বুধবার , ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ | ২৭শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

গোদাগাড়ীতে ইজারা বাতিল হলেও খালে নামতে পারছেন না স্থানীয় জেলেরা

Paris
জানুয়ারি ১৭, ২০১৮ ৮:০৫ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে কোটি টাকার মাছে ভর্তি খাল সোয়া লাখ টাকায় ইজারা দিয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। পানি সংরক্ষণের জন্য পুর্নখনন করা সাত কিলোমিটার খালজুড়ে প্রচুর পানি ধরে রেখেছে পাঁচটি ক্রসড্যাম।

অভিযোগ রয়েছে, ইজারা নিয়ে সেই পানিতেই এলাকাবাসীকে নামতে দিচ্ছেন না ইজারাদার। এতে জীবিকা হারিয়েছেন খালপাড়ের ১২ গ্রামের ১০ হাজারের উপরে মানুষ। নামমাত্র মূল্যে খাল ইজারায় মোটা অর্থ লেনদেনেরও অভিযোগ উঠেছে বিএমডিএ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। তবে তা অস্বীকার করছেন ইজারা সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, উপকারভোগীদের দাবির প্রেক্ষিতে বরাদ্দের চারদিনের মাথায় ইজারা বাতিল করা হয়েছে। যদিও এখনো সরেজমিনে গিয়ে খালে ইজারাদারের পাহারা পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, গোড়াগাড়ীর রিশিকুল ইউনিয়নের প্রসাদপাড়া থেকে বিলভর্তি পর্যন্ত সাত কিলোমিটার পর্যন্ত খাল ইজারা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএমডিএ। খালের ৫টি পয়েন্টে রয়েছে পানি সংরক্ষণের ক্রসড্যাম। এক লাখ ২৬ হাজার টাকায় কার্তিক ১৪২৪ সন থেকে কার্তিক ১৪২৭ সন পর্যন্ত তিন বছরের জন্য খালটি লিজ দেয়া হয়েছে।
ইজারাদা পাওয়া রাজধানীর মিরপুরের এসবিডি এগ্রো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ইসলাম আলোচত্র এলাকার বাসিন্দা। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের উদ্দেশ্যে খাল ইজারা নেন তিনি। লিখিত সুপারিশ করে ইজারা পাইয়ে দেন তারই বন্ধু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ নেওয়াজ। খাল ইজারায় সুপারিশ করেন রিশিকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম টুলুও।

বিএমডিএর নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, খাল ইজারা দিতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে পাঁচ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে বিএমডিএ। ওই কমিটিতে ছিলেন- বিএমডিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শামসুল হোদা, নির্বাহী প্রকৌশলী ও রাজশাহী, নওগা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় পুরাতন গভীর নলকূপ পুনর্বাসন প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল লতিফ, বরেন্দ্র বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং সেচ প্রকল্পের (২য় পর্যায়) পরিচালক শিবির আহমেদ, রাজশাহী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান খান এবং গোদাগাড়ীর সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ জিল্লুল বারী।

ওই কমিটি ২৮ সেপ্টেম্বর খাল ইজারার সুপারিশ করেন। ওই সুপারিশ অনুমোদন দেন রাজশাহী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী। এরপর ১৫ নভেম্বর চুক্তি সম্পাদনে গোদাগাড়ী জোন-২ এর সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান। ২৬ নভেম্বর প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান এসবিডি এগ্রো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ইসলামের সাথে চুক্তিতে সই করেন।

স্থানীয়দের ভাষ্য, খালটি দুধাই নদী নামেই পরিচিত। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা থেকে শুরু এ খাল গিয়ে পড়েছে জেলার পবার বাগধানিতে গিয়ে শিবনদীতে। মাঝে রয়েছে দুধাই ও বিলভর্তি বিল। সারাবছর খালের সাত কিলোমিটারজুড়ে পানি থাকে। খালের দুপাড়ে বিল্লি, প্রসাদপাড়া, দিয়াড়প্রসাদপাড়া, আলোকছত্র, খড়িয়াকান্দি, বিলদুবইল, কসিয়া, বারোপুঠিয়া ও বেলপুকুরিয়া গ্রাম। যুগ যুগ ধরে এ খালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে এ ক’ গ্রামের অন্তত: আড়াইশ পরিবার। আর সবমিলিয়ে উপকারভোগী প্রায় ১০ হাজারের উপরে।

স্থানীয়রা জানান, এই খালে বর্তমান ইজারাদার কোন মাছ চাষ করেননি। তবে আটজন পাহারাদার নিয়োগ দিয়েছেন। এর মধ্যে দুজন নিয়মিত টহল দিচ্ছেন খালপাড়ে। খালে প্রাকৃৃৃতিক ভাবে বেড়ে ওঠা মাছ রয়েছে। বন্যায় এলাকার বাণিজ্যিক মাছের খামারগুলো ভেসে এসেছে প্রচুর মাছ। সবমিলিয়ে এসব মাছের দাম প্রায় কোটি টাকা। প্রত্যেক বছর এ সময় মাছ ধরলেও এবার খালে নামতে পারেনি জেলেরা।

খড়িয়াকান্দি খালপাড়ে গিয়ে পাওয়া গেলো ইজারাদারের পাহারাদার হুমায়ুন কবীরকে। তিনি বলেন, সবমিলিয়ে পাহারাদার রয়েছেন আটজন। আপাতত তিনিসহ দুজন পাহারায় কাজ করছেন। মাসিক ৮ হাজার টাকা চুক্তিতে কাজ শুরু করেছেন তিনি। শুরুতেই ইজারাদার পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন। খালে লোকজনের নামা ঠেকানো তার কাজ।

খড়িয়াকান্দি এলাকার বাসিন্দা জামাল হোসেন বলেন, খালটি এতোদিন ছিল উন্মুক্ত। খালের পানি গৃহস্থালিসহ নানান কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করে দেড় মাস আগে খালের বিভিন্ন পয়েন্টে ইজারাদা সংক্রান্ত সাইনবোর্ড দেন ইজারাদার। তা দেখে দরিদ্র কৃষক ও জেলেরা দিশেহারা। খাল ইজারার তীব্র বিরোধীতা করে আসছেন লোকজন। তারা বেশ কয়েকটি পয়েন্টা সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু শুরু থেকেই হুমকি দিয়ে আসছেন ইজারাদার ও তার লোকজন।

ওই গ্রামের জেলে সাজেদ তালুকদার বলেন, বছরজুড়েই তিনি খালে মাছ ধরেন। কিন্তু ইজারা দেয়ার পরে আর খালে নামতে পারেনি তিনি। ফলে বাধ্য হয়ে আড়ৎ থেকে মাছ এসে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। তার মত একই দশা এলাকার অন্তত: আড়াইশ’ জেলের। খালে নামতে না পেরে দুুর্বিসহ দিন পার করছেন তারা।

এনিষয়ে গোদাগাড়ী জোন-২ এর সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খাল ইজারায় উপকারভোগী কৃষক ও মৎসজীবীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। তারা ইজারা বাতিলের ৩১ ডিসেম্বর লিখিত আবেদন দেন। এরই প্রেক্ষিতে ওই দিনই ইজারা বাতিল করা হয়েছে। ইমেইলে ইজারাদারকে তখনই জানিয়ে দেয়া হয়েছে বিষয়টি। এছাড়া পরদিন রেজিস্ট্রি ডাকযোগে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

ইজারা বাতিলের পরও খাল ইজারাদারের দখলে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমনটি হবার সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসময় খাল ইজারায় অর্থ লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

তবে ইজারা বাতিল সংক্রান্ত কোন চিঠি তারা পাননি বলে জানিয়েছেন এসবিডি এগ্রো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ইসলাম অর্থের বিনিময়ে ইজারা পাবার বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি। তবে ইজারা বাতিল সংক্রান্ত বিএমডিএর চিঠির অনুলীপি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম টুলু।

এবিষয়ে কয়েক দফা যোগাযোগ করে বিএমডিএর রাজশাহী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান খানের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে তবে খাল ইজারা নিয়ে আগে কিছুই জানতেননা বলে দাবি করেন বরেন্দ্র বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং সেচ প্রকল্পের (২য় পর্যায়) পরিচালক শিবির আহমেদ।

তিনি বলেন, তারা চেয়েছিলেন সেচে ও গৃহস্থালিতে ব্যবহার ছাড়াও খালে মাছ চাষ করতে। প্রস্তাবনা পেয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ইজারা দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু পরে ওই চুক্তি বাতিল হয়েছে। ফলে খালে এলাকাবাসীর নামতে আর বাধা নেই।

এদিকে, বিএমডিএ জানিয়েছে, বৃষ্টির পানি সরক্ষণ ও সেচ প্রকল্পের আওতায় এ অঞ্চলের ৬০০ কিলোমিটার খাস মজা খাল-খাড়ি পুর্নখনন করবে বিএমডিএ। এর মধ্যে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত পুর্নখনন করা হয়েছে ৫৩০ কিলোমিটার। এ প্রকল্পের বিভিন্ন ধাপে এ অঞ্চলের প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার খাল পুর্নখনন করা হয়েছে।

এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিলো দেশের শুষ্কতম এলাকা হিসাবে চিহ্নিত এ অঞ্চলের জলাধারগুলির উন্নয়ন, পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও সেচসহ বহুমুখী কাজে ব্যবহার নিশ্চিত করা। এনিয়ে পানি নিয়ন্ত্রন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়।

স/আর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর