খাটিয়ায় শুয়ে শেষবার মোহামেডানে এলেন বাদল রায়

সেই আশির দশক। বাদল রায় তখন দেশের ফুটবলের মহাতারকা। তিনি যখন ক্লাবে আসতেন, সমর্থকেরা তাঁকে একনজর চোখের দেখা দেখতে ভিড় জমাতেন। নাম ধরে স্লোগান দিতেন, চিৎকার করে প্রিয় তারকার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতেন। আজও বাদল রায় এলেন তার প্রিয় ক্লাব মোহামেডানে। তবে খাটিয়ায় শুয়ে। শেষবারের মতো প্রিয় তারকাকে বিদায় জানাতে সেই আশির দশকের মতোই ভিড় হলো আজ ক্লাব প্রাঙ্গণে।

এই সময়ে ক্রিকেট নিয়ে দেশে যেমন উন্মাদনা হয়, তখন আবাহনী-মোহামেডান ফুটবল লড়াই নিয়ে তার চেয়েও বেশি উন্মাদনা হতো। ১৯৭৭ সালে মোহামেডানে যোগ দেন বাদল রায়। খেলোয়াড়ি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাটিয়েছেন সেই মোহামেডানেই। ১৯৮৬ সালে অধিনায়ক হিসেবে বাদল রায় মোহামেডানের টানা তিন বছর শিরোপা না পাওয়ার দুঃখ ঘুচিয়েছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো-কাণ্ডে এলোমেলো হয়ে পড়া ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। এরপর গত বছর আবারও নিজের কাঁধে মোহামেডানের দায়িত্ব তুলে নেন বাদল রায়। 

আজ সকাল ১১টায় বাদল রায়ের নিথর দেহ যখন ক্লাব প্রাঙ্গনে এলো, করোনার ভয় উপেক্ষা করে জমে গেল ভিড়। তাঁর সেই সময়ের সতীর্থ কায়সার হামিদ, ইমতিয়াজ সুলতান জনি, আবদুল গাফফাররা জলভরা চোখে বিদায় দিলেন বাদল রায়কে। বাদল রায়ের স্ত্রী গায়ত্রী রায়, মেয়ে আর ছেলেও উপস্থিত ছিলেন এসময়। এসেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস। ভক্তদের ভালোবাসার ফুলে ফুলে ভরে গেল তাঁর বিদায়ের শয্যা।

বাদল রায়ের মেয়ে বললেন, ‘বাবা ফুটবলকে অসম্ভব ভালোবাসত। চেয়েছিল আরও কিছুদিন ফুটবলের সঙ্গে থাকতে। সেটা হলো না দেখে কষ্ট হচ্ছে। আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি, কিন্তু সবাই আমার বাবাকে এত ভালোবাসে, এটা দেখে ভালো লাগছে। আজ বাবার বিদায়ের দিনে অনেককেই দেখছি, যাঁরা আমাদের মাথার ওপর ছায়া হয়ে রইবেন।’ 

বাদল রায়ের সতীর্থ কায়সার হামিদ বললেন, ‘বাদল দা আমাকে মোহামেডানে এনেছিলেন। তিনি আমার চেয়ে বয়সে ৫/৭ বছরের বড়। ক্যারিয়ারের শুরুতে ওনার খেলা মুগ্ধ চোখে দেখতাম। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত মোহামেডান লিগে অপরাজিত ছিল। এই সময়ের শুরুটা তাঁর হাত দিয়েই হয়েছিল। তিনি এই সময় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।’

উল্লেখ্য, গতকাল রবিবার বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক এবং ফুটবল সংগঠক বাদল রায় পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। দেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই তারকা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত ১৫ নভেম্বর তার লিভার ক্যান্সার ধরা পড়ে। কিন্তু তখন তেমন কিছু করার ছিল না, কারণ ক্যান্সার চলে গিয়েছিল চতুর্থ ধাপে। যে কারণে হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।  মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ