‘গোপন কথাটি কবরে নিয়েই চিরকালের জন্য চলে গেলেন’

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

সংগীতাঙ্গনে আবারও শোকের ছায়া। রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদের মৃত্যুর শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি শোবিজ পরিবার। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় খবর এল না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা খালিদ। তার মৃত্যুতে শোকাহত সহশিল্পী থেকে সাধারণ শ্রোতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খালিদকে নিয়ে কথা বলেছেন প্রবীণ শিল্পী থেকে শুরু করে এই সময়ের শিল্পী, সুরকার, গীতিকাররাও।

খালিদের চাইম ব্যান্ডের সতীর্থ সংগীত পরিচালক আশিকুজ্জামান টুলু লিখেছেন, ‘ভালো থাকিস’।

রকস্টার জেমস লিখেছেন, ‘সে যে হৃদয় পথের রোদে/ একরাশ মেঘ ছড়িয়ে/ হারিয়ে গেল নিমিষেই।’

মাইলস ব্যান্ডের কিবোর্ডিস্ট মানাম আহমেদ লিখেছেন, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন। মহান আল্লাহ পাক বন্ধু খালিদের বিদেহী আত্মাকে জান্নাত-উল-ফেরদৌস নসিব করুন এবং শোকাসন্তপ্ত পরিবারের সকলকে ধৈর্য্য ধরার তৌফিক দিন। আমিন।’

বরেণ্য গীতিকার-সুরকার প্রিন্স মাহমুদ লিখেছেন, ‘কোনো বাঁধনেই বাঁধা তো গেল না কিছুতেই’।

নজরুলসংগীত শিল্পী সুজিত মোস্তফা লিখেছেন, ‘আহারে খালিদ। আশির দশকের শুরুতে টিএসসির সাংস্কৃতিক অঙ্গন যখন আমরা ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছি তখন খালিদ প্রায়ই আসত আমাদের টিএসসির আড্ডায়। সে ব্যান্ডের গায়ক কিন্তু আমাদের ধারার গানগুলো সে অবলীলায় এবং ভারী মিষ্টি সুরেলা কন্ঠে গাইতো। সহজে মিশতো সবার সঙ্গে। আমরা যারা রবীন্দ্র, নজরুল, ফোক বা বেসিক বাংলা গান করি, আমরা কখনোই ওকে আমাদের থেকে আলাদা কেউ ভাবতে পারিনি। খালিদের চাইম ব্যান্ড তখন আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং সে যে দীর্ঘস্থায়ী আসন নেবে সেটাও কেন জানি আমাদের মনে হয়েছিল। সেই খালিদ আজকে চলে গেল। কেন এই অকাল প্রয়াণ আমি জানি না। সেও কি অনেক অভিমানে আমাদের ছেড়ে গেল?’

ফেসবুকে ডুয়েট একটি ছবি শেয়ার করে অবসকিওর ব্যান্ডের গায়ক সাইদ হাসান টিপু লিখেছেন, ‘বিটিভিতে দেখা, বলেছিলাম খালিদ ভাই আপনার সঙ্গে আমার কোনো ছবি নাই। সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন। প্রিয় মানুষের বিদায় মেনে নিতে কষ্ট হয়। ভালো থাকবেন ভাই।’

খালিদের ছবি পোস্ট করে গায়ক শুভ্রদেব লিখেছেন, ‘গত মাসেই দেশ টিভিতে খালিদের লাইভ অনুষ্ঠান ছিল, সেইখানে আমি ফোন করে খালিদের সঙ্গে কথা বলি সেটাই ছিল আমার সঙ্গে ওর শেষ কথা। ওর গানের প্রশংসা করাতে বলেছিল “বন্ধু আমারে আর কান্দাইস না”। লাইভে অনেক দরদ দিয়ে গানগুলো গায়ছিল খালিদ। অনেক বছরের বন্ধুত্বের সম্পর্ক আমাদের। চাইমের টুলু আমার অনেক পুরোনো বন্ধু। সেই সময় টিএসসিতে অনেক সময় আমরা একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছি, খালিদও আসত। একবার খুলনায় আমরা একসঙ্গে কনসার্টও করেছিলাম। ওর গানের বিশেষত্ব ছিল- ও অনেক সুরে গান গাইতো আর তাই পেয়েছিল জনপ্রিয়তা। খুব আধুনিক পোশাক, ব‍্যান্ড রিস্ট ওইগুলোর প্রতিছিল খালিদের আকর্ষণ। সবকিছু সরলভাবেই দেখত, মনটা ছিল অনেক ভালো। কিন্তু নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি ছিল উদাসীন। আজ খালিদ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তার গান বেঁচে থাকবে আমাদের মাঝে চিরদিন গোলাপের গন্ধের মতোন মিষ্টি এক অনুভব অনুভুতি নিয়ে। খালিদের অভাব অপূরণীয়। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। যেখানেই থাকো ভালো থেকো বন্ধু।’

পপতারকা তিশমা লিখেছেন, ‘শ্রদ্ধেয় খালিদ ভাই, আপনি কোনো একটি রহস্যময় গোপন কথা আমাকে বলার জন্য খুবই অস্থির হয়ে ছিলেন। বরাবরের মতো “পরে শুনব” বলে আমি গায়েব হয়ে গেলাম সেই কতদিনের জন্য। মানলাম- আমার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করতে চাইলে, আমাকে খুঁজে পাওয়াটাই বেশ কঠিন একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তবে আমি ভাবতেও পারিনি যে আপনি হঠাৎ করে আর এই জগতেই থাকবেন না, বিদায় নেওয়ারও সুযোগ থাকবে না। আপনারে সেই গোপন কথাটি কবরে নিয়েই চিরকালের জন্য চলে গেলেন, আজীবন সেটি একটি রহস্য হয়েই থেকে গেল আমার কাছে, আর কখনোই বলতে পারবেন না। ওপারে ভালো থাকবেন খালিদ ভাই। এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে পুরো সংগীত ইন্ডাস্ট্রি বিধ্বস্ত। আপনাকে সকলেই ভয়ানকভাবে মিস করবেন। শান্তিতে বিশ্রাম নিন, প্রিয় বড় ভাই।’

ব্যান্ড সংগীতের বরেণ্য শিল্পী খালিদকে হারিয়ে শোকাচ্ছন্ন গোটা শোবিজ অঙ্গন। প্রিয় শিল্পীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন আসিফ আকবর, লতিফুল ইসলাম শিবলী, বাপ্পি খান, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, বিজরী বরকতউল্লাহসহ অনেকে।