গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা সম্পন্ন, কাল বউ মেলা

আল আমিন মন্ডল, বগুড়া (গাবতলী):

ঢাকঢোল পিটিয়ে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পূর্ব বগুড়া তথা গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা আজ বুধবার শান্তিপূর্নভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বউ মেলা অনুষ্ঠিত হবে।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ মেলায় এসে ক্রয়-বিক্রয় করেছে। উপভোগ করেছে নানা ধরনের বিনোদন।

মেলায় বিক্রি হয়েছে কয়েক হাজার মণ মিষ্টি, মাছের দাম কিছুটা চড়া হলেও ব্যাপকহারে বিক্রি হয়েছে বড় বড় বাঘার, চিতল, ভেউস, বোয়াল, রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন জাতের মাছ। হিন্দু-মুসলমান, পুরুষ-নারীসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের ঢল নেমে ছিল ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহের মেলায়। মেলায় বাঘার মাছ কেজি প্রতি বিক্রি করা হয়েছে ১৭’শ থেকে দেড়হাজার টাকায়। ভেউস মাছ কেজি প্রতি বিক্রি করা হয়েছে ১৫’শ থেকে ১৮’শ টাকায়, বোয়াল মাছ কেজি প্রতি বিক্রি করা হয়েছে ১৩’শ থেকে ১৪’শ টাকায়, রুই মাছ কেজি প্রতি বিক্রি করা হয়েছে ৪’শ থেকে ১১’শ টাকায়, কাতলা মাছ কেজি প্রতি বিক্রি করা হয়েছে ৩’শ থেকে ৯’শ টাকায়। এ ছাড়া বিভিন্ন মাছ বিভিন্ন মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে।

স্থানীয় সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে দেড়শত বছরের পুরানো মেলায় ছিল প্রশাসনের কঠোর নজরদারী। মেলায় প্রসিদ্ধ হলো বড় বড় মাছ, হরেক রকম মিষ্টি, কাঠ বা ষ্ঠীলের র্ফানিচার, বড়ই (কুল), কৃষি সামগ্রীসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ও খাদ্য দ্রব্য হাট-বাজারের ন্যায় কেনা-বেচা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিনোদনমূলক ছিল বিচিত্র ও নাগোরদোলা। প্রকাশ, উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের অর্ন্তগত গোলাবাড়ী বন্দর সংলগ্ন প্রায় দেড়শত বছর পূর্বে থেকে স্থানীয় সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে গাড়ীদহ নদী ঘেঁষে সম্পূর্ন ব্যক্তি মালিকানা জমিতে একদিনের জন্য মেলাটি বসে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ মেলায় এসে ক্রয়-বিক্রয় করে।

মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে আত্মীয় স্বজন এসে সমবেত হয়। ঈদ বা কোন উৎসবে জামাই-মেয়েসহ অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত না দিলেও তেমন কোন সমস্যা নেই। তবে মেলা উপলক্ষে দাওয়াত দিতেই হবে, যা রেওয়াজে পরিনীত হয়েছে। মেলাটি একদিনের জন্য হলেও ওই এলাকায় মেলার আমেজ থাকে সপ্তাহ ব্যাপী।

মেলাটি জন্মের পর থেকে মহিষাবান গ্রামের মন্ডল পরিবার পরিচালনা করে আসছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মেলার লাইসেন্স দেয়া হয়। যে কারনে মহিষাবান ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম মেলাটির নেতৃত্বে ছিলেন।

বাংলার প্রতি বছরের মাঘ মাসের শেষ অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার মেলাটি হয়ে থাকে। কিছু সমস্যার কারনে গত ২/৩ বছর হলে মূল জায়গা থেকে একটু দুরে মেলাটি বসানো হয়।

মহিষাবান ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম জানান, প্রশাসনসহ এলাকাবাসির সহযোগিতায় শান্তিপূর্নভাবে মেলা সম্পন্ন হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রওনক জাহান জানান, সকলের সার্বিক সহযোগিতায় মেলাটি অত্যান্ত শান্তিপূর্নভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (গাবতলী সার্কেল) সাবিনা ইয়াসমিন ও থানার ওসি সাবের রেজা আহম্মেদ এর সাথে কথা বললে তাঁরা জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও পোড়াদহ মেলায় আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল।

অপর দিকে পোড়াদহ মেলা শেষে বৃহম্পতিবার মহিষাবান গ্রামে বউ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এই মেলায় পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ থাকায় তরুণী, গৃহবধুসহ সব বয়সের মেয়েরা স্বাদছন্দে মতে কেনাকাটা করে থাকে। প্রায় ২০ বছর পূর্বে থেকে বউ মেলা হয়ে আসছে। বউ মেলায় সার্বিক দায়িত্বে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম। এছাড়া পার্শ্ববর্তী রানিরপাড়ায় কয়েক বছর থেকে আরেকটি বউ মেলা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

স/অ