গোদাগাড়ির দুর্ধর্ষ মাদক সম্রাট কামরু এখনো অধরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কৃঞ্চবাটি কালিদিঘী গ্রামের কুখ্যাত মাদক সম্রাট কামরুজ্জামান কামরুর হয়রানিতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে এলাকার মানুষ। মাদক ও হত্যাসহ ১৭ মামলার আসামি হলেও চলমান অভিযানের মধ্যেই মাদক সম্রাট কামরু নিজে রমরমা মাদক ব্যবসা করছে, তেমনি এলাকার নিরীহ মানুষের বাড়িতে নকল মাদক ফেলে দিয়ে মামলায় ফাঁসাচ্ছে।

গুরুতর অভিযোগ হলো- এসব অপকর্মে মাদক সম্রাট কামরুকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগীতা করছেন রাজশাহী জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের দু’জন কর্মকর্তাসহ কয়েক সদস্য যাদের সঙ্গে কামরুর গভীর সম্পর্ক রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এদিকে কামরুর হয়রানিতে অতিষ্ঠ গোদাগাড়ীর কৃঞ্চবাটি কালিদিঘীসহ ৫ গ্রামের মানুষ মাদক  সম্রাট কামরুকে গ্রেফতারের দাবিতে সোমবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মাদকনিয়ন্ত্রণ দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাজশাহীর সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে।

জানা গেছে, কামরুর স্ত্রী রোজিনা ওরফে বিন্দু মাসিকে গত ২৬ জুন গোদাগাড়ী থানার পুলিশ ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেফতার করায় বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। তবে কামরু প্রকাশ্যে ঘুরছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, কৃঞ্চবাটি কালিদিঘী গ্রামের জকিমুদ্দিন মণ্ডলের ছেলে কামরুজ্জামান কামরু (৪৩) দীর্ঘ ২০ বছর ধরে হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকের ব্যবসা করে এখন কোটিপতি। এ পর্যন্ত পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মাদকসহ মোট ৭ বার গ্রেফতার হয়েছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী, রাজপাড়াসহ দেশের বিভিন্ন থানায় কামরুর নামে ১৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হত্যাসহ ১০টি মামলা চলমান রয়েছে বলে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে কামরুর স্ত্রী রোজিনা ওরফে বিন্দু মাসির বিরুদ্ধেও ৫টির বেশি মামলা চলমান রয়েছে।

এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সচেতন লোকজন লিখিত অভিযোগে আরও জানান, কামরু একজন বড় মাপের হেরোইন চোরাকারবারী। কয়েক বছর আগে এলাকার মানুষ তাকে মাদক ব্যবসা পরিত্যাগের জন্য চাপ দিলে সহযোগী সন্ত্রাসীদের দিয়ে এলাকার নিরীহ লোকজনের ওপর হামলা করে। পরে এলাকাবাসী একজোট হয়ে কামরুর মাদক ব্যবসা প্রতিরোধ করলে সে নিজগ্রাম কৃঞ্চবাটি কালিদিঘী ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে রাজশাহী মহানগরীর মোল্লাপাড়া এলাকায় বসবাস শুরু করে। সেই থেকে এলাকার মানুষকে নানাভাবে হয়রাণি করে আসছে মাদক সম্রাট কামরু।

এদিকে ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ সর্বশেষ ২০০ গ্রাম হেরোইনসহ র‌্যাবের হাতে আটক হয় কামরু। তবে বিপুল টাকা ব্যয় করে সে কয়েক মাস পর জামিনে বেরিয়ে আসে। সেই থেকে আবারো রমরমা মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ কামরু ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিকে সর্বশেষ গত ২৬ জুন গোদাগাড়ী থানা পুলিশ কামরুর স্ত্রীকে ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেফতার করেন।
এলাকাবাসী আরও জানান, এলাকা ছাড়ার পর ২০১৫ সালে কামরু তার নিজের প্রতিবন্ধী বোনকে হত্যা করে এলাকাবাসীকে আসামি করে মামলা করেন। পরে পুলিশী তদন্তে জানা যায় কামরু নিজেই তার বোনকে হত্যা করেছে।

জানা যায়, মাদক সম্রাটকামরুর সঙ্গে রাজশাহীর মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মকর্তা এসআই হাফিজা খাতুন ও পরিদর্শক খন্দকার নাজিমুদ্দিনসহ কয়েকজনের সঙ্গে রয়েছে গভীর সখ্যতা। এদের ব্যবহার করে এলাকাবাসীর বাড়িতেন কল মাদক ফেলে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।

অভিযোগে আরও জানা গেছে, মাদকের এই দণন কর্মকর্তাসহ জেলা অফিসের আরও কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারার তুলে থাকেন। তবে মাদকের পরিদর্শক খন্দকার নাজিমুদ্দিন ও এসআই হাফিজা খাতুন তাদের বিরুদ্ধে আনা এলাকাবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগে আরও জানা গেছে, গত ২১ জুন মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মকর্তারা কৃঞ্চবাটি কালিদিঘী গ্রামের মনিরুল ইসলাম মুকুলের বাড়িতে যায়। তারা বাড়ির বাইরের একটি খড়ের গাদা থেকে ২০০ গ্রাম সাদা পাউডার জাতীয় জিনিস উদ্ধার দেখিয়ে মুকুলের স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে গ্রেফতার করে। মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মকর্তারা পরে বাড়ির ভেতর থেকে হেরোইন উদ্ধার দেখিয়ে মামলা করেন।

এলাকাবাসী আরও জানায়, রোকেয়া বেগম মাদক সম্রাট কামরুর আত্মীয়। পারিবারিক কারণে তাদের বিরোধ রয়েছে। এই বিরোধে রোকেয়া বেগমকে হয়রানির উদ্দেশ্যে কামরু মাদক দপ্তরের কর্মকর্তাদের হাত করে মাদকের মামলা দিয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান।

এলাকার ইউপি সদস্য শামীম ইকবাল খঞ্জন বলেন, প্রকৃতপক্ষে রোকেয়া বেগম অত্যন্ত নিরীহ মানুষ। তারা কোনো ভাবে খেটে খুটে সংসার চালায়। তাকে মাদকের মামলায় যে ফাঁসানো হয়েছে এলাকার সব শ্রেণী পেশার মানুষই প্রত্যক্ষ করেছেন।

এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান জানান, এর আগে মাদক সম্রাট কামরু মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মকর্তাদের দিয়ে জনৈক শরিফ ও দুলালের বাড়িতে নকল হেরোইন ফেলে দিয়ে মামলায় ফাঁসিয়েছে।

এদিকে মাটিকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী আজম তৌহিদ জানান, মাদক সিন্ডিকেটের লোকেরাই মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এলাকার নিরীহ মানুষকে মাদকের মামলায় ফাঁসাচ্ছে। এই নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মাঝে দিন কাটাচ্ছে। অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি হলেও মাদকের কর্মকর্তারা কোনো পক্ষের হয়ে নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। তদন্ত হলে সত্যতা নিশ্চিত হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে ফোনে জানতে চাইলে মাদক সম্রাট কামরু ফোন ধরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই ফোন সংযোগ কেটে দেন। পরে আর ফোন রিসিভ করেন নি।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের উপ-পরিচালক লুৎফর রহমান বলেন, এলাকাবাসীর দেওয়া একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ গুলি গুরুতর। তদন্ত করে দেখা হবে। মাদক বিভাগের কেউ দোষী হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স/শ