ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করেন জালু মিয়া

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

ঘোড়ার পিঠে চড়ে বিয়েবাড়ি বা যুদ্ধে যাবার মতো ঘটনা সচরাচর শোনা গেলেও ভিক্ষা করার কথা শোনা যায় না। এলাকাবাসী জালু মিয়াকে কৌতুকের ছলে বলেই ফেলেন ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ ভিক্ষায় চলিল’।

ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করা এমন এক ভিক্ষুক ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাঁচড়া ইউনিয়নের চর গঙ্গাপুর গ্রামের জালাল ওরফে জালু মিয়া। জালু মিয়ার এমন রাজকীয় ভিক্ষাকাণ্ড নিজের এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করেই সংসার চালান তিনি। একপর্যায়ে হাঁটার কষ্ট লাগবে ভিক্ষা করতে পরিকল্পনা করেন ঘোড়া কেনার। তাই ভিক্ষার টাকা জমিয়ে ও নিজের একটিমাত্র বাছুর গরু বিক্রি করে ১৩ হাজার টাকা দিয়ে করোনার শুরুতেই স্থানীয় দরুন বাজারের মো. স্বপন মৃধার কাছ থেকে একটি ঘোড়া কেনেন। এরপর জালু মিয়া ঘোড়ার পিঠে চড়ে গ্রামসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের হাট-বাজারে ভিক্ষা করে যাচ্ছেন। ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করায় স্থানীয়দের কাছে জালু মিয়া রাজকীয় ও জমিদার ভিক্ষুক নামে পরিচিতি লাভ করেছেন।

অন্যদিকে তার স্ত্রী শাহানুর বেগমও গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি ও বাজারে ভিক্ষা করেন।

সরেজমিন জানা গেছে, ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাঁচড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের চর গঙ্গাপুর গ্রামের মটবাড়িতে ১ শতাংশ জায়গায় একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন জালাল ওরফে জালু মিয়া ও তার স্ত্রী শাহানুর বেগম। জালু মিয়ার জীর্ণশীর্ণ দেহ। কিছুটা কুঁজো হয়ে হাঁটেন। নিজের জায়গা-জমি না থাকায় ওই বাড়ির ঢাকায় বসবাসরত লোকমান হোসেনের জমিতে কোনোরকম একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছেন তিনি। ঝড়-বৃষ্টির দিনে ভিজে যান তারা। তবে ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক না কেন তিনি নিজের ঘর থেকে নড়েন না।

ঘরে গিয়ে দেখা যায়, তার স্ত্রী চুলায় মোটা চাল বসিয়েছেন। অন্য কিছু রান্না করার মতো কিছুই নেই। তিনি জানালেন, ঘরে আর এক পোয়ার (২৫০ গ্রাম) মতো চাল আছে। আগামীকাল ভিক্ষা না করলে উপোস থাকতে হবে।

নিঃসন্তান জালু মিয়া ভিক্ষা করার আগে ঢাকায় ১০ বছর ঝাড়ুদারের কাজ করতেন। কাজ করার ক্ষমতা কমে গেলে জীবিকার তাগিদে স্ত্রীকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন। বেশ কয়েক বছর হেঁটে ভিক্ষা করে এক সময় হাঁটার ক্ষমতাও কমে যায় তার।

মো. জালাল ওরফে জালু মিয়া জানান, কাজ করার ক্ষমতা কমে যাওয়ায় প্রায় ৯-১০ বছর আগে স্ত্রী শাহানুর বেগমকে নিয়ে তাদের ও পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নে হেঁটে ভিক্ষা করতেন। কয়েক বছর এভাবে চলার পর একদিন জালু মিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর সুস্থ হলেও হেঁটে বেশিদূর যেতে পারতেন না। পরে কেনা ঘোড়ার পিঠে চড়ে বোরহানউদ্দিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও হাট-বাজারে গিয়ে ভিক্ষা করেন।

তিনি আরও জানান, তারা দুজনই বয়সের কারণে সপ্তাহে ২-৩ দিনের বেশি ভিক্ষা করতে পারেন না। এতে স্বামী-স্ত্রীর সপ্তাহে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হলেও ঘোড়ার খাবার, নিজের সংসার ও ওষুধ, চিকিৎসায় খরচ করে ঠিকমতো সংসার চলে না তাদের। যার কারণে জমি ও ঘর কিছুই করতে পারেননি।

অন্যদিকে তার বাবা আ. মতলেব জমি-জমা কিছুই রেখে যেতে পারেননি। তারা ৪ ভাই, তিন বোন। ভাইয়েরা দিনমজুরের কাজ করেন।

ভিক্ষা করেন কেন? এ প্রশ্নে জালু মিয়া উল্টো প্রশ্ন করেন, ভিক্ষা না করলে চুরি করতে হতো। সেটা কি ভালো হতো? সরকার নাকি ঘর দেয়, চাল দেয়। আমার চেয়ে গরিব কে। আমি কি একটা ঘর, সরকারি চাল পেতে পারি না?

জালু মিয়ার প্রতিবেশী আমির হোসেন ও মিনারা বেগম জানান, জালু মিয়া ও তার স্ত্রী ভালো মানুষ। তবে মাথায় কিছুটা গণ্ডগোল আছে।

সাঁচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিবুল্যাহ মৃধা জানান, জালু মিয়ার কষ্ট লাগবে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।

বোরহানউদ্দিন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক জানান, জালু মিয়া ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করেন- এ বিষয়টি তার জানা নেই। তবে খোঁজখবর নিচ্ছেন। বর্তমানে সাঁচরা ইউনিয়নে মুজিব বর্ষের ঘর হচ্ছে না। হলে জমিসহ ঘর দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। সূত্র: যুগান্তর