খুবির ৩ শিক্ষককে অপসারণ : রাবির ইতিহাস বিভাগের শিক্ষকদের প্রতিবাদ

রাবি প্রতিনিধি:

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) তিন শিক্ষকের অপসারণের প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইতিহাস বিভাগের আটজন শিক্ষক। আজ রবিবার এক বিবৃতিতে তারা এই প্রতিবাদ জানান।

রাবির ইতিহাস বিভাগের ৮ শিক্ষকের পাঠানো বিবৃতি

প্রতিবাদকারী শিক্ষকবৃন্দ হলেন- ইতিহাস বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মর্ত্তজা খালেদ, প্রফেসর আবুল কাশেম, প্রফেসর মাহমুদা খাতুন, প্রফেসর ফেরদৌসি খাতুন, প্রফেসর মো. শেরেজ্জামান, প্রফেসর ড. চিত্তরঞ্জণ মিশ্র (ডেপুটেশন), সহযোগী অধ্যাপক মোছা. সাহিনা আক্তার ও সহকারী অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন।

বিবৃতিতে তারা বলেন- আমরা গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সাথে লক্ষ্য করেছি যে , খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ গত ২৩ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে । খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন জন শিক্ষকের চাকুরীচ্যুতির প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের শিক্ষকদের বিবৃতি অনুষ্ঠিত ১১২ তম সিন্ডিকেট সভায় বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাে . আবুল ফজলকে বরখাস্ত এবং একই বিভাগের প্রভাষক শাকিলা আলম এবং ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরীকে অপসারণ করেছে । আমরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ , ক্ষোভ ও নিন্দা জানাচ্ছি ।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়- মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতার অধিকার যেন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে থাকে সে উদ্দেশ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয় নাই , সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন নামার স্বতন্ত্র একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়েছে । এটি যে শুধু বাংলাদেশে রয়েছে তা নয় সারা বিশ্বেই এই ধারা অনুসরণ করা হয় । আসলে মধ্যযুগের ইউরােপে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ গড়ে উঠেছিল ধর্মীয় কূপমন্ডকতা থেকে মুক্তি ও মুক্তবুদ্ধির ধারাকে অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে । আর ইউরােপীয় মডেলকে কেন্দ্র করেই বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ পাকিস্তান শাসনামল থেকেই বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রসর চিন্তা ও প্রগতিশীল ধারার অনুসারী ছিল ।

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষকগণ বলেন- বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দের অপরিসীম অবদান রয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ বেতন – ফি কমানাে , আবাসন সংকট সমাধানসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করেছিল । এই আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছিলেন কিছু শিক্ষক । বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রথমে আন্দোলনকারী কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন । ছাত্র আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশকারী শিক্ষকবৃন্দের মধ্য থেকে এই তিন শিক্ষককে বেছে নিয়ে এদের বিরুদ্ধে চাকুরীচ্যুতির শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন । নি:সন্দেহে এই সিন্ধান্ত অসৎ ও উদ্দেশ্য প্রণােদিত ।

তারা আরও বলেন- পাকিস্তানী শাসনামলে সামরিক জান্তা এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন । আশির দশকে স্বৈরশাসক এরশাদ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এই জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ অমরতে গিয়ে শিক্ষকদের সম্মিলিত বাধার মুখে পশ্চাদপসরণ করেন । একুশ শতকে দ্বিতীয় দশকে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে এই জাতীয় সিদ্ধান্তের দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সীমাহীন স্বৈরতান্ত্রিকতা , গণতান্ত্রিক মূল্যবােধের প্রতি অবজ্ঞা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার প্রতি বিদ্বেষ দেখিয়েছেন যা কারাে কাম্য হতে পারে না । আমরা এই অনৈতিক ও সমগ্র শিক্ষক সমাজের জন্য অবমাননাকর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরােধ জানাচ্ছি।

এএইচ/এস