চট্টগ্রামে ঈদের আগে দোকান-মার্কেট-শপিংমল খুলবে না

কেবল অভিজাত শপিংমল কিংবা সেন্ট্রাল এসি মার্কেটই নয়; চট্টগ্রামের সব ধরনের মার্কেট শপিং মল দোকানপাট ঈদের আগে না খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শনিবার দুপুরে সিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ মাহাবুবর রহমানের সঙ্গে বৈঠক শেষে নানা আলোচনার পর ঐকমতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

এতদিন ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খোলার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসলেও চট্টগ্রামে প্রতিদিন করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া, মার্কেট খোলার বিষয়ে পুলিশ কমিশনার প্রদত্ত ‘কঠোর’ নির্দেশনাবলী শতভাগ বাস্তবায়ন অসম্ভব হওয়াসহ নানা কারণে ব্যবসায়ীরা এই দাবি থেকে সরে এসেছেন। তাদের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার।

এ ছাড়া দেরিতে হলেও ব্যবসায়ীদের বোধোদয় হওয়ায় সাধারণ মানুষও তাদের সাধুবাদ জানিয়েছেন।

এর আগে শুক্রবার চট্টগ্রামের অভিজাত মিমি সুপার মার্কেট, স্যানমার ওশান সিটি, ইউনুস্কো সেন্টার, শপিং কমপ্লেক্সসহ ১১ টি অভিজাত মার্কেট ও বিপণী বিতান ঈদের আগে না খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব মার্কেটের মালিক-কর্তৃপক্ষ বৈঠক করে তাদের এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। কিন্তু নগরীর নিউ মার্কেট, টেরি বাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার, জহুর হকার মার্কেটসহ অন্যান্য মার্কেট খোলা রাখা হবে কি হবে না এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। কারণ এই তিনটি মার্কেটেই রয়েছে অন্তত ২০ হাজার দোকান।

এসব মার্কেটের ব্যবসায়ী নেতারা সিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে শনিবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা ছিল। শনিবার সিএমপি কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে নির্ধারিত বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তারা চলমান সংকটময় মুহূর্তে ঈদের আগে দোকানপাট না খোলার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেন।

ওই বৈঠকে দোকান মালিক সমিতি, নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি, টেরিবাজার বাজার ব্যবসায়ী সমিতি, তামাকুমুন্ডি লেন বণিক সমিতি, মেট্রোপলিটন শপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঈদের আগে দোকানপাট খোলার। সরকারও ১৬ মে থেকে দোকানপাট খোলার ঘোষণা দেয়। কিন্তু চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের আমরা বলেছি, দোকানপাট ১০ মে থেকে খোলা যাবে কিন্তু করোনা থেকে রক্ষায় মার্কেটে মার্কেটে জীবাণু নিরোধক ব্যবস্থাসহ সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য বেশ কয়েকদফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা এখন পরিস্থিতি বুঝতে পেরে দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। এই সিদ্ধান্তকে আমি সাধুবাদ জানাই।’

বৈঠক প্রসঙ্গে টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান বলেন, ‘সিএমপি থেকে মার্কেট খোলা রাখার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয় তা বাস্তবায়ন অনেকটাই কঠিন। ভোটার আইডি কার্ড, পাসপোর্ট নিয়ে বাসার দুই কিলোমিটারের মধ্যে মার্কেটে যাওয়া, দোকানের অভ্যন্তরে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখা, ক্রেতা-বিক্রেতার শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করাসহ যেসব শর্ত দেওয়া হয় তা প্রতিপালন কখনও সম্ভব না। তাছাড়া প্রতিদিনই চট্টগ্রামে করোনা রোগী বাড়ছে, এতে মার্কেট খোলা হলে কেবল ক্রেতা নয়; বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরাও স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

তিনি বলেন, সবদিক বিবেচনা করেই আমরা দোকানপাট না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ কথা সিএমপি কমিশনারকেও জানিয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ খুরশীদ আলম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। তাই ব্যবসায়ী ও ক্রেতার সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয় বিবেচনা করে তারা ঈদের আগে দোকানপাট না খোলার সিদ্ধান্ত নেন। তবে নিউ মার্কেট আপতত সাধারণ ছুটি (১৬ মে ) পর্যন্ত খুলবে না। এর পরে আবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে।

জোবেদা বেগম নামে কুসুমপুরা স্কুলের এক শিক্ষিকা বলেন, ‘দেরিতে হলেও ব্যবসায়ীদের বোধোদয় হয়েছে। তারা দোকানপাট না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেবে বলে মনে করি। সূত্র: যুগান্তর