গোমাংস বিতর্কে হত্যার ঘটনায় আটক ব্যক্তির মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ভারতের উত্তরপ্রদেশে গোমাংস খাওয়ার অভিযোগ ছড়িয়ে এক মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় গ্রেফতার এক যুবক জেল হেফাজতে মারা যাওয়ার পরে সেখানকার পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, জারি রয়েছে একসঙ্গে বেশি মানুষ জমায়েত হওয়ার ওপরে নিষেধাজ্ঞা।

 

দিল্লি লাগোয়া গৌতম বুদ্ধ নগর জেলার দাদরিতে গতবছর মুহম্মদ আখলাখ নামের ৫০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি গোমাংস খেয়েছেন, এই অভিযোগ তুলে তাকে পিটিয়ে মারা হয়েছিল।

 

ওই ঘটনার পরে সারা দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার পরিবেশ ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছিল উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে। যুক্তিবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে দাঁড়িয়ে একের পর এক লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক নিজেদের জাতীয় পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

 

মি. আখলাখকে গণপিটুনিতে মেরে ফেলার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন বিসাড়া গ্রামের ১৮ জন। এদেরই একজন রবিন সিসোদিয়া, জেল হেফাজতে থাকাকালীনই দিল্লির একটি হাসপাতালে মারা যান মঙ্গলবার।

 

তার মৃতদেহ বৃহস্পতিবার গ্রামে নিয়ে আসা হয় ভারতের জাতীয় পতাকা লাগানো একটি কফিনে।

 

মি. সিসোদিয়ার পরিবারের অভিযোগ জেল হেফাজতে অত্যাচারের ফলেই মারা গেছেন তিনি।

 

‘হিন্দু মূল্যবোধ’ রক্ষা করতে গিয়েই তিনি মারা গেছেন, তাই ‘শহীদ’-এর মর্যাদা দেওয়ার দাবি তুলছেন গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ।

 

জাতীয় পতাকা দিয়ে মৃতদেহ ঢাকা দেওয়া দেখেও উপস্থিত পুলিশ আর প্রশাসনিক কর্তারা চুপ করে ছিলেন বলে জানাচ্ছে সংবাদ সংস্থা পি টি আই।

 

ওই সময়ে জাতীয় পতাকার অবমাননা নিয়ে কিছু বলতে গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যেত বলেই পি টি আইকে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

 

পুলিশ অবশ্য বলছে কিডনি আর শ্বাসযন্ত্র বিকল হয়ে গিয়েই মৃত্যু হয়েছে ওই অভিযুক্তের। তিনি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে মনে করছে পুলিশের একাংশ।

 

মৃতের পরিবার পুলিশের এই বক্তব্য মানতে নারাজ। মি. সিসোদিয়ার ভাই ভিকি জানিয়েছেন, “ভাইয়ের শরীর ঠিকই ছিল। ওকে জেলের ভেতরে আলাদা সেলে রেখে ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। তাতেই মারত্মক জখম হয়েছিল ও।”

 

উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ঘটনাকে নিয়ে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে শুরু করেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো।

 

স্থানীয় বি জে পি নেতা এবং অন্য আরেক ধৃত যুবকের বাবা সঞ্জয় রাণা বলছেন, “এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ আর নিহত মি. আখলাখের ভাইয়ের গ্রেপ্তারি আর অন্যান্য ধৃতদের মুক্তির দাবিও তোলা হয়েছে গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে। ওই জেলারকেও গ্রেপ্তার করতে হবে।”

 

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতৃত্ব আর উগ্র হিন্দুবাদী নেত্রী সাধ্বী প্রাচী বিসাড়া গ্রামে গিয়ে ভাষণ দিয়ে এসেছেন বৃহস্পতিবারই।

 

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব রবিন সিসোদিয়ার পরিবারকে দশ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।

 

একই সঙ্গে সরকার একটি ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তও শুরু করেছে। অন্যদিকে গ্রামবাসীদের শান্ত করতে যে কারাগারে মি. সিসোদিয়া বন্দী ছিলেন, তার জেলারকে লখনউতে বদলিও করে দিয়েছে সরকার।

 

“মৃতের পরিবার যদি তদন্তে সন্তুষ্ট না হন, তাহলে সি বি আইকে দিয়ে তদন্ত করাতেও রাজি হয়ে যাবে প্রশাসন,” বলছেন গৌতম বুদ্ধ নগরের জেলা শাসক এন পি সিং।

সূত্র: বিবিসি বাংলা