গোদাগাড়ীতে বিদ্যুতের বিড়ম্বনা: দূর্ভোগ চরমে

আব্দুল বাতেন:
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রেটি এখন নানা অনিয়ম, দূর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সময়ের পেক্ষাপটে বিদ্যুতের ঘনঘন লোডশেডিং এর কারণে যখন সাধারণ জনগন বিদ্যুৎ অফিসের উপর ক্ষুদ্ধ তার সাথে সাথে অফিসের নানান অব্যবস্থাপনা গোদাগাড়ী উপজেলার বাসীর কাছে অসহনীয় হয়ে পড়েছে। যে কোন সময় গোদাগাড়ী উপজেলা বাসী বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করে অরাজকতার পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

যে কোন বিপদ আপদে জরুরী প্রয়োজনে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকার করনে অফিসে যোগাযোগের জন্য অফিসে ব্যবহৃত টেলিফোন নম্বরটিও ১০ দিন যাবৎ বিকলের অজুহাত দেখিয়ে আসছে বিদ্যুৎ অফিস টি। আর টেলিফোনটি সচল থাকলেও দায়িত্বরত কর্মকর্তা কর্মচারিরা ঠিকমত টেলিফোন রিসভ না করা ও বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাথে সাথে রিসিভার তুলে রেখে রাতের বেলা ঘুমিয়ে থাকার রয়েছে নানান অভিযোগ।

জরুরী প্রয়োজনে দিনে বা রাতে বিদ্যুৎ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ অহিদুর রহমান ঝন্টু, সহকারি প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ, উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোঃ নুরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল দিলেও ঠিক মত ফোন ধরেন না। বেশির ভাগ সময়েই টেলিফোন রিসিভার তুলে গ্রাহণ ও সাধারণ জনগণ বিদ্যুতের সমস্যার কথা জানতে চাইলেও গ্রাহকদের সাথে অশালিন ব্যবহার করেন অফিসের কর্মচারীরা। আর এসব কারণে একাধিকবার বিদ্যুৎ অফিসের কর্মচারীদের কে পিটুনী ও বিদ্যুৎ অফিসের ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটেছে।

এলাকাবীবাসী অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান সময়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং এতটাই অসহনীয় হয়ে পড়েছে যে যা অকল্পনীয়। দিনে ও রাতে সমান তালে বিদ্যুৎ টেনে রাখায় কোন কাজ কর্মই স্বাভাবিক ভাবে করতে পারছেনা কেউ। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে দেড় দুই ঘণ্টা আসার নাম কথা থাকে না। আবার আসলেও আধাঘন্টার মধ্যেই টেনে নেয়। সরাদিন কাজকর্ম শেষে যখন মানুষ বাড়ী ফিরে একটু আরাম আয়েশ করে ঠিক তখন বিদ্যুৎ চলে যাওয়াই সেই আরামটিও বিফলে চলে যাই। সেই সাথে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মারাত্মক ক্ষতিও হচ্ছে বলে অভিভাবক মহল অভিযোগ করেন।


গোদাগাড়ী কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী রুনা খাতুন বলেন, আগামী মাসের ৪ তারিখ হতে প্রথম বর্ষের পরীক্ষা কিন্তু গরমের সময়ে বিদুৎ দিনে ও রাতে সামান তালে না থাকায় পড়তে পারছিনা। পরীক্ষা খারাপ হতে পারে বলে মনে করেন। একই অভিযোগ অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলের।

মসজিদের মুসল্লি মোঃ শাহিনসহ কয়েকজন অভিযোগ করেন, নামাজ ও আযানের ঠিক সময়ে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া শুভ লক্ষণ নয় এতে করে জনগণ ফুঁসে উঠছে। মসজিদের মুসল্লিরা যে কোন সময় বিদ্যুৎ অফিস ঘোরাও করতে পারে গোদাগাড়ীতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদুতের দাবিতে। বিদ্যুতের এত উন্নয়ন যে প্রচার সরকার করছে কিন্তু কোন সুফল না পাওয়াই সরকার এই বিদ্যুতের কারনেই বেকায়দায় পড়তে পারে বলে মনে করেন। প্রায় মাস খানেক আগে গোদাগাড়ী হানাফিয়া দ্বোতলা জামে মসজিদের মুসল্লিরা ফজরের নামাজ শেষে বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করতে গেলে ভেতর থেকে গেট লাগিয়ে দেয় কর্মচারিরা।

এছাড়াও গভীর রাতে ঘনঘন বিদ্যুৎ টানা সেই সময়ে অফিসের টেলিফোন নম্বরে প্রায় বিশ হতে ২৫ বার কল দিয়ে রিসিভ না করায় স্থানীয় দুই যুবক সকালে অফিসে এসে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে তাদের সাথে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে।

গত রোববার রাতে মাটিকাটা স্কুলের পার্শ্বে বিদু্যুতের তার ছিঁড়ে পরে যাওয়ায় বিদ্যুৎ অফিসের টেলিফোনে ফোন করে তাতে কল ঢুকাতে পারেনি। আবার কর্মকর্তা কর্মচারীদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও কেউ রিসিভ করে নি। মাটিকাটা গ্রামের তরিকুল ইসলাম কালু অভিযোগ করে বলেন, আমার এলাকায় বিদ্যুতের তার পড়ে যাওয়াই যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কিন্তু বিদ্যুৎ অফিসের কোন মাথাবাথা নেই।

বিদ্যুৎ অফিসের বেশীর ভাগ কর্মকর্তা কর্মচারী স্থানীয় হওয়াই অফিসের দূর্নীতির চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে। তারা স্থানীয় গ্রাহক ও জনসাধারণের সাথে খুবই খারাপ ব্যাবহার করে আসছে। আর মাস্টার রোলের কর্মচারীদের দাপট আরো বেশী বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

এছাড়াও মিটার রাইটারেরা বিদ্যুৎ বিল অফিসে বসে থেকে বিল প্রস্তুত করায় মাত্রারিক্ত বিল বাড়ীতে পাঠিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। সরমংলা গ্রামের ইব্রাহিম বলেন, আমার বাড়ীতে মাত্র একটি ফ্যান ও চারটি বাল্ব ব্যবহার করি কিন্তু গত মাসের বিল ১২শ’ টাকা করেছে যা ব্যবহার হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন আমার মিটারে রিডিং যা উঠে আছে তার চাইতে দেড়শ ইউনিট বেশী করে লিখে বিল পাঠিয়েছে যা অত্যন্ত হাস্যকর।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে মাস্টার রোলের (দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে) কর্মচারীদের দাপটে অফিসে অফিস জিম্মি হয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মচারী সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, গোদাগাড়ীর স্থানীয় কর্মচারী মিটার পাঠক,আশরাফ আলী গুড্ডা, বাবু, ইতি, সাদেকুল, এনামুল,সাইফুদ্দিন, বিল বিতরণকারী, মফিজ, খাবির, মোফা। টেকনেশিয়ান মিঠন, শরিফুল, তুহিন, মোয়াল্লান , রুবেল, আইয়ুব, সুহান, শফিক এরা ঠিক মত ডিউটি পালন করে না। বসে বসে থেকে থেকে বিল প্রস্তুত করে । বিল বেশী প্রস্তুত করে গ্রাহকরা যখন অতিষ্ঠ হয় তখন তাদের শরাপন্ন হলে টাকার বিনিময়ে পরের মাস হতে বিল কম দেয়।

তিনি বলেন, টেকনিশিয়ানের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা গ্রাহকদের লাইনের সমস্যা খাতায় এন্ট্রি করলে সময় মত যাই না। গেলে গ্রাহকদের কাছ হতে বেশী টাকা দাবি করেন। বিদ্যুৎ অফিসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনার সদস্যরাও দূর্ণিতিতে জড়িয়ে পড়েছে তারা বিদ্যুৎ এর লইন দেওয়ার নাম করে টাকা আদায় করে থাকে। এই অফিসেরই বড় বাবু নামে পরিচিত দুরুল হুদা গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন আটকে রেখে টাকা দাবি করে নইলে ফাইল চালায় না।

এছাড়াও রাতে ডিউটি করা অবস্থায় দুইজন উপ-সহকারি রাসেদুল ও নুরুল ইসলাম প্রকৌশলী রাসেদুল ও নুরুল ইসলাম থাকার কথা কিন্তু তারা কেউ থাকে না। এ ক্ষেত্রে রাত্রে বিদ্যুতের বেশী সমস্যা হলে টেকনিশিয়ানদের কাজ করতে চরম অসুবিধা হয় বলে জানান।


আবাসিকে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ অহিদুর রহমান ঝন্টুর থাকার কথা থাকলেও থাকেন না। অফিস সময়ের আগের বের হয়ে রাজশাহী শহরে চলে যাই। একই অভিযোগ সহকারি প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে।

নির্বাহী প্রকৌশলী অহিদুর রহমান ঝন্টু ও সহকারি প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে নিয়ম বর্হিরভূত ভাবে অবৈধ বিদুৎ সংযোগ ও টাকা আদায়ের অভিযোগ আছে। নিয়মিত কর্মচারী সহকারি সেকেন্দারের বিরুদ্ধে গ্রাহক ও সাধারণ মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহারে গুরুতর অভিযোগ আছে।

এর আগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ দায়িত্বে থাকা অবস্থায় স্থানীয় এক যুবকের সাথে খারাপ ব্যবহার করায় বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করে অপসারন দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে সেই সাথে কর্মচারিদের খারাপ ব্যবহারের জন্য জুতা মেরে অপসারণ দাবি করে।

এদিকে গোদাগাড়ীতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর সকালে গোদাগাড়ী নাগরিক কমিটির ৮-১০ জনের একটি প্রতিনিধি দল বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করে অচিরেই বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিং হতে মুক্তির দাবি করেন। আর যদি তা না করা হয় তাহলে বিদ্যুতের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষনার হুশিয়ারি দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গোদাগাড়ী নাগরিক কমিটির সভাপতি শান্ত কুমার মজুমদার।

সার্বিক বিষয়ে গোদাগাড়ী বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অহিদুর রহমান ঝন্টু সিল্কসিটি নিউজকে বলেন,আমরা বিদ্যুৎ দিতে চাই কিন্তু চহিদার তুলনায় আমরা সরবহার না পাওয়ায় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই বিদ্যুৎ সমস্যা জাতীয় গ্রীড হতেই বলে তিনি জানান।

টেলিফোন বিকলের কথা তিনি বলেন আমরা গোদাগাড়ী টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসে ঠিক করার কথা বলেছি কিন্ত এখনো ঠিক হয় নি। ফোন রিসভ না করার কথা বললে তিনি বলেন এখানে কিছু কর্মচারীদের কে বারবার বলেও কোন লাভ হয় না। তবে তিনি মোবাইল রিসিভ করেন বলে দাবি করেন।
স/শ