ক্যান্সারে আক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দেখতে চান বাংলার রুপ

এস এম শফিকুল ইসলাম,জয়পুরহাট:
জয়পুরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আলী বর্তমানে দুরারোগ্য লিভার ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় দেশে বিদেশে চিকিৎসা শেষে কিছু দিন সুস্থ থাকলেও সর্বশান্ত মুক্তিযুদ্ধের এই বীর সেনা আবারো লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।

সরেজমিনে জানা গেছে, ভারতীয় তালিকা অনুযায়ী এফ এফ নং ৪৩৯১, লাল বই মুক্তিবার্তা নং-০৩০৭০১০০৬৭ ও গেজেট নং-৩৯ এর মুক্তিযোদ্ধা ও জয়পুরহাট মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার জনাব আলী ২ কন্যা, ১ পুত্র সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে বসবাস করেন জয়পুরহাট শহরের মাষ্টারপাড়া মহল্লায়। জয়পুরহাট শহরের মাষ্টারপাড়া মহল্লার তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের লড়াকু সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আলী। পাশে বসে সেবা-শশ্রুসার কার্পন্য করছেন না তার স্ত্রী হাস্নাহেনা।

জনাব আলী অতি কষ্টে থেমে থেমে বলেন, পাক হানাদারদের নগ্ন হামলায় মাতৃভূমি যখন ক্ষত-বিক্ষত, হানাদার ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকাররা যখন নৃশংস ভাবে নিরীহ বাঙ্গালীদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছিল, সম্ভ্রম কেড়ে নেওয়া হচ্ছিল মা-বোনদের। ওই বিভৎস দৃশ্য দেখে প্রতিশোধ নিতে আর দেশকে শত্রুমুক্ত করতে সেই সময় তিনি তার ক’জন বন্ধুসহ ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষন নিয়ে দেশে ফিরে ৭ নং সেক্টরে যোগদান করেন।

সহযোদ্ধা ফিলিপস হেমব্রম, জাকির হোসেন মন্টু, বাসুদেবসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, দুঃসাহসিক জনাব আলী কখনো গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরে একের পর এক উড়িয়ে দেন হানাদার বাহিনীর আস্তানা। এ ভাবে মুক্তিযুদ্ধের একটি ইউনিটের সফল উপ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করে নওগাঁ ও জয়পুরহাট থেকে হানাদার বাহিনীকে তাড়িয়ে দিতে থাকেন তার ইউনিটের মুক্তি সেনারা। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে দেশ স্বাধীনের ২ দিন আগেই ১৪ ডিসেম্বর শত্রু মুক্ত করে অধিনায়ক প্রয়াত বাঘা বাবলু, উপ-অধিনায়ক হিসেবে তিনিসহ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা জয়পুরহাটের ডাক বাংলোতে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন বলেও জানান স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

মুক্তিযোদ্ধা জনাব আলী অভিযোগ করে জানান, ২ মেয়ে ও ১ ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিলেও কোন সরকারি চাকুরী পাননি তারা। এমন কি মুক্তিযোদ্ধার নির্ধারিত কোঠাতেও সামান্য একটা চাকুরী জোটেনি তার সন্তানদের। অনেক চেষ্টাতে চাকুরী না হলেও মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন ভালোভাবেই। তবে সংসারের হাল ধরতে এখনো চাকুরীর সন্ধানে ছুটছেন তার একমাত্র ছেলে। স্থানীয় চিনিকলে সামান্য বেতনে চাকুরী করে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে সংসার চালাতেন তিনি।

মরনপন মুক্তিযুদ্ধের পর চিনিকলের শ্রমিক হয়ে রক্ত-ঘাম ঝরানো সংগ্রামী জীবন শেষে অবসর গ্রহনের পর যখন বাঁকী জীবন সুখে-সাচ্ছন্দ্যে কাটানোর কথা, ঠিক তখনই তার উপর ভর করে জীবন নাশক ওই ব্যাধিগুলো। তিনি সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, “ আমার স্বাধীন বাংলা মায়ের রুপ আমি শেষ দিন পর্যন্ত সুস্থ থেকে, দেখে যেতে চাই, আমি বাঁচতে চাই।”

জনাব আলীর স্ত্রী হাস্না হেনা ও এক মাত্র ছেলে হাসানুজ্জামান সাগর জানান, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরন জনিত শারীরিক অসুস্থতার কারনে ২০১১ সালের জানুয়ারী থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩ মাস রোগ ভোগের কারনে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালের অধ্যাপক ডাঃ মঞ্জুর মোর্শেদ ও অধ্যাপক ডাঃ তালহা’র তত্ত্বাবধানে একটি অপরেশন (ব্রেইন সার্জারী) ও এর চিকিৎসা বাবদ ব্যায় হয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এরপর এ বছরের শুরুর দিকে শারীরিক বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিলে ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালের অধ্যাপক ডাঃ এম আরেফিন ও মিরপুরের ষ্পেশালাইজড হাসপাতালের অধ্যাপক ডাঃ কামরুজ্জামান চৌধূরীর অধীনে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে লিভার ক্যান্সার ধরা পরে। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগনের পরামর্শে গত ফেব্রুয়ারী মাসে ভারতের মুম্বাই শহরের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে ডাঃ মহেশ গোয়েলের অধীনে চিকিৎসা গ্রহন করেন। চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ঔষধ সেবন ছাড়াও তিনি ওরাল কেমো থেরাপী গ্রহন করতে থাকেন।

২ মাস এ ভাবে চলার পর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে আবারো ওই চিকিৎসকের শরনাপূর্ন হন মুক্তিযোদ্ধা জনাব আলী। এতে অবশিষ্ট জমিজমা বিক্রি করে ও আত্মীয় স্বজনদের কাছে কর্জ নেওয়া অর্থ দিয়ে তার এই ব্যায় বহুল চিকিৎসা চলতে থাকে। এ যাবৎ জনাব আলীর চিকিৎসা ব্যায় মেটাতে জমিজমা বিক্রি আর বিভিন্ন জনের কাছে ঋন-দেনা সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা । এ অবস্থায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে আবারো ঢাকা’র ডেল্টা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডাঃ মঞ্জুরুল কাদের কেমো থেরাপী বন্ধ করে ভারতের দিল্লিতে গঙ্গারাম হাসপাতালে বা সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা গ্রহনের পরামর্শ দেন বলেও জানান তার স্ত্রী, সন্তানসহ স্বজনরা ।

মাষ্টারপাড়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক, একই এলাকার পরেশ চন্দ্র, এমদাদুল হকসহ এলাকাবাসীরা জানান, সেই সময়ের টকবগে যুবক লড়াকু মুক্তিযোদ্ধা জনাব আলী পড়ন্ত বেলায় পরাজিত হতে চলেছেন জীবন যুদ্ধে। এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে সরকার, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান এলাকাবাসীরা।

জয়পুরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমজাদ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সাহসী সৈনিক জনাব আলী এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে। বর্তমানে দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসরা ভারতে বা সিঙ্গাপুরে তার চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন, সেখানে ব্যায় হবে আরো প্রায় ৫৫ থেখে ৬০ লাখ টাকা, যার সামর্থ্য পরিবারটির নেই বলে দেশের সরকার ও বিত্তবানদের প্রতি সাহায্যের আবেদন জানান জলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ।

 

সাহায্য পাঠানোর ঠিকানাঃ (১) ব্যাংক সঞ্চয়ী হিসাব নং- ৩৪০২৯৬০৯, সোনালী ব্যাংক, জয়পুরহাট শাখা, জয়পুরহাট, (২) বিকাশ মোবাইল নং- ০১৭১১-৪৬৪২৮১, (৩) ০১৭১৬-৫৮৯৯৮৭, ডাচ বাংলা মোবাইল (রকেট) নং ০১৬৭৩-২৯২৭০৯-৬।

স/শ