গুরুংয়ের বাড়িতে তল্লাসির পর ফুঁসছে দার্জিলিং

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ভারতের দার্জিলিং পাহাড়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারও ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

পুলিশ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুংয়ের আবাসস্থলে তল্লাসি চালিয়ে অনেক অস্ত্র আর বিস্ফোরক উদ্ধার করার পরেই পাহাড়ে গন্ডগোল ছড়িয়ে পড়ে।

গোর্খা সমর্থকরা ব্যাপক ইঁটবৃষ্টি করতে থাকেন। একটি পুলিশ ফাঁড়ি ও সংবাদমাধ্যমের একটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

বিক্ষোভ থামাতে পুলিশ প্রথমে লাঠি চালায়, তারপর কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। সেনা ও আধাসেনার দলও টহল শুরু করেছে।

কথিত পুলিশি জুলুমের বিরুদ্ধে দার্জিলিং আর কালিম্পং – এই দুই পাহাড়ি জেলায় অনির্দিষ্টকালীন বনধ শুরু হয়েছে।

দার্জিলিংয়ের পুলিশ বলছে যে গত রাতেই তারা গোপন সূত্রে খবর পায় যে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও স্বশাসিত গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান বিমল গুরুংয়ের বাড়িতে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র লুকোনো আছে।

আজ সকালে বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে দার্জিলিং শহর লাগোয়া পাতলেবাস এলাকায় তল্লাসি অভিযান চালানো হয়।

মি. গুরুং বাড়িতে ছিলেন না, তবে সেখানে উপস্থিত অন্যান্য কর্মীদের সরিয়ে দিয়ে দরজা ভেঙ্গে বাড়িতে ঢোকে বাহিনী।

পাহাড়ে মোর্চার সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের খন্ডযুদ্ধ

সংবাদমাধ্যমের সামনে নিয়ে আসা হয় প্রচুর তীর ধনুক, বিস্ফোরক, আগ্নেয়াস্ত্র, ব্যাগভর্তি টাকা প্রভৃতি।

ওই তল্লাসি অভিযানের শেষে দার্জিলিংয়ের সদ্য নিযুক্ত পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট অখিলেশ চতুর্বেদি বলছিলেন, “আমাদের কাছে যা খবর ছিল, সেই অনুযায়ী মোট তিন জায়গায় তল্লাসি চালানো হয়েছে। প্রচুর সংখ্যায় বেআইনি অস্ত্র, অনেক বিস্ফোরক এবং নগদ টাকা পাওয়া গেছে – সংবাদমাধ্যমের সামনেই রাখা আছে উদ্ধার হওয়া জিনিসগুলি – সকলেই দেখতে পাচ্ছেন।”

ওই তল্লাসি অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা পাহাড়ে অশান্তি শুরু হয়ে যায়। রাস্তায় নেমে পড়েন মোর্চা সমর্থকরা।

পুলিশের দিকে বৃষ্টির মতো ইঁট উড়ে আসতে থাকে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ প্রথমে লাঠি চার্জ করে, তারপরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোঁড়ে।

একটি সংবাদমাধ্যমের গাড়িতে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। পেডং-এ একটি পুলিশফাঁড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

চেষ্টা হয়েছিল কালিম্পং-এ একটি পর্যটন আবাসেও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার – কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারাই তাতে বাধা দেন।

সেনা এবং কেন্দ্রীয় আধা সেনা বাহিনী টহল শুরু করলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রনে এসেছে। তবে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা আজকের তল্লাসি অভিযানকে পুলিশি জুলুম আখ্যা দিয়ে অনির্দিষ্টকালীন বনধের ডাক দিয়েছে।

উদ্ধার-করা অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে অনেক তীর-ধনুকও ছিল

মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলছিলেন, “আমাদের আন্দোলন তো শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল গত কয়েকদিন ধরে। কিন্তু আজ সকালে দলের দপ্তর এবং যেখানে মি. বিমল গুরুং থাকেন, সেখানে পুলিশ অভিযান চালালো.. পাশের একটা স্কুলেও তল্লাশী চালিয়েছে তারা।”

“দলের দপ্তর আর বিমল গুরংয়ের বাসভবন তছনছ করা হয়েছে। এটা জুলুম হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা অনির্দিষ্টকালের জন্য পাহাড় বনধ ডাকছে আজ থেকেই।”

পাহাড়ের পাদদেশে শিলিগুড়ি শহরের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ও রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব এক সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করছিলেন, “পাতলেবাসে তল্লাশী চালিয়ে যে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে রাজ্য পুলিশ, তাতেই বোঝা যাচ্ছে গুরুংদের কী পরিকল্পনা ছিল।”

পুলিশের তল্লাসি অভিযান নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেছে বিরোধী সিপিআইএম এবং বিজেপি।

মোর্চার কিছু নেতা দাবি করছেন তীরধনুক, কোদাল এসব উদ্ধার করেই পুলিশ অস্ত্র উদ্ধারের কাহিনী বলছে। তাদের বক্তব্য, তীর ধনুকগুলো একটি স্কুলের তীরন্দাজি প্রতিযোগিতার জন্য রাখা ছিল।

তবে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন তীর ধনুক ছাড়াও আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক, রেডিও সেট, ব্যাগ ভর্তি নোটের বান্ডিল যে উদ্ধার হয়েছে, তার সাক্ষী থেকেছে সংবাদমাধ্যম।

সূত্র: বিবিসি