নিজস্ব প্রতিবেদক:
ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে এক কলেজ শিক্ষকের নিকট থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগে রাজশাহীর চারঘাট থানার ওসিসহ পুলিশের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। রাজশাহীর আমলি ৫নং আদালতে এ মামলা করেছেন চারঘাটের সরদহ ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক নাজমুল ইসলাম খোকন। বৃহস্পতিবার আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ সুপারকে ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল ফোনে পরিচয়ের সূত্র ধরে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ খোকনের সঙ্গে বিয়ে হয় একই উপজেলার মিয়াপুর গ্রামের হুমায়ুন খানের মেয়ে নিভিয়া খান নিপুর। বর্তমানে ৩ বছরের এক পুত্রসন্তান রয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর নিপু অসামাজিক কাজে জড়িত থাকায় তাদের সংসারে অশান্তি তৈরি হয়। এ নিয়ে থানায় একাধিক জিডিও করেন খোকন। এরই মধ্যে পুলিশের পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় খোকনের স্ত্রী নিপুর।
এরই জের ধরে চলতি বছরের ২৯ জুন ও ১৬ জুলাই নিবারণ ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে খোকনের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু এই টাকা দিতে অস্বীকার করেন খোকন। ১৬ জুলাই সন্ধ্যায় তিনি নিপুকে তালাক দেন খোকন। পরদিন দুপুরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চড়ে কলেজ যাওয়ার পথে চারঘাট থানার এসআই আবদুল খালেক ও এসআই খায়রুল ইসলাম খোকনের গতিরোধ করেন। এ সময় এসআই খালেক ওয়ারেন্টের কথা বলে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করেন। এতে চ্যালেঞ্জ করে বসেন খোকন।
পরে তাকে এসআই খালেক ও এসআই খায়রুল তাদের মোটরসাইকেলে উঠিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের পাশে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের ফায়ারিং স্পটের গেটের সামনে নিয়ে যায়। এরপর এসআই খালেক একটি অবৈধ পিস্তল খোকনের কোমরে গুঁজে দেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় খোকন চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে তাকে দ্রুত থানায় নেয়া হয়। থানায় তিন ঘণ্টা আটক রেখে ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু এবারও টাকা দিতে রাজি হননি খোকন। পরে থানায় বসে এজাহার লিখে বাড়ি থেকে তার সাবেক স্ত্রী নিপুর কাছে স্বাক্ষর করে নেয় ওসি। ওই মামলায় খোকনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ওই এজাহার থেকে আরো জানা গেছে, এ ঘটনার দুই দিন পর ১৯ জুলাই ওসির নির্দেশে খোকনের বাড়ি গিয়ে এসআই আবদুল খালেক ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। গ্রেফতার এড়াতে খোকনের মা এসআই খালেককে ১৭ হাজার টাকা দেন। এদিকে, আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসার পর চারঘাট থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র ফের ক্রয়ফায়ারের ভয় দেখিয়ে খোকনের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন।
এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান জানান, আদালত মামলাটি গ্রহণ করে রাজশাহীর পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদন ২১ নভেম্বরের মধ্যে জমা দিয়ে বলা হয়েছে। আসামিরা হচ্ছে- চারঘাট থানার ওসি নিবারণচন্দ্র বর্মণ, এসআই আদুল খালেক, এসআই খায়রুল ইসলাম এএসআই সাইফুল ইসলাম ও খোকনের সাবেক স্ত্রী নিভিয়া খান নিপু।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে চারঘাট থানার ওসি নিবারণচন্দ্র বর্মণ বলেন, এসব ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্কই নেই। বরং নাজমুল ইসলাম খোকনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তার সাবেক স্ত্রীর করা মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে।
রাজশাহীর পুলিশ সুপার মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা বলেন, ‘আদালতে মামলা হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু এখনও কাগজপত্র হাতে পাইনি। পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
স/আর