খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে যেভাবে চলবে বিএনপি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় কাল। এ মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হবে কিনা- তা নিয়ে দলে রয়েছে নানা আলোচনা, হিসাব-নিকাশ। রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা হলে দল কিভাবে চলবে এ নিয়েও নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা আলোচনা চলছে। দলটির নীতিনির্ধারকরাও বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দলের নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু তিনিও দেশে নেই। শিগগির তার দেশে ফেরার সম্ভাবনাও নেই।

দলের একটি অংশ চাইছে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে নেতৃত্বে আনার। তবে হাইকমান্ড তা চাচ্ছেন না। ফলে জোবাইদার নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাহলে আপৎকালে কাকে দেয়া হচ্ছে দল পরিচালনার ভার? জানতে চাইলে নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, এককভাবে কারও ওপর সে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে না। ওই সময় গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সম্ভাবনাও নেই। শুধু রুটিন কর্মকাণ্ড চালানো হবে। আর তা সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হবে জ্যেষ্ঠ কয়েক নেতার ওপর।

আজ রাতে গুলশানে তার কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকেছেন খালেদা জিয়া। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রায় নেতিবাচক হলে দল কিভাবে চলবে সে বিষয়ে এ বৈঠকে দিকনির্দেশনা দেবেন তিনি।

জানতে চাইলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে দল কিভাবে চলবে এ প্রশ্ন আসছে কেন। আমি মনে করি, এই মামলা সাজানো, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। এতে কোনো শাস্তিই হবে না। নেত্রী সম্মানজনকভাবে খালাস পাবেন। তিনি বলেন, তারপরও এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে দল চালাতে কোনো সমস্যা হবে না। চেয়ারপারসনের নির্দেশে এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পরামর্শে দল পরিচালিত হবে।

সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী  বলেন, ন্যায়বিচার হলে আমাদের নেত্রী বেকসুর খালাস পাবেন। কারণ এ মামলার কোনো মেরিট নেই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই তাকে জড়ানো হয়েছে। তিনিও প্রশ্ন করেন- চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতির বিষয়টি আসছে কেন? তিনি যেখানেই থাকুক তার নির্দেশেই দল পরিচালিত হবে। তাকে কারাগারে পাঠানো হলে সেখানে কী নেতারা দেখা করতে পারবেন না? যদি দেখা করা সম্ভব হয় তাহলে দল পরিচালনায় কাউকে দায়িত্ব দেয়ার প্রশ্ন আসবে কেন।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা জানান, কোনো কারণে চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব না হলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পরামর্শ নেয়া হবে। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি ও সিনিয়র নেতারা সে অনুযায়ী করণীয় নির্ধারণ করবেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন। চেয়ারপারসনের লন্ডন সফরকালেও এভাবে দল পরিচালিত হয়েছে। ওই সময় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সেভাবেই নেয়া হয়।

সূত্র জানায়, সাজা হলে পরবর্তী করণীয় এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলের মতামত নেয়া হবে। ৩ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা হয়। বৈঠকে নেতাদের বক্তব্য শেষে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। চেয়ারপারসনের সাজা হলে কিভাবে দল পরিচালিত হবে এমন ইঙ্গিতও উঠে আসে সভায়।

চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে দলে যাতে বিভেদ সৃষ্টি না হয় বা কেউ ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেজন্য তৃণমূলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। বারবার জোর দেয়া হয় দলের ঐক্যের দিকে। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নির্বাহী কমিটির সদস্যরা চেয়ারপারসন কারাগারে গেলে দল কিভাবে চলবে সে ব্যাপারেও ইঙ্গিত দেন। কোনো বেঈমান বিশ্বাসঘাতককে যেন দলে পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া না হয় সে ব্যাপারে চেয়ারপারসনের প্রতি অনুরোধ জানান।

বিএনপির গঠনতন্ত্র (৭-এর গ ধারা) অনুযায়ী, চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির সভা ডাকাসহ চেয়ারপারসনের অন্য সব ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। এই দু’জন ছাড়া অন্য কেউ দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠক ডাকতে পারেন না। আর এ বৈঠক না হলে কোনো সিদ্ধান্ত অনুমোদন পায় না।

সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হলে দল পরিচালনার চেয়ে দলের ঐক্যের দিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে হাইকমান্ড। চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে দলের ভেতর যাতে ভাঙন সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। গঠনতন্ত্রের কোনো ধারার সুযোগ নিয়ে দলে যাতে বিতর্ক সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য ৭ ধারাটি বাতিল করা হয়েছে। যুগান্তর