গণতন্ত্রের কথা বলে জনগণকে বাদ দিয়ে পুলিশের ওপর নির্ভর কেন : টুকু

আমজাদ হোসেন শিমুল:

“দখলদার প্রধানমন্ত্রী এক ভার্চুয়াল মিটিংয়ে বলেছেন, ‘আমার জীবন স্বার্থক, আমি বাঙালি জনতার কাছে তাদের গণতন্ত্র ফেরত দিয়েছি।’ কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে চাই, আপনাকে কেন জনগণের ওপর নির্ভর না করে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তাদের কর্মচারি পুলিশ অফিসার, ডিসিদের ওপর নির্ভর করতে হয়? তাহলে কি আপনার গণতন্ত্রের ডেফিনশন পরিবতন হয়ে গেল?”

মঙ্গলবার (০২ মার্চ) বিকালে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে টুকু বলেন, “আপনি বলেন, ‘আমি উন্নয়ন করেছি, উন্নয়ন করেছি’। আপনি উন্নয়ন করেছেন, সেই জন্য তো ফরিদপুরের ছাত্রলীগের সভাপতি দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। একটা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি যদি এতো টাকা পাচার করে তাহলে প্রধানমন্ত্রী, আপনার রাঘব বোয়ালরা কত টাকা পাচার করেছে বাংলাদেশের মানুষ সেই হিসাব চায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রাজশাহীর এই সমাবেশ করতে চাইলাম মাদ্রাসা মাঠে। কিন্তু আপনি এটিকে সংকোচিত করে নাইস কনভেনশন সেন্টারে করতে দিলেন। আপনি হয়তো ভেবেছেন, বিএনপির সমাবেশে লোক হয় না। আপনি নাকি ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছেন, আপনার ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে দেখেন সমাবেশে লোকে লোকারণ্য।

তিনি বলেন, ‘আপনি সকালে যখন রাজশাহীতে নামলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাস্তাঘাট যেমন ফাঁকা ছিল, রাজশাহীর অবস্থা ঠিক তেমন দেখলাম। কীসের ভয়। আপনি তো গণতন্ত্র দিয়ে দিয়েছেন। তারপরও কিসের এতো ভয়?

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘ ফেরাউনসহ সবার পতন হয়েছে। আপনারও পতন হবে এই রাজশাহী থেকে। বাংলাদেশে ৫২ তে রাজপথে ফায়সালা হয়েছে। ৫৪ থেকে ৬৯ রে রাজপথে ফায়সালা হয়েছে। ৯১ এ রাজপথে ফায়সালা হয়েছে। প্রস্তুত হন এই রাজপথে ফায়সালা হবে। গণতন্ত্র হারিয়ে যাওয়া জিনিস না, কারো পকেটের মোয়া না। গণতন্ত্র বার বার জীবিত হয়।’

পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী নিজেদের জীবন বাজি রেখে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য ঝাপিয়ে পড়েছিলো। কিন্তু আজ স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে দেখছি সেই পুলিশ বাহিনী আর আজকের পুলিশ বাহিনীর মধ্যে কোনো মিল নাই। তখনকার পুলিশ বাহিনী ছিল বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের অগ্রসৈনিক। ২৫ তারিখ রাতে সবচেয়ে বেশি প্রাণ দিয়েছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সিপাহীরা। আজকে বাংলাদেশের পুলিশ একটা দলের কর্মী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।’

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘ হাসিনা সরকার জনগণের নির্বাচিত সরকার নয়। হাসিনা সরকার ভারতের পুতুল সরকার। হাসিনাকে চালায় ওই ভারতের মৌলবাদী সরকার মোদি, তার গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। তাদেরকে চালায় ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ।’ তিনি আরও বলেন, আমাদের নেত্রী রাজপথে থেকে দেশনেত্রী হয়েছেন। তাকে বের করে আনবো, মুক্তি চাই না, হাসিনা, রেডি হও। আজ সন্ধ্যা, কাল সকাল তোমার নাও হতে পারে। মনে নাই, ৭৫ সাল। এই পুতুল সরকারের সাথে আমাদের কোনোকিছু নাই। আমরা লড়াই করছি ভারতের মোদির সঙ্গে, মোসাদ ইসরাইলের সঙ্গে।’

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শফিকুল হক মিলনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদ, মজিবর রহমান সারোয়ার, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুছ তালুকদার দুলু, রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট শাহীন শওকত ও ওবায়দুর রহমান চন্দন,  দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু,  জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ প্রমুখ।