গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে হত্যায় কানাডায় হিট স্কোয়াড, অভিযোগ প্রত্যাখ্যান সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 

সৌদি আরবের নির্বাসিত সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাদ আল জাবরিকে হত্যা করতে কানাডায় হিট স্কোয়াড বা খুনি বাহিনী পাঠানোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। সাদ আল জাবরি তিন বছর আগে পালিয়ে কানাডায় আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এতে তিনি দাবি করেছেন, তাকে হত্যা করার উদ্দেশে কানাডায় হিট স্কোয়াড পাঠিয়েছিলেন প্রিন্স মোহাম্মদ। কারণ, সৌদি আরবের অনেক গোপনীয় তথ্য জানেন জাবরি। এ জন্য তাকে হত্যা করতে চেয়েছেন প্রিন্স মোহাম্মদ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে আরো বলা হয়, সৌদি আরবের শাসনের মূলে এখন দেখা হয় ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে।

তিনি বলেছেন, জাবরি নিজেই তার অপরাধ স্বীকার করেছেন। তিনি আরো দাবি করেছেন, রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে তিনি বিচার থেকে দায়মুক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আদালতে সাধারণত বিদেশী নেতারা দায়মুক্তির সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু প্রিন্স মোহাম্মদের বিরুদ্ধে জাবরি মামলা করেছেন এলিয়েন টোর্ট স্ট্যাটু এবং ১৯৯১ টর্চার ভিকটিম প্রটেকশন অ্যাক্টের অধীনে। এ আইনের অধীনে বিদেশী নাগরিকদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা করা যায়। প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের আইনজীবীরা বলেছেন, জাবরির অভিযোগ এক নাটক। তিনি ক্রাউন প্রিন্সকে শেক্সপিয়ারের সেরা অন্যতম একজন ভিলেনের মতো করে পরিচিত করার চেষ্টা করছেন। এই মামলার মেরিট বিবেচনা করলে এতে ব্যর্থ অভিযোগ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৬১ বছর বয়সী সাদ আল জাবরি সৌদি আরবের একজন গুরুত্বপূর্ণ সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। বহু বছর ধরে সৌদি আরবের পক্ষে বৃটেনের এমআই৬ এবং পশ্চিমা অন্য গোয়েন্দা এজেন্সির মধ্যে সৌদি আরবের যে সম্পর্ক তার মূলে ছিলেন তিনি। ফলে স্বাভাবিক কারণেই তিনি সৌদি আরবের স্পর্শকাতর অসংখ্য গোয়েন্দা তথ্য, সরকারি নীতি, পররাষ্ট্র বিষয়ক কৌশল ইত্যাদি সম্পর্কে ভালভাবে অবগত। তিনি আগস্টে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন ডিসিতে ১০৬ পৃষ্ঠার অভিযোগ এনে মামলা করেছেন। এতেই তিনি দাবি করেছেন, তিনি সৌদি আরবের মুখ নিচু হয়ে যেতে পারে এমন সব তথ্য জানেন বলে তাকে হত্যা করতে খুনি মিশন পাঠানো হয়েছিল। এতে বলা হয়েছে, ক্রাউন প্রিন্সের ব্যক্তিগত দুর্নীতি ও তা দেখাশোনা করা একটি ভাড়াটে দল, যাদেরকে টাইগার স্কোয়াড বলা হয়, তারা ছিল ওই মিশনে। ২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনসুলেটের ভিতরে হত্যা করা হয় সৌদি আরবের ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে। এই হত্যা মিশনে জড়িত এই টাইগার স্কোয়াডের সদস্যরা। জাবরি অভিযোগ করেছেন, তিনি ২০১৭ সালে পালিয়ে কানাডা চলে গিয়েছেন। তারপর তাকে দেশে ফেরানোর জন্য বার বার চেষ্টা করেছেন প্রিন্স মোহাম্মদ। তারপর জামাল খাসোগি হত্যার কমপক্ষে দু’সপ্তাহ পরে ওই টাইগার স্কোয়াড কানাডা সফর করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল তাকে হত্যা করা। আদালতের অভিযোগে বলা হয়েছে, জামাল খাসোগির দেহকে টুকরো টুকরো করার দায়ে অভিযুক্ত বিভাগের একজন সদস্য ছিলেন এই মিশনে। তিনি ফরেনসিক টুলস সহ দুটি ব্যাগ বহন করছিলেন। দ্রুত ওই গ্রুপটি সম্পর্কে সচেতন হয়ে পড়ে কানাডার সীমান্ত বিষয়ক এজেন্ট। কিন্তু তাদের সাক্ষাতকার নেয়ার পর তাদেরকে দেশে প্রবেশ করতে দেয়নি তারা।
এর জবাবে আদালতে নতুন ফাইল জমা দিয়ে প্রিন্স মোহাম্মদ বলেছেন, জাবরি আসলে নিজের অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন। জাবরি ও তার সহযোগীরা সরকারি ১১০০ কোটি ডলারের তহবিল অপব্যবহার করেছেন অথবা চুরি করেছেন। তবে এ অভিযোগ জাবরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রিন্স মোহাম্মদের ফাইলে দাবি করা হয়েছে, একটি বড় ধরনের চুরি ধামাচাপা দেয়ার জন্য দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্রাউন প্রিন্স হলেন সৌদি আরবের বাদশা সালমানের ছেলে এবং তার উত্তরাধিকার। রাজার সঙ্গে তিনি সৌদি আরবে সরকার পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে যেকোনো অভিযোগ বা মামলা থেকে তিনি স্ট্যাটাসগত দিক দিয়ে দায়মুক্ত।
কে এই সাদ আল জাবরি
অনেক বছর ধরে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফের ডানহাত বলে পরিচিত ছিলেন জাবরি। প্রিন্স নায়েফকে ব্যাপকভাবে ২০০০-এর দশকে আল কায়েদার উত্থান পরাজিত করার কৃতীত্ব দেয়া হয়। ‘ফাইভ আইস’ বলে পরিচি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কের মূলে ছিলেন জাবরি। তিনি একজন মন্ত্রীর পদমর্যাদায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি মেজর জেনারেল পদবীধারী ছিলেন। কিন্তু ২০১৫ সালে সব উল্টেপাল্টে যায়। এ বছর মারা যান বাদশা আবদুল্লাহ। তার সৎভাই সালমান ক্ষমতায় আসীন হন। তিনিই প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিজের ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে বসান। ২০১৭ সালে তিনি এক রক্তপাতহীন প্রাসাদ ষড়যন্ত্র করেন। এতে তার পিতার সমর্থন ছিল। তিনি ক্ষমতার পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে দিয়ে নিজে ক্রাউন প্রিন্স হন। প্রিন্স নায়েফের পক্ষে যারা কাজ করতেন বা যারা তার অধীনে ছিলেন তাদের সবাইকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এ সময়েই কানাডায় পালিয়ে যান জাবরি।

সূত্র: মানবজমিন