কোরবানির ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ইতিহাস ও জীবনীমূলক কিতাবাদি থেকে জানা যায়, হজরত আদম (আ.)-এর সন্তান হাবিল ও কাবিলের বোন আকলিমার বিবাহ নিয়ে দ্বন্দ্ব বাধে। এতে হজরত আদম (আ.) তাদের কোরবানি করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, তোমাদের মধ্যে যার কোরবানি কবুল হবে তার সঙ্গেই এ মেয়েকে বিবাহ দেয়া হবে। তখনকার যুগে কোরবানি কবুল হওয়ার আলামত ছিল। যে কোরবানিটি কবুল হতো তা আসমান থেকে আগুনের মতো একটি অদৃশ্য বস্তু এসে নিয়ে যেত।

হাবিল ও কাবিল আদম (আ.)-এর নির্দেশে কোরবানি করল। পশু চরানো কাবিল তার চরানো পশু থেকে বেছে নিয়ে সবচেয়ে সুন্দর একটি ভেড়া আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করল, আর কাবিল কৃষি কাজ করত। সে তার কৃষিপণ্য থেকে কোরবানি দিল।

সেগুলোকে একটি পাহাড়ের চূড়ায় রেখে আসা হল। অতঃপর আসমান থেকে অগ্নি প্রবাহ এসে হাবিলের জন্তুকে জ্বালিয়ে দিল, অর্থাৎ তার কোরবানি আল্লাহ কবুল করে নিলেন। কাবিলের কোরবানি কবুল হল না। আল্লাহতায়ালা কোরআনে ইরশাদ করেন-

অর্থ : হে হাবিব (সা.)! আপনি তাদের পাঠ করে শুনিয়ে দিন আদমের পুত্রদ্বয়ের ঘটনাকে যখন তারা নৈকট্য লাভের জন্য কোরবানি দিয়েছিল। (সূরা মায়েদা, আয়াত : ২৮)। হজরত আদম (আ.) মেয়েকে বিবাহ দেয়ার যে মাপকাঠি নির্ধারণ করেছেন সে অনুযায়ী হাবিল তাকে বিয়ে করল আর কাবিল বিয়ে করতে ব্যর্থ হল।

এতে কাবিলের জিদ চেপে গেল। সে শাসালো হে হাবিল তোমার কারণে আকলিমাকে বিয়ে করতে পারলাম না। আমি তোমাকে হত্যা করব। হাবিল ছিল নিরীহ। আল্লাহতায়ালা বলেন, আল্লাহ মুত্তাকিদের কোরবানি ছাড়া কবুল করেন না।

এরপর তার অন্তর ভাই হত্যায় সম্মত হল, কাবিল তাকে হত্যা করল। ভাইকে হত্যার কারণে কাবিল ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের দলভুক্ত হয়ে গেল। (কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ৪৬)

হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর বয়স যখন ৮৬ তখন বিবি হাজেরা পুত্রসন্তান জন্ম দিলেন। তার নাম রাখা হল ইসমাইল। পুত্রকে নিয়ে কিছুদিন পর কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হলেন হজরত ইবরাহিম (আ.)। কোরআনের ভাষায়-

এরপর পুত্রের যখন পিতার সঙ্গে চলার বয়স হল তখন তিনি স্বপ্নে দেখলেন ছেলেকে। বললেন, হে পুত্র আমি স্বপ্ন দেখেছি। আমি তোমাকে জবেহ করছি।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ইবরাহিম! তুমি কোরবানি কর। সকালে উঠে তিনি হৃষ্টচিত্তে একশ উট কোরবানি দিলেন। পরের রাতেও তিনি একই নির্দেশপ্রাপ্ত হলেন। আবার তিনি একশ উট কোরবানি দিলেন। তৃতীয় রাতে স্বপ্ন দেখলেন- আল্লাহতায়ালা বলেন, ইবরাহিম! তুমি কোরবানি কর।

তিনি আরজ করলেন, মা’বুদ! আমি কী কোরবানি করব? ইরশাদ হল- তোমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় জিনিসটি আমার রাস্তায় উৎসর্গ কর। সুতরাং তার মনে হল, আদরের ছেলে ইসমাইলকে কোরবানি দিতে হবে। কোরবানির সংকল্প হাজেরা (আ.) কে জানিয়ে বললেন তাকে নতুন কাপড় পরিয়ে দাও।

বিবি হাজেরা (আ.) তার কলিজার টুকরা পুত্রকে গোসল করিয়ে নতুন জামা পরিয়ে প্রাণ ভরে আদর করে বললেন, যাও আমার পুত্র! আল্লাহর জন্য নিজেকে উৎসর্গ কর। সে দিনটি ছিল কোরবানির দিন। ইবরাহিম (আ.) বললেন, ইসমাইল! ছুরি ও রশি নিয়ে আস। রান্নার জন্য কাঠ কেটে নিয়ে আসি, ইসমাইল (আ.) দৌড়ে লম্বা রশি ও তীক্ষè ছুরি নিয়ে আব্বার সঙ্গে চললেন।

ইসমাইলকে স্বপ্নের কথা বলে জবেহের পরামর্শ চাইলেন হজরত ইবরাহিম। আয়াতে এসেছে অতএব তুমি ভেবে দেখ তোমার মত কী? ইসমাইল বলে উঠলেন, আল্লাহ আপনাকে যে হুকুম করেছেন, তা পালন করুন। আমার চেয়ে সৌভাগ্যবান কে আছে, পিতার জবেহের মাধ্যমে আমি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হব।

হজরত ইবরাহিম বিসমিল্লাহ বলে তীক্ষ্ণ ছুরি পুত্রের গলায় চালাতে গেলেন। এদিকে আল্লাহর হুকুমে জিবরাঈল (আ.) আল্লাহু আকবর বলে উঠলেন। ইসমাইল (আ.) তার জবাবে লাইলাহা ইল্লাহ বলে উঠলেন। ইবরাহিম (আ.) আল্লাহু আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ বললেন, মুসলমান যা আজও ঈদুল আজহার সময় বারবার পড়ে।

এরপর আল্লাহ জিবরাঈল (আ.)কে হুকুম দিলেন, হে জিবরাঈল! তুমি বেহেশত থেকে একটি দুম্বা নিয়ে যাও এবং আমার খলিলকে সালাম দিয়ে ইসমাঈলের পরিবর্তে এটাকে কোরবানি করতে বল। আমি তার কোরবানি কবুল করে নিয়েছি।