কোহলি-ডি ভিলিয়ার্স বন্ধু যখন শত্রু!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

চাতক অপেক্ষা ছিল ক্রিকেট বিশ্বের। অপেক্ষা সময়ের অন্যতম সেরা দুই ব্যাটসম্যানের জম্পেশ লড়াই দেখার। কিন্তু অ্যাশেজে স্টিভ স্মিথ আর জো রুটের লড়াইটা মোটেও জমেনি। ক্রিকেটপ্রেমীরা আবার অপেক্ষার প্রহর গুনতে শুরু করেছেন। অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ থেকে চোখ সরিয়ে এবার চোখ আফ্রিকায়। আগামী শুক্রবার থেকে কেপটাউনে মুখোমুখি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারত। মুখোমুখি হচ্ছেন সময়ের আরও দুই সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি ও এবি ডি ভিলিয়ার্স।

ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আলোচনায় ঘুরেফিরে ওই একটি বিষয়ই আসছে—কোহলি-ডি ভিলিয়ার্স দ্বৈরথ। কত কথাই না হচ্ছে এ নিয়ে। কোহলি কি পারবেন ২৫ বছরের হিসাব মিটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতকে প্রথম টেস্ট সিরিজ জিতিয়ে ফিরতে? নাকি সিরিজটি নিজের করে নেবেন প্রায় দুই বছর পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চার দিনের ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ফেরা ডি ভিলিয়ার্স!

দক্ষিণ আফ্রিকায় পা রাখার পর কোহলিদের প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই প্রসঙ্গটি উঠেছে। একজন নেতাকে শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবলে চলে না! এ কারণেই হয়তো কোহলি দ্বৈরথের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলেন, ‘এমন নয় যে এই সিরিজে শুধু আমরা দুজনই খেলছি।’ তা অবশ্যই নয়। তবে কোহলি-ডি ভিলিয়ার্সের দ্বৈরথ অন্য রকম একটি দ্যোতনা তৈরি না করে পারে না। সময়ের অন্যতম সেরা চার-পাঁচ ব্যাটসম্যানের দুজন তাঁরা। এ ছাড়া আইপিএলের দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের সতীর্থও দুজন। কোহলি নিজেই যোগ করলেন, ‘এবি আমার খুব ভালো বন্ধুও।’

তো সেই বন্ধুই এখানে ‘শত্রু’র ভূমিকায়। কোহলিও তাই বন্ধুত্ব ভুলে ‘শত্রু’ বধের সব পরিকল্পনাই সাজিয়ে রেখেছেন, ‘তার খেলার ধরনটা আমার পছন্দ। একজন ব্যক্তি হিসেবেও আমি তাকে সব সময় শ্রদ্ধা করে এসেছি। তবে সে যখন প্রতিপক্ষ দলে, এবিকে আউট করাটাই থাকবে লক্ষ্য। আমি নিশ্চিত আমার ব্যাপারেও ওরা একই রকম ভাবছে।’

শচীন টেন্ডুলকারের বিদায়ের পর ভারতের সবচেয়ে বড় তারকা কোহলি, সেরা পারফরমারও তিনিই। তবে ভারতের সমর্থকদের কাছে ‘ভিনদেশি’ ডি ভিলিয়ার্সের আবেদনও কম নয়। ২০১৫-১৬ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকার ভারত সফরে স্বাগতিক সমর্থকেরা ডি ভিলিয়ার্সের নামেও গ্যালারিতে স্লোগান দিয়েছে। তিনটি সেঞ্চুরি করে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩-২ ব্যবধানে জেতাতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স।

সেবার চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজটি হয়েছিল স্পিনবান্ধব উইকেটে। দক্ষিণ আফ্রিকাও হেরেছে ৩-০ ব্যবধানে। ডি ভিলিয়ার্স খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও ব্যাট হাতে এগিয়ে ছিলেন কোহলির চেয়ে। ৩৬.৮৫ গড়ে ২৫৮ রান করে তিনিই ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা ব্যাটসম্যান। আর কোহলি ৩৩.৩৩ গড়ে করেছিলেন ২০০ রান।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কোহলি টেস্ট খেলেছেন আরও দুটি, ২০১৩-১৪ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। জোহানেসবার্গে প্রথম টেস্টে ১১৯ ও ৯৬ রান করে পেস ও বাউন্স সামলানোর সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন কোহলি। অন্যদিকে ভারতের বিপক্ষে ডি ভিলিয়ার্স সব মিলিয়ে খেলেছেন ১৭টি টেস্ট। ভারতের বোলাররা তাঁর ব্যাটকে বশেই রাখতে পেরেছে। ডি ভিলিয়ার্সের ক্যারিয়ার গড় (৫০.৪৭) ও ভারতের বিপক্ষে গড়ের (৪০.১০) পার্থক্যও সেই কথাই বলে।

টেস্ট ক্রিকেটে লম্বা ছুটি কাটিয়ে ফেরা ডি ভিলিয়ার্স জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা একমাত্র ইনিংসে ৫৩ রান করে ছন্দে থাকারই ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিয়েপর্ব সেরে নিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে না খেলা কোহলিও দক্ষিণ আফ্রিকায় পা রেখেছেন ছন্দ নিয়েই। গত বছর টেস্টে ৭৫.৬৪ গড়ে ১০৫৯ রান করেছেন ভারত অধিনায়ক।
রোমাঞ্চকর একটি দ্বৈরথ দেখার অপেক্ষা ক্রিকেট-বিশ্ব করতেই পারে। এএফপি ও প্রথম আলো