খালেদা জিয়ার মুক্তি ছয় এমপির শপথ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি জামিনে নাকি প্যারোলে—এমন প্রশ্নের নিষ্পত্তি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পর্দার আড়ালের সমঝোতা উদ্যোগও ভেস্তে যেতে বসেছে।

কারণ প্যারোল না নেওয়ার বিষয়ে অনড় অবস্থান গ্রহণ করেছেন খালেদা জিয়া। অন্যদিকে তাঁর জামিন পাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির নির্বাচিত ছয় সংসদ সদস্যের শপথ গ্রহণ আটকে গেছে।

দলটির স্থায়ী কমিটি গত সোমবার রাতে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নির্বাচিত ছয় সংসদ সদস্য শপথ নেবেন না। খালেদা জিয়ার কারামুক্তি এবং ছয় এমপির সংসদে যোগদানের সম্ভাবনা নিয়ে দেশজুড়ে নানা গুঞ্জনের মুখে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম এ সিদ্ধান্ত নিল।

এর আগে গত ১৫ এপ্রিল ছয় সংসদ সদস্যকে দলের তরফ থেকে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল বলে জানা যায়। সংবিধান অনুযায়ী শপথ নেওয়ার শেষ সময় আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত।

কিন্তু সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিএনপির বৈঠকে সম্প্রতি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসা তিন নেতা জানান, খালেদা জিয়া প্যারোলের প্রস্তাব সরাসরি ‘না’ করে দিয়েছেন। ফলে সংসদে যোগ দেওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।

খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রশ্নে দেশজুড়ে নানা আলোচনা ও গুঞ্জনের মধ্যে সোমবারই দলীয় ফোরামে এ নিয়ে প্রথম আলোচনা হলো।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল মঙ্গলবার পৃথকভাবে কালের কণ্ঠকে প্রায় একই সুরে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন প্যারোল নেবেন না, এটি আগেরই সিদ্ধান্ত। তাঁরা জানান, সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্ত কখনোই ছিল না। এটি কে বা কারা বাইরে প্রচার চালিয়েছে এমন দাবি করে তাঁরা বলেন, বিএনপি নির্বাচন যেখানে প্রত্যাখ্যান করেছে সেখানে শপথ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ স্পষ্ট করেই কালের কণ্ঠকে বলেন, বিএনপি সংসদেও যাচ্ছে না, ম্যাডাম প্যারোলও নিচ্ছেন না। ম্যাডাম নিজেই বলেছেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না।’ স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, সংসদে যাওয়ার পক্ষের লোক দলের মধ্যে খুবই কম। তা ছাড়া খালেদা জিয়া প্যারোল নিয়ে সমঝোতা করবেন, এটি কেউ বিশ্বাস করবেন না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ এবং বগুড়া-৪ আসনের মো. মোশাররফ হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে তাঁরা শপথ নেবেন না। মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সংসদে গিয়ে জাতীয় বেইমান হতে চাই না।’ তাঁর মতে, ‘দলের বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে একদিন আমার ছেলেকেও মানুষ বলতে পারে তার বাবা বেইমান ছিল।’

বিএনপির কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ‘জামিনে মুুক্তির বিনিময়ে’ পর্দার আড়ালের সমঝোতায় দলটির চেয়ারপারসনসহ কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতাও রাজি আছেন। পরিবারের পক্ষ থেকেও এ ধরনের উদ্যোগ ছিল। আর এমন বার্তা পেয়েই নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাও সংসদে যেতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

কিন্তু ‘পর্দার আড়ালের আলোচনায়’ সরকার পক্ষ প্যারোলের বিষয়ে বেশি জোর দিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। সূত্রের দাবি, জামিনের বিষয়ে সরকার সম্মত হয়নি। এ কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রীরা সবাই একবাক্যে বলেছেন, খালেদা জিয়া প্যারোল চাইলে সরকার ভেবে দেখবে।

অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতাই বলেছেন, প্যারোল মিডিয়ার আবিষ্কার। তাঁরা শুরু থেকে এও বলেছেন যে খালেদা জিয়া প্যারোলে সম্মত নন। পাশাপাশি খালেদার মুক্তির বিষয়ে তাঁরা জামিন চান, এ কথাও বারবারই বলেছেন।

অবশ্য গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে এসে ১৫ এপ্রিল গণমাধ্যমে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের প্যারোলের বিষয়টি দলের নয়, এটি খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের বিষয়।’

বিএনপির ভেতরে অনেকে তাঁর এই বক্তব্যের ভিন্ন অর্থ ও তাৎপর্য খোঁজার চেষ্টা করেন। কিন্তু একই দিন রাতে নির্বাচিত ছয় সংসদ সদস্যকে নিয়ে বৈঠকে আবার তিনি দলের বিরুদ্ধে না যাওয়ার জন্য তাঁদের সতর্ক করে দেন।

জানা যায়, হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা উঠলে তিনি সংসদ সদস্যদের থামিয়ে দিতে নির্দেশনা দেন ফখরুলকে। কারণ সংসদ সদস্যরা গণমাধ্যমে একেকজন একেকভাবে কথা বলছিলেন। ফখরুল সে অনুযায়ী বৈঠক করে জানান, নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এবং চেয়ারপারসন প্যারোলে যেতে রাজি নন।