর্শ নিয়েছেন। গড়িমশি করে সর্বশেষ ২০ জুন মোস্তাফিজুর থানায় গিয়ে বোনের শ্লীলতাহানীর মামলা করেন।

গত ২০ জুন মোস্তাফিজুর রহমান চন্দ্রিমা থানায় মামলা করতে যাওয়ার সময় সাথে তিনজন সাংবাদিক নিয়ে যান। ওই সময় তিন সাংবাদিকসহ ওসির রুমে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। মোস্তাফিজুরের পক্ষে যাওয়া সাংবাদিকরা ওসি মাহবুবকে জানান, শ্লীলতাহানীর ঘটনায় বেশ কিছু কাগজপত্র রয়েছে যা দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন। তারা কাগজপত্রগুলো দেখার জন্য ওসিকে অনুরোধ করেন।

ওসি মাহবুবও ওই কাগজপত্র দেখতে চান। কাগজপত্র নেয়ার জন্য মোস্তাফিজুর রহমান ওসি মাহবুব আলমের কাছ থেকে একটি খাম নেন। সেই খামে মোস্তাফিজুর রহমান কাগজপত্র ভরে ওসিকে দিলে ওসি পরে দেখবো বলে টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দেন। আর এই সুযোগে খাম দেয়ার বিষয়টি গোপনে ভিডিও করা হয়। সেই ভিডিও করেন একজন সাংবাদিক। ভিডিও করার টানা ১৫দিন পর তা ভাইরাল করা হয়। এরআগে তিন সাংবাদিক ওসি মাহবুব আলমকে ফাঁসানোর জন্য মোস্তাফিজুর রহমানকে হাত করে তারা থানা যান।

এদিকে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর ওসি মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একই সাথে খামদাতা মোস্তাফিজুর রহমানকে থানায় ডাকা হয়। সেখানে মোস্তাফিজুর রহমান জবানবন্দি দেন, ওসি মাহবুবকে দেয়া খামে কোনো টাকা ছিল না, খামে কাগজপত্র ছিল। এরপর ডিবি কার্যালয়েও মোস্তাফিজুর রহমান একই বক্তব্য প্রদান করলেও পরে রহস্যজনক কারণে ভোল পাল্টান। যদিও প্রথম দিন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছেও মোস্তাফিজুর একই বক্তব্য দেন।

কিন্তু একদিন পর মোস্তাফিজুর রহমান ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে লিখিত বক্তব্যে স্বাক্ষর করেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ওই খামে টাকা ছিল। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, একটি মহল মোস্তাফিজুর রহমানকে ভয় দেখিয়ে লিখিত জবানবন্দিতে স্বাক্ষর করে নেয়া হয়েছে। মূলত পুরো ঘটনায় ওসি মাহবুব আলমকে ফাঁসাতে মোস্তাফিজুর রহমানকে বলির পাঠা বানানো হয়েছে।

অপরদিকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওসি মাহবুব আলমকে বাঁশপাতার একটি বড় খাম দেয়া হচ্ছে। মূলত কেউ কাউকে টাকা দিলে ছোট খাম ব্যবহার করা হয়। আর বড় খাম ব্যবহার করা হয় কাগজপত্র দেয়ার ক্ষেত্রে। ওসি মাহবুবকে দেয়া বাঁশপাতার খামটি ছিল বড়।

এ ব্যাপারে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সেদিন কে বা কারা ভিডিও করেছে সেটি আমি জানি না। আমি যে খাম দিয়েছি সেই খামে কাগজপত্র ছিল, টাকা ছিল না। পরে খামে টাকা থাকার বিষয়টি জবানবন্দিতে কেন বললেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জবানবন্দীতে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।

চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম বলেন, যখন খামটি মোস্তাফিজুর রহমান আমাকে দিয়েছেন তখন আমার রুমে অনেক লোকজন ছিলো। তিনি যে খাম দিয়েছেন সেটি পরে দেখেছি। সেখানে কাগজপত্র ছিল। তিনি বলেন, আমার রুমে অনেক লোকজন থাকায় ওই মুহূর্তে খামটি না খুলে ড্রয়ারে রেখেছিলাম। পরিকল্পিত ও সাজানো গোছানোভাবে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

এ ব্যাপারে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘চন্দ্রিমা থানার ওসির খাম লেনদেনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ডিসি ঘটনাটির তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষ হলে বলা যাবে খামে কি ছিল, টাকা না কাগজপত্র।

 

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর