ঘর সাজাতে আসবাবপত্রের পাশাপাশি এখন জিপসামও বেশ অধিকার বহন করছে। আধুনিক জিপসাম ডেকর আভিজাত্য প্রকাশের সাথে নান্দনিকতা প্রকাশ করে। আর বাসস্থানের সৌন্দর্য বর্ধনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এ জিপসাম এবং রুচিবোধের পরিচয়ও বহন করে।
এগুলো খুব মজবুত আর টেকসই; তাই এটি সহজে ভাঙে না বা নষ্ট হয় না। মানসম্মত জিপসাম বহু বছর ধরে তার কার্যকারিতা ধরে রাখে। কারণ বিদেশ থেকে আমাদানিকৃত জিপসাম মেটেরিয়াল দিয়ে ডেকর কার্য সম্পাদন করা হয় ।
জিপসামে অনেক আকর্ষণীয় ডিজাইন থাকে।
ফলে সহজেই ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন ডিজাইনের সিলিং, কর্ণিশ, কর্ণার, আমোদ, ফ্লাওয়ার দিয়ে বিল্ডিং রোম ডেকর করা যায়। এর উপাদান তাপ প্রতিরোধে অসাধারণ। জিপসাম মেটেরিয়েল আলো ও বাতাস থেকে তাপ শোষণ করে; বিশেষ করে যে সব বিল্ডিংয়ের ছাদ এর গরমের কারণে অর্থাৎ শীর্ষ তলায় যারা বসবাস করেন তাদের বাসায় থাকা বেশ কষ্টদায়ক হয়। এসব কষ্টদায়ক বাসায় আরাম আয়েশে জীবন যাপনে জিপসাম সিলিং ডেকর বেশ উপযোগী। জিপসাম বাতাস ঠাণ্ডা করতে খুব কার্যকর আর কক্ষকেও বেশিক্ষণ ধরে শীতল রাখে। তাই এসব বাসায় জিপসাম করে দৈনন্দিন জীবনযাপনকে করে তুলতে পারেন স্বাচ্ছন্দ্যশীল।
হানিফ ইন্টেরিয়রের মালিক আবু হায়াত জানান, এর ফলে ঘরে গরম কম লাগে। এটি প্রথম চাইনিজরা করছে বলে জানান তিনি। মধ্যপ্রাচ্যে এ কাজটি বেশি হয়। আমাদের বাঙ্গালীরা যারা দেশের বাইরে বসবাস করেন তারাই মূলত এদেশে আনেন । জিপসাম থাইল্যান্ডের ক্যামিক্যাল দিয়ে কাজ করা হয়। ঘরের কাজটা ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। তার রুচি পছন্দ বাজেট এসবের ওপর নির্ভর করে। শুধু নকশার জন্য কাজ করলে জিপসামটাই ভালো। ঘরে ফুলের কাজ করলে জিপসাম ভালো হয়। কাঠের ফুলটা তেমন ভালো ফিনিশিং হয় না। এগুলো না ভাঙলে ২০-২৫ বছর টেকসই হয়।
বোর্ড, কাঠ, পাথরে বিভিন্ন নকশা করে এর ভেতর স্পট লাইট বসিয়ে ফলস সিলিং করাতে পারেন। কিংবা বসার ঘরে পুরো ছাদে নকশা না করে শুধু সিলিংয়ের মাঝখানে ঝাড়বাতি বা ফ্যানের ওপরের অংশটুকু ডিজাইনও করে দেখতে পারেন। ছোটঘরে ছিমছাম ছোট আকৃতির নকশা নির্বাচন করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। টিভি বা এলসিডি ইউনিট থাকলে তার ওপরের ছাদটুকুতে ফলস সিলিং ডিজাইন করুন ভালো লাগবে।
এছাড়া ফলস সিলিংকে আকর্ষণীয় করতে বোর্ডের ফাঁকে ব্যবহার করতে পারেন পিভিসি ক্লিয়ার শিট। জিপসাম বোর্ডের ফাঁকে ফাঁকে এনামেল কালার করে সিলিংয়ের সৌন্দর্য বাড়াতে পারেন। চাইলে এনামেল কালারের পরিবর্তে ডেকো পেইন্টও করতে পারেন। শোবার ঘরে বিছানার মাথার দেয়াল ও ছাদের কর্নারে কাঠ বা বোর্ড দিয়ে বিভিন্ন জ্যামিতিক নকশার ফলস সিলিং তৈরি করুন। তাতে কয়েকটি স্পটলাইট দিন।
শুয়ে বই পড়া কিংবা রাতে ডিম লাইটের কাজ বেশ চলবে। আর শোবার ঘরের ছাদের চার কোনায় ও বিছানার ওপরের সিলিংয়ের সঙ্গে মিলিয়ে ফলস সিলিং ডিজাইন করুন। স্পটলাইট রাখুন সেখানেও। আবার গ্লাসপেইন্ট করেও ফলস সিলিংয়ে বসাতে পারেন। এরপর স্পটলাইট দিয়ে আলোকিত করুন।
দেয়ালের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ওয়াল পেইন্ট আর ইলিউশনও করতে পারেন সিলিংয়ে। কখনো ফলস সিলিং আর তুলির আঁচড় একসঙ্গে সৌন্দর্য বাড়ায় সিলিংয়ের। বাচ্চাদের ঘরের সিলিংয়ের জন্য গ্যালাক্সি থিম বেশ জনপ্রিয়। সিলিংয়ে চাঁদ, তারাভরা রাতের আকাশ শিশুদের খুব প্রিয়।
নোভা জিপসাম ডেকরের স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন বলেন, জিপসামের মেটেরিয়াল বা পাউডারগুলো থাইল্যান্ড থেকে ইমপোর্ট হয়। এটি এক ধরনের পাহাড়ি মাটি। থাইল্যান্ডের পাহাড়ি মাটিগুলোকে মেশিনের সাহায্যে বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে প্যাকেটজাত করে এক্সপোর্ট করে। এটি মূলত সৌন্দর্যের জন্য ব্যবহার করা হয়। আগে বোর্ড দিয়ে বিভিন্ন সিলিং বা ডেকোরেশন করা হতো। আর এখন জিপসামের কদরটা একটু বেশি।
জিপসাম মূলত জিপসাম প্লাস্টার অপ প্যারিস। এটা দিয়ে রোগীদের হাত-পা ভাঙলে প্লাস্টার করা হয়। বোর্ড দিয়ে সিলিং করলে অনেক সময় জোড়াগুলো ফেটে যায়; কিন্তু জিপসাম দিয়ে করলে ফাটার সম্ভাবনা থাকে না। তবে এতে আবার পানিতে সমস্যা । হালকা পাতলা পানি লাগলে তেমন কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সবসময় পানি পড়তে থাকলে এতে সমস্যা হয়। এটি ন্যাচারালি সাদা। তবে গ্রাহকের পছন্দানুযায়ী বিভিন্ন রঙিন কাজ করা হয়। জিপসাম ফায়ার প্রুফ। ইন্টেরিয়র ডিজাইনে কাঠের ব্যবহার অনেক আগে থেকেই বেশি।
বাংলাদেশে জিপসামের কাজ শুরু হয় ২০০১ সালের দিকে। ২০০৫ সাল পর্যন্ত মানুষ তেমন একটা চিনত না। ২০১০ সাল থেকে মানুষ এর সাথে কিছুটা পরিচিত হয়ে উঠে। এখন এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক। নকশার বিষয় মাথায় রাখলে সেটা অবস্যই জিপসাম দিয়ে কাজ করাতে হবে বলে জাকির হোসেন মনে করেন। খরচটা হাতের নাগালের মধ্যেই বলে তিনি জানান। কাঠ বা বোর্ডের চেয়ে জিপসামের খরচটা বেশ কম হবে বলে তিনি বলেন। ডিজাইন ভেদে জিপসামের দাম স্কয়ার ফিট ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা; আর কাঠের খরচ পড়বে ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা স্কয়ার ফিট।
টিপস: ১। ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে প্রথমেই বিবেচনায় রাখুন বাজেট।
২। তারপর রুচি অনুযায়ী থিম ও মোটিফ নির্বাচন।
৩। সিলিংয়ের সঙ্গে ঘরের ফার্নিচার ও অন্যান্য সাজের সমন্বয় থাকাটা জরুরি। কাঠ, জিপসাম, বোর্ড বা কাঁচ যেটাই ব্যবহার করেন না কেন খেয়াল করুন- সেটা যাতে আপনার রুচিবোধের সাথে যায়।
সূত্রঃ যুগান্তর