গবেষণা ও ব্র্যান্ডিংয়ের অভাবে বিশ্ববাজারে পিছিয়ে পাট

করোনায় দেশের রপ্তানি আয়ের বড় খাতগুলোতে ধস নামলেও পাট ও পাটজাত পণ্য বিশ্ববাজারে সাফল্য বজায় রেখেছে। যদিও এখনো সমস্যা রয়ে গেছে দেশের অভ্যন্তরে, নীতিগত সহায়তার ক্ষেত্রে। রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাটের ক্রমবর্ধমান বাজারে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলো দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোতে পাটপণ্যের বড় জোগানদাতা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আশা বিশ্ববাজারে পাটের বাজার ধরে রাখতে এই পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করে দ্রুত উৎপাদনে ফিরিয়ে আনা হবে। তার আগে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলো বের করে আনতে হবে। কারণ অদক্ষ বিজেএমসিকে দিয়ে পাটের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাবে না। প্রয়োজনে অর্থনৈতিক অঞ্চলের আওতায় নিয়ে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।

সম্প্রতি সরকার বিজেএমসির ২৫টি পাট কারখানার ২৫ হাজার শ্রমিককে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আপাতত কারখানাগুলো বন্ধ থাকবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এই বছর রপ্তানি হবে না। পরে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে এগুলো চালু করা হবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরে (২০১৯-২০) পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি করে দেশের ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার আয় হয়েছে। আগের অর্থবছরের চেয়ে এই আয় ৮ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে পাট রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১৩ কোটি ডলারের। পাটের সুতা থেকে আয় হয়েছে ৫৬ কোটি ৪২ লাখ ডলার। আর পাটের ব্যাগ ও পাটজাত পণ্যে আয় হয়েছে ১০ কোটি ৬৫ লাখ ডলার।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাকৃতিক আঁশ বা পাটজাত পণ্যের চাহিদা বিশ্ববাজারে বাড়ছে। আগামী বছর আরো চাহিদা বাড়বে। এ জন্য গবেষণা ও ব্র্যান্ডিংয়ে নজর দিতে হবে। তাঁরা বলেন, দেশে গবেষণা প্রতিষ্ঠান থাকলেও তহবিলের কারণে বাণিজ্যিকভাবে একে খুব বেশি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে ভারত পাটের জন্য তিনটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান করেছে। এসব গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জন্য গত বছর আরো ১৪১ কোটি রুপি বরাদ্দ দিয়েছে।

বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালোমানের পাট উৎপাদনকারী দেশ হলেও গবেষণা আর ব্র্যান্ডিংয়ের অভাবে বিশ্ববাজারে পিছিয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

গবেষণায় অনেক বিনিয়োগ হলেও ফল আসেনি উল্লেখ করে ক্রিয়েশান প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ঢাকা চেম্বারের পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্না বলেন, ‘বিজিআরআইর গবেষণা বাজারমুখী না হওয়ায় তেমন সফলতা মিলছে না। দেশের পাট খাতের বড় অংশ সুতার (৩৭ শতাংশ)। আমাদের সুতা নিয়ে তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরান বিশ্বমানের কার্পেট তৈরি করে। অথচ আমাদের কাঁচা মালের মূল্য সংযোজন আমরা করতে পারছি না। বিশ্ববাজারে প্রতিবছর ২ থেকে ৩ শতাংশ হারে প্রাকৃতিক কার্পেটের চাহিদা বাড়ছে।

পাটের বৈশ্বিক উদ্যোক্তারাও কমপ্লায়েন্সে জোর দিয়েছে উল্লেখ করে দেশীয় উদ্যোক্তারা বলেন, কমপ্লায়েন্স করে বন্ধ হওয়া কারখানাগুলো চালু হলে পাট আবারও নতুন মাত্রা পাবে।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিল্ডের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান  বলেন, ‘চীন, ভারত ব্র্যান্ডিংয়ে দাঁড়িয়ে গেলেও বাংলাদেশ এখনো ছালার বস্তা আর চট নিয়ে ব্যস্ত। সঠিক মানে পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি করা গেলে বিশ্ববাজারে নতুন মাত্রা পাবে পাট। আমরা এখনো ৯৬ শতাংশ পাটে মূল্য সংযোজন করতে পারিনি। বিশ্ববাজারে ৪ শতাংশ বহুমুখী পণ্য নিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বৈশ্বিক বাজার ধরে রাখতে বিজেএমসি ও বিজিএমইএকে একসঙ্গে বসতে হবে। একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ