করোনার প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় মানুষদের খাদ্য ও ওষুধ কিনে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১৩ হাজার টাকা দান করলেন জামালপুরের রিকশাচালক হযরত আলী।
‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই চিন্তা করেই মঙ্গলবার বিকালে তিনি জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমানের হাতে টাকাগুলো তুলে দেন।
জানা গেছে, হযরত আলীর (৬৫) বাড়ি জামালপুর পৌরসভার পাথালিয়া ছাতার মোড় এলাকায়। পৈত্রিক ওয়ারিশে প্রাপ্ত আড়াই শতাংশ জমিতে দোচালা টিনের ঘর। স্ত্রী, ২৫ বছরের বেকার একটি ছেলে ও ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া এক ছেলেকে নিয়ে তার জীবনযাপন।
তিনি সংসার চালাতে সুদের টাকা নিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ধার-দেনার চাপ সামলাতে না পেরে ২০০৬ সালে তিনি ঢাকা চলে যান। ঢাকার রাজারবাগের কুসুমবাগ এলাকায় স্ত্রী, ছোট মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে থেকে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
প্রতিদিন তিনি কিছু কিছু করে টাকা জমাতেন। সেই জমানো টাকা মেয়ে বিয়ের খরচ যুগীয়েও ধার-দেনা শোধ করে তিনি একটি গরু কেনেন। গরুটি তিনি গ্রামের বাড়িতে এক ব্যক্তিকে বর্গা দিয়েছিলেন। লকডাউনে টাকার অভাবে তিনি ওই গরুটিকে বিক্রি করে দেন। কিছু টাকা নিজের জন্য রেখে ১৩ হাজার টাকা তিনি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দেন।
টাকা দেয়ার পর সংসার চালাবেন কীভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে হযরত আলী বলেন, ‘পৃথিবীতে যে ভাইরাস ছড়াচ্ছে তাতে বাঁচা মরার কোনো গ্যারান্টি নেই। গরিব মানুষের খুব দুর্দিন। আমার কোনোমতে চলে যাবে। কিন্তু আমার চেয়েও যারা গরিব তাদের এখন খাবার ও ওষুধ দরকার। মনটা খারাপ লাগছিল। গরু বিক্রি করা টাকার থেকে ১৩ হাজার টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিলাম।
জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান বলেছেন, রিকশাচালক হয়ে মানুষের কল্যাণে তার এই দান সত্যিই অভূতপূর্ব ও প্রশংসনীয়। মহৎ মনের না হলে দরিদ্রতা নিয়েও এমন দান সহজে করা যায় না।