গণপরিবহন শ্রমিকদের তথ্য সংরক্ষণে কাজ শুরু করেছে পুলিশ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: গণপরিবহনের চালক ও হেলপারদের তথ্য সংরক্ষণে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোও পরিবহন শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজ করছে। তবে এটা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে এর আগে পুলিশ ‘সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইএমএস)’ নামে একটি ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করে। যেখানে দেশের সব নাগরিকের তথ্যই থাকবে। সেই ডাটাবেজের আওতায় গণপরিবহনের চালক ও হেলপারদের আলাদা ফরমেটে তথ্য সংরক্ষণ করা হবে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গণপরিবহনের চালক, কন্ট্রাকটর, সুপারভাইজার ও হেলপারদের তথ্য সংরক্ষণে পরিবহন মালিক সমিতি, বিআরটিএ ও পুলিশ কাজ শুরু করেছে। তবে এটা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষ করে ভাসমান অপরাধী জঙ্গিগোষ্ঠির কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো বাড়ির মালিক, ভাড়াটিয়া, গাড়ির চালক এবং পরিবারের কাজের লোকসহ সকলের ছবিসহ নাম-ঠিকানা নিয়ে পুলিশ সিআইএমএস-এর তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে। গত প্রায় দু’বছর ধরে এই তথ্য সংরক্ষণের কাজ করছে পুলিশ। শুরুতে ঢাকা মহানগরীতে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য নিয়ে ডাটাবেজ তৈরির কাজে হাত দিয়েছিল পুলিশ। পরে সেই ডাটাবেজের কাজ সারাদেশে শুরু করে পুলিশ। লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের অবস্থান জানতে এবং জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা যাতে কোথাও আস্তানা গড়ে তুলতে না পারে সেজন্যই প্রথমে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এই ডাটাবেজ সম্পূর্ণ শেষ না হলেও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এর সুফল পাচ্ছেন বলেও দাবি পুলিশ কর্মকর্তাদের।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা নির্দিষ্ট টার্গেট নিয়ে ভূয়া নাম-ঠিকানা, বাসা-বাড়ি, ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছিল। ভাড়া বাসা-বাড়িকে তারা নিজেদের আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করছিল। বর্তমানে বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংরক্ষণ থাকায় যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কর্মকাণ্ডের পর সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত ও তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হচ্ছে। সম্প্রতি অনেক দুর্ঘটনার পর এবং অন্য কোনও অপরাধ করে গণপরিবহনের শ্রমিকরা পালিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে তাদের তথ্য পেতে অনেক বেগ পেতে হয়। এছাড়া তারা নিজেরাও যখন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যায়, তখন তাদের স্বজনদের খুঁজে পেতে চরম সমস্যার মুখে পড়েন সংশ্লিষ্টরা। সেজন্য সরকার গণপরিবহনের চালক ও হেলপারদের তথ্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। এরইমধ্যে কোথাও কোথাও এই কাজ শুরু করে দিয়েছে পুলিশ। মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে ছাড়াও বিআরটিএ-এর মাধ্যমে তাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গণপরিবহনে যারা চালক রয়েছে তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হয়। সেই ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যুর আগে তাদের সঠিক নাম, ঠিকানা যাচাই করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সুপারভাইজারসহ বাসের চালকের সহকারি হিসেবে যারা কাজ করেন, তারাও নিজ নিজ পরিবহন কোম্পানির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। সেজন্য কোম্পানিগুলোকেও চালক ও তার সহকারীদের নাম ঠিকানা সংরক্ষণে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। এতে করে কোনও অপরাধ করে পালিয়ে গিয়ে লুকিয়ে থাকা সম্ভব হবে না। তারপরও গণপরিবহনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং যাতে অসৎ শ্রেণির ব্যক্তি পরিবহনের চালক, কন্ডাক্টর, সুপারভাইজার ও হেলপার হিসেবে কাজ নিয়ে যাত্রী সেবা বিঘ্নিত করতে না পারে। যাত্রীদের সঙ্গে অপরাধে লিপ্ত হতে না পারে। সেই লক্ষ্যেই গণপরিবহনের শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে।

বাস মালিক সমিতির দফতর সম্পাদক সামদানি খন্দকার বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের বলা হয়েছে চালক ও তার সহকারীদের তথ্য নেওয়ার জন্য। তারা তথ্য নেওয়া শুরু করেছেন। তবে পুলিশকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও তথ্য দেওয়া শুরু করেননি তারা। তাছাড়া পুলিশ কীভাবে কী করতে চায় সেটাও এখনও বিস্তারিত জানিনা।’

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘আমরা এরইমধ্যে চালক ও তার সহকারীদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছি। চালকদের লাইসেন্সের কপি ও নাগরিক সনদ নিয়ে নিচ্ছি। সুপারভাইজার ও হেলপার সবার ক্ষেত্রেই এটা করছি। কারণ, হঠাৎ করে একটি দুর্ঘটনা ঘটলে তখন তাদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না। আগেও এটা করতাম। তবে এখন সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করছি। সেজন্য তাদের নাগরিক সনদ, মা, বাবা, স্ত্রী ও স্বজনদের মোবাইল নম্বর ও তাদের মোবাইল নম্বর নিয়ে রাখা হয়। পুলিশও এসব তথ্য তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে নেওয়া শুরু করেছে।’

পুলিশ সদর দফতরের ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এআইজি মোশাররফ হোসেন মিয়াজি  বলেন, ‘সড়ক নিরাপত্তায় পুলিশ আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতামূলক কাজও চালিয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে গণপরিবহনের শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহেও কাজ শুরু হয়েছে। তবে সেটা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তাছাড়া চালকদের যেহেতু লাইসেন্স নিতে হয়, সেজন্য বিআরটিএ’তে তাদের তথ্য দিতে হয়। সেখানেও তাদের তথ্য রয়েছে। চালকের সহকারীদের তথ্য সংরক্ষণে মালিকপক্ষকে বলা হয়েছে। সবার সঙ্গে সমন্বয় করেই পুলিশ গণপরিবহন শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহ করছে।’

মোশাররফ হোসেন মিয়াজি আরও বলেন, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি না চালানো, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ চালক নিয়োগ করা ছাড়াও দীর্ঘ পথে অতিরিক্ত চালক নিয়োগ করার জন্য মালিকপক্ষকে বলা হয়েছে। হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে ভারী গাড়ি না চালানো ও নির্ধারিত যানবাহনের জন্য নির্ধারিত ড্রাইভার নিয়োগ করার জন্য বলা হয়েছে। এতে করে বেপরোয়া ও প্রতিযোগিতামূলকভাবে গাড়ি চালানো এবং হেলপার ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক দিয়ে গাড়ি চালানোও বন্ধ হবে।’